এবার ধানের শীষের প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন

ডেইলিইউকেবাংলা নিউজঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এবারও ভোটের প্রচার শুরু করবেন ধানের শীষ মার্কার প্রার্থীরা।ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের কাল মঙ্গলবার অথবা বুধবার সিলেটে যাওয়ার কথা রয়েছে।সেখানে হজরত শাহজালাল (রহ.),হজরত শাহপরাণ (রহ.) ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর মাজার জিয়ারত শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারে অংশ নেবেন তারা।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি বিএনপির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া।দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমানও একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন।তাদের অনুপস্থিতিতেই প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার ভোট করতে হচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে।সঙ্গী দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট।দুই জোটের সব দল এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে।ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি বরাবরই আলাদা একটি মাত্রা যোগ করে।এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার কথাই শেষ কথা।সংকটময় মুহূর্তে যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বিএনপির রাজনীতি যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল,নেতারা যখন ছন্নছড়া,এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিলেন,তখন দলের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন আপাদমস্তক গৃহবধূ খালেদা জিয়া।দলের প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়ার পর তাকে করা হয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান।ধীরে ধীরে রাজনীতিতে পরিণত হন খালেদা জিয়া।দলের চেয়ারপারসনের পদ দেয়া হয় তাকে।এর পরের সময়টি শুধুই সফলতার।নব্বই দশকে গণতন্ত্রের জন্য টানা কয়েক বছর রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি। কারাবরণও করতে হয় তাকে।ওই আন্দোলনে তার আপসহীন ভূমিকা সবাইকে চমকে দেয়।

গৃহবধূর তকমা পেছনে পেলে আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পান খালেদা জিয়া।রাজনীতিতে আলাদা ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন তিনি।স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথে দৃঢ়তার সঙ্গে হাঁটতে থাকেন।১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।এই সময়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় তার নেতৃত্বেই।এর পর থেকে দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি।
১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের কলাকৌশল নির্ধারণ ও প্রচারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।গত দুটি নির্বাচনে তাকে সহায়তা করেছেন তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।তিনিও একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিদেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।

এমতাস্থায় খালেদা জিয়াকে ছাড়াই দলীয় মনোনয়ন ঠিক করেছে বিএনপি।দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নের বৈধতা দেয়নি। আপিলেও প্রার্থিতা ফেরত পাননি।এখন হাইকোর্টে আপিল করেছেন তার আইনজীবীরা।কোর্টই তার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়া ও তার মুক্তি নিয়ে ঘোর অমানিশায় দলের নেতাকর্মীরা। তার ভোটে অংশ নেয়া ও নির্বাচনী প্রচারে থাকা অনিশ্চিত ধরেই এগোচ্ছে বিএনপি।খালেদা জিয়ার অবর্তমানে এবার ধানের শীষের প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন কে-এটি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে রাজনীতির অলিগলিতে ও চায়ের কাপে ঝড় তুলছে।এ নিয়ে বিএনপি নেতাদেরও কপালে ভাঁজ।কারণ ভোটের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার একটি ‘ফেস ভ্যালু’ আছে।নির্বাচনী প্রচারে তার উপস্থিতি একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তিনি যে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে যান,সেখানে জোয়ার সৃষ্টি হয়।

নেতাকর্মীরা প্রাণ ফিরে পান।তৃণমূল সব ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষের মোহনায় এক হয় খালেদা জিয়ার মুখপানে চেয়ে।মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হন,তারাও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন খালেদা জিয়ার আশ্বাসে। তারা জানেন নেত্রী কথা দিলে কথা রাখেন।কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।বিএনপিকে একটি ভীরু রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে এগোতে হচ্ছে।দলের মনোনয়ন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ-অভিমানের।দুই বৃহৎ রাজনৈতিক জোট এবার বিএনপির নির্বাচনী সঙ্গী।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে ৪টি দল।আর ২০-দলীয় জোটে ২৩ দল।তাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও অনেক মন কষাকষি হয়েছে।সব মিলিয়ে বিএনপি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।এই প্রতিকূল পরিবেশেও বিএনপি জোট ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে প্রত্যয়ী।তারা যে কোনো মূল্যে ভোট করতে চায়।
আর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তার বিকল্প হিসেবে ড.কামাল হোসেনের মতো একজন জাতীয় নেতাকে নির্বাচনী প্রচারের সামনে রাখতে চাইছে দুই জোট।প্রতি নির্বাচনের আগে সিলেট থেকেই ভোটের প্রচার শুরু করার রেওয়াজ বিএনপির।এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না।এবার ড.কামালের নেতৃত্বে সিলেট থেকে ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচার শুরু হচ্ছে।পর্যায়ক্রমে সড়কপথে সারা দেশে প্রচার চালাবেন দুই জোটের শীর্ষ নেতারা।এ সময় পথসভায় অংশ নেবেন নেতারা।

এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা দুই জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এক নেতা বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড.কামাল হোসেন হয়তো সিলেটের পর ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না।তবে তিনি ঢাকা মহানগরীর নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে অংশ নেবেন।সারা দেশে প্রচারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,আ স ম আবদুর রব,কর্নেল (অব.) অলি আহমদ,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী,মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপি,২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা থাকবেন।সূত্র জানায়,সিলেটসহ সারা দেশে প্রচারের জন্য ইতিমধ্যে সম্ভাব্য তারিখসহ একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।এ নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন।তবে দুই জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রচারে অংশ নেয়ার বিষয়ে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন,বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুটি করে আসনে নির্বাচন করছেন।তাই তারা সারা দেশের অনেক জায়গায়ই প্রচারে যেতে পারবেন না।কারণ তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায়ও সময় দিতে চান।এ ছাড়া আ স ম আবদুর রব,কর্নেল (অব.) অলি আহমদ,মাহমুদুর রহমান মান্নাও নির্বাচন করছেন।তারাও হয়তো অনেক জায়গায় প্রচারে যেতে পারবেন না।তবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন না করার কারণে তাকে সব সময় পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x