দুবাইয়ে শ্রীদেবীর মরদেহ গ্রহণ করেছিলেন কে এই আশরাফ থামারাসারি?
বিনোদন ডেস্কঃ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের প্রথম নারী সুপারস্টার শ্রীদেবীর মৃত্যুর কয়েক দিন পরে তার লাশে যে ‘এমবামমেন্ট সার্টিফিকেট’ সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে, সেখানেই প্রথম নামটা দেখা যায় – আশরাফ।তিনিই ওই লাশ গ্রহণ করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। আর সেখানেই একটি ফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান শহরের বাসিন্দা আশরাফ নামের ওই ব্যক্তির।শ্রীদেবীর পরিবারের বদলে তার লাশ গ্রহণ করলেন কে এই আশরাফ? খোঁজ করে আরো কিছু তথ্য পাওয়া গেল আশরাফ থামারাসারির বিষয়ে।সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে যখন ফোন করলাম, প্রথমে লাইন ব্যস্ত। একটু পরে ওই নম্বর থেকেই মিসড্ কল।
পরিচয় দিতেই ওদিক থেকে সবিনয়ে জানালেন, “একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। তাই নিয়ে পুলিশের কাছে এসেছি। পনেরো মিনিট পরে কথা বলবেন দয়া করে?”
ততক্ষণে আরো কিছু খোঁজ খবর করেছি এই আশরাফ থামারাসারির ব্যাপারে।আজমান শহরের বাসিন্দা এই ব্যক্তি আদতে ভারতের কেরালার বাসিন্দা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটা মোটর গ্যারেজ আছে তার। কিন্তু বিদেশ-বিভূঁইতে থাকা ভারতীয়-বাংলাদেশী কিংবা পাকিস্তানী অথবা নেপালের মানুষের কাছে তিনিই আক্ষরিক অর্থে শেষ আশ্রয় – আশা-ভরসাস্থল।যখনই ওদেশে অবস্থানরত কোনো বিদেশী মারা যান, এই আশরাফ থামারাসারির শরণাপন্ন হন অনেকেই – রাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।
“সালটা ২০০০। আমি এক বন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলাম শারজার এক হাসপাতালে। বেরিয়ে আসার সময়ে দেখি দুজন ভারতীয় কাঁদছে,” বলছিলেন আশরাফ থামারাসারি।ওরা আমার দেশ কেরালার মানুষ। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কী হয়েছে। ওরা বলল ওদের বাবা মারা গেছেন। আমি নিজে থেকেই ওদের সঙ্গে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে ওদের বাবার লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম। সেটাই শুরু।চার-পাঁচ দিন লেগে গিয়েছিল সেই লাশ কেরালায় পাঠাতে। আর তার কয়েক দিন পরেই খবর পেলেন থামারাসারি যে মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশী নাগরিকের।
তার লাশও দেশে পাঠাতে এগিয়ে গেলেন তিনি।তারপর গত সতেরো বছরে প্রায় ৪,৭০০টি লাশ আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন থামারাসারি। এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ ৮৮টি দেশের নাগরিকদের লাশ রয়েছে।অনেক ক্ষেত্রে লাশ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কেউ থাকেন না। তখনও ভরসা এই আশরাফ থামারাসারি-ই।আমি গত সপ্তাহেই চেন্নাই গিয়েছিলাম। এর আগে বার চারেক কলকাতায় গেছি। আসামের হোজাই, ওড়িশা – কোথায় না গেছি লাশ নিয়ে! বাংলাদেশে অবশ্য এখনো যাইনি। তবে সে দেশের প্রায় সাড়ে ছ’য় শ’ নাগরিকের লাশ দেশে পাঠাতে হয়েছে আমাকে,” জানাচ্ছিলেন আশরাফ থামারাসারি।
তার কথায়, “এখানে কেউ মারা গেলে যে সব নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেগুলো অনেকেই জানেন না। সবাই তো এদেশে রোজগার করতে এসেছে। তাই কারো এত দপ্তরে ঘোরাঘুরি করে লাশ নেয়া, তারপরে সেটা বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়া এত কিছু করার সময়ও নেই।
“এখন তাই কেউ মারা গেলেই লোকে আমাকে খবর দেন। আমি স্বস্তি পাই এটা করে।”
এত কিছুর জন্য কারও কাছ থেকে একটা পয়সাও আশরাফ থামারাসারি নেননি কখনও।
“এত ঘোরাঘুরি করতে হয় রোজ যে আমি আর গ্যারেজের কাজ দেখতে পারি না। ওটা এক শ্যালককে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছি। মাসে সেখান থেকে যেটুকু পাই, তাতেই সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমার পরিবারের চলে যায়। এত মানুষ যে আমার জন্য দোয়া করেন, এটাই আমার সবথেকে বড় প্রাপ্তি,” বলছিলেন আশরাফ থামারাসারি।
শ্রীদেবীর মৃত্যুর পরে থামারাসারির সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস।তার কথায়, “খবর পাওয়ার পর থেকে আমি টানা তিন দিন দুবাইতেই ছিলাম। সেদিন তাকে নিয়ে মোট পাঁচজন মারা গিয়েছিলেন। একজন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, একজন আহমেদাবাদের আর দু’জন কেরালার। সকলের লাশের ব্যবস্থাই আমি করেছি।তার মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে তিনি আর নেই। জীবিত অবস্থায় ঠিক যেরকমটা দেখতে ছিলেন, সেই একই রকম মুখটা ছিল তার,” বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টারের প্রসঙ্গে বলছিলেন আশরাফ থামারাসারি।