শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন
নিউজ ডেস্কঃ যশোরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্কের। এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের সুফল পৌঁছে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।রোববার ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আপনাদেরকে এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলাম। তারই অংশ হিসেবে যশোরে নির্মিত হলো এই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। এজন্যই আমরা দেশের সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান চিহ্নিত করে এমন হাই-টেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সবসময় চেয়েছি প্রযুক্তিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। এর উন্নয়নের সুফল প্রতিটি মানুষের কাজে লাগাতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক শুধু নয়, আমরা প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে এমন প্রযুক্তিভিত্তিক হাইটেক পার্ক গড়ে তুলবো।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন ঢাকা মানেই বাংলাদেশ নয়। সেই কথাটিকে সত্য করতেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত জায়গায় তথ্যপ্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি ভোলার চর কুকরি-মুকরিতেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এর কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এছাড়াও যশোরকে প্রথম ডিজিটাল জেলা ঘোষণা করেছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বটম অব পলিসির জন্যই প্রধানমন্ত্রীর যে দর্শন তার জন্য এখন আর তরুণদের ঢাকায় এসে জুতা ক্ষয় করতে হবে না। এখন যশোরেই তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল হাব খুলে দিয়েছেন।’
এই টেকনোলজি পার্কের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জাহাঙ্গীর আলম জানান, সফটওয়্যার তৈরি, কল সেন্টার সেবা, ফ্রিল্যান্সিং, গবেষণা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ হবে এই পার্কে। পার্কের মূলভবনে ইতিমধ্যে জাপানের দুটি কোম্পানিসহ ৫৫টি কোম্পানিকে আইটি ব্যবসার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্টার্টআপ কোম্পানি হিসেবে তরুণদের বিনামূল্যে পুরো একটি ফ্লোর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলাকে টার্গেট করেই যশোরে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক করা হয়েছে। এ বিভাগের দশ জেলার পাঁচ হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে সেখানে। দেশ-বিদেশের আইটি শিল্প উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।
প্রকল্পের সার্ভে প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে একটি বিশ্বমানের আইটি পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরের বেজপাড়া নাজিরশংকরপুর এলাকায় এই আইটি পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মোট জায়গার পরিমাণ দুই লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট।
৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাইটেক পার্কে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ রয়েছে ১৫ তলাবিশিষ্ট এমটিবি ভবন, ১২ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার মানের ডরমেটরি ভবন, অত্যাধুনিক কনভেনশন সেন্টারের সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং।
জাপানি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডরমেটরি ভবনের ১১ তলার পুরোটাতে আন্তর্জাতিকমানের জিম স্থাপন করা হয়েছে। আর সব বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট (স্টিল ও কংক্রিট) কাঠামোতে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ১৪ হাজার বর্গফুটের জায়গা রয়েছে।
এ ছাড়াও এতে থাকছে ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন, ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট লাইন এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিসের সুবিধা। ধারণা করা হচ্ছে, এই পার্কে ১২ হাজার লোকের আয়ের উৎস হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগদান করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে যশোর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-এর প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।