আনোয়ার শাহজাহানের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করবে —–অধ্যাপক জাকির হোসেন
মাহমুদুর রহমান শানুর: আনোয়ার শাহজাহান’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থসমূহের পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আনোয়ার শাহজাহানের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক জাকির হোসেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। এর ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা এবং জাতিসত্তার অস্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধ কেবল বাঙালির আত্মপরিচয়কে বিশ্বমানচিত্রে বিধৃত করেনি, বাংলাদেশকে এক অনন্য পরিচয়ে সুশোভিত করেছে। এর পেছনে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অস্তিত্বের সংকটের মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধারাও জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা এবং বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছেন। তাই তাদের জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তোলে ধরা একান্ত কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে আনোয়ার শাহজাহান রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থগুলো নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। একজন মেধাবী ও পরিশ্রমী গবেষক হিসেবে আনোয়ার শাহজাহান দেশ ও জাতির জন্য যে কাজ করেছেন তা ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে থাকবে।
সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, সিলেট’-এর উদ্যোগে যুক্তরাজ্যবাসী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থসমূহের পাঠ পর্যালোচনা ও সুহৃদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী লেখক, প্রকাশক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সলের সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রি.) জাতীয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নগরীর অভিজাত একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির (ঢাকা) প্রফেসর কামরুল হাসান, লেখক ও সাংবাদিক সৌমিত্র দেব এবং লেখক অনুভূতি ব্যক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক আনোয়ার শাহজাহান।
আবৃত্তিশিল্পী আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাব্বির জালালাবাদী, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট বেলাল আহমদ চৌধুরী, সচেতন নাগরিক কমিটি, সিলেট-এর সভাপতি সমিক সহিদ জাহান, ছড়াকার ও ব্যাংকার শাহাদত বখত সাহেদ, ব্যাংকার জ্যোতি মোহন বিশ্বাস, লেখক ও ব্যাংকার মোহাম্মদ মোশতাক আহমদ চৌধুরী, কবি সেনুয়ারা আক্তার চিনু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি ও ঔপন্যাসিক আলেয়া রহমান, কবি ও ঔপন্যাাসিক পপি রশীদ, কবি ও গল্পকার কানিজ আমেনা কুদ্দুস, সাংবাদিক ও গল্পকার তাসলিমা খানম বীথি, রোটারিয়ান কবি রেবেকা জাহান রোজী প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে সিলেটের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং গৌরবের স্মারক। আর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একেকটি নক্ষত্র। তাই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে লেখালেখি করা সবচেয়ে আনন্দের এবং স্বজাত্যবোধের। আমার এলাকার স্নেহভাজন গবেষক আনোয়ার শাহজাহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে সেই কাজটুকু করেছেন। এজন্য তিনি প্রশংসার দাবীদার।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী বলেন, আনোয়ার শাহজাহান একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার ব্যক্তিত্ব। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। স্বকীয়তা এবং জাতিসত্তার সংরক্ষণে তাঁর রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থগুলো জাতীয় ইতিহাসের একেকটি অনন্য দলিল হয়ে থাকবে। তিনি তাঁর অসাধ্য পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশপ্রেমের চেতনাকে উজ্জীবিত করেছেন।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (ঢাকা) এর অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা, স্বজাত্যবোধ, স্বকীয়তা, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এজন্য মুক্তিযুদ্ধকে আমরা আমাদের হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। তবে এক্ষেত্রে গবেষক আনোয়ার শাহজাহান অনেকদূর এগিয়ে আছেন। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় তিনি যে অবদান রেখেছেন, তা অতুলনীয়। ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁর এ সৃষ্টিকর্মকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।
লেখক ও সাংবাদিক সৌমিত্র দেব বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করার অর্থই হচ্ছে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণে অগ্রবর্তী হওয়া। তবে এক্ষেত্রে যারা গবেষণায় অগ্রবর্তী হয়েছেন, ইতিহাস তাদেরকে ধারণ করে। গবেষক আনোয়ার শাহজাহান সেই প্রদীপ্ত ব্যক্তিত্বের একজন। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-জীবন-কর্ম রচনায় তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, এতে তিনি ইতিহাসের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর সাহিত্যসমগ্র যেন স্বজাত্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রতীক।
লেখক অনুভূতি প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আনোয়ার শাহজাহান বলেন, আজকে আমার আনন্দ এবং স্মৃতির দিন। নৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় ব্রতী হয়েছিলাম। এ কাজে প্রতিনিয়তই উপলব্ধি করেছি স্বজাত্যবোধ, দেশপ্রেম এবং দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠসন্তানদের কীর্তিগাথা। আমার পরিশ্রম এবং সাধনার ফসল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থগুলোর আজকে পাঠ পর্যালোচনা হয়েছে। আপনাদের আলোচনা, সমালোচনা এবং দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে আমি প্রাণিত হয়েছি। দেশপ্রেমকে ধারণ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যাওয়াই এখন আমার বড় প্রত্যয়। আমি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় বহির্বিশ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সকলের আন্তরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতা কামনা করি।
সভাপতির বক্তব্যে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের ফলেই আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। আমাদের জাতির এসকল শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জীবন ও কর্ম নিয়েই গ্রন্থ রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আনোয়ার শাহজাহান। একজন প্রকাশক হিসেবে বলতে হয়, তিনি সম্পূর্ণই দেশপ্রেমকে ধারণ করে এ সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর এ কর্ম ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চায় অনুপ্রাণিত করবে।