মিয়ানমারের অজুহাতেই বিলম্বিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: রয়টার্সকে প্রধানমন্ত্রী
ডেইলিইউকেবাংলা নিউজঃ মিয়ানমারের টালবাহানার কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রয়টার্সকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর নীতি থেকে বাংলাদেশ সরে আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,দেশে এমনিতেই এখন ১৬ কোটি মানুষ।আমি আর কোনো বোঝা নিতে পারব না। রোহিঙ্গাদের নিতে পারব না।কেননা আমার দেশ এটা সহ্য করতে পারবে না।তবে শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চান না শেখ হাসিনা।এর আগে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যে চুক্তি হয়েছিল তার বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
এ নিয়ে জাতিসংঘে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য হতেকে প্রশ্ন করে রয়টার্স।তবে তিনি কোনো উত্তর দেননি। সম্প্রতি তিনি বলেছেন,টেলিফোনে তিনি কোনো গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না।তিনি প্রতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।গত বছরের নভেম্বরে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়,আগামী দুই মাসের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করবে;কিন্তু সেটা এখনও শুরু হয়নি। এখনও রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আসছে।
শেখ হাসিনা মিয়ানমারের বিষয়ে বলেন, ‘তারা সব বিষয়ে রাজি হচ্ছে; কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করছে না।এটাই হলো সমস্যা। সবকিছুই ঠিকঠাক থাকে কিন্তু সব সময় তারা কোনো না কোনো অজুহাত হাজির করেন।একাধিক বার মিয়ানমার বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে রাখাইনে ট্রানজিট কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
তবে দেশটির অভিযোগ,তাদেরকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যথাযত উপায় সম্পর্কে কিছুই জানাচ্ছে না।বাংলাদেশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।এদিকে,জাতিসংঘের দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে,এখনই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য রাখাইন নিরাপদ নয়।রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ায় দেরির কারণে বাংলাদেশ সরকার দূরবর্তী ভাসানচরে নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে,সেখানে রোহিঙ্গারা বন্যার কবলে পড়বে।তাছাড়া কক্সবাজারও বন্যা পরিস্থিতির জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা;কিন্তু চলতি বছর ভারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সেখানে ঝুঁকি কিছুটা কম ছিল।
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ীভাবে কোনো আবাসস্থল তৈরি করা সম্ভব নয়।তাছাড়া এটা দেশের মানুষ মেনেও নেবে না। তারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।রোহিঙ্গারা নিজেদের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী বলে দাবি করে;কিন্তু দেশটির কট্টরপন্থী উগ্র বৌদ্ধরা তাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মনে করে।কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করে এলেও মিয়ানমার সরকার এই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়নি।আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে,গত বছরের আগস্টে রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়।