বাংলাদেশের উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের চান প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক,অর্থনীতিঃ সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে ৫০০ একর জমি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার সাংরিলা হোটেলে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি।ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের অংশীদার হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে আমি সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য একই এলাকায় ৫০০ একর জায়গা দেয়ার প্রস্তাবটি উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, এক জায়গাতেই ৫০০ একর জায়গা বা তার থেকেও বেশি, আপনাদের যা প্রয়োজন… মূলত চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে।বিনিয়োগের জন্য মিরেরসরাই খুবই উপযুক্ত স্থান বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত সবচেয়ে উদার বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আইনের সুরক্ষা পাচ্ছেন। এ ছাড়া তারা কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর ছাড় এবং মুনাফা নিজ দেশে ফেরত নিতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশাল তরুণসমাজ রয়েছে, যারা উদ্যমী। তারা সহজেই প্রশিক্ষিত কর্মীতে পরিণত হতে পারে।ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের শুল্ক এবং কোটামুক্ত সুবিধার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতের সফলতা সবার জানা। এই খাত থেকে ২০১৭ সালে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছিল। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতের রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চাই।অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ১২০ দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।কম খরচে উচ্চমানের ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুতই প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জ্ঞান শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের আরেকটি দ্রুত বিকাশমান শিল্প। আমরা ছোট থেকে মাঝারি আকারের বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করছি।
দ্রুত শিল্পায়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২০টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।শেখ হাসিনা বলেন, আইটিশিল্পে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য আমরা বেশ কিছু হাইটেক পার্ক গড়ে তুলছি। আইটি পণ্য ও সেবা রফতানি করে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির ৪-৫ শতাংশ দখল করে আছে উৎপাদন খাত। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নগরের ভোক্তায় পরিণত হবে এবং এতে একটি বড় বাজার সৃষ্টি হবে।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের (আইই) মধ্যে একটি, ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ট্রান্সফরমেশন বিষয়ে একটি এবং এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রথম সমঝোতা স্মারকে সই করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম ও আইইর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই।ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ট্রান্সফরমেশনের জন্য সমঝোতা স্মারকে সই করেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সিস্টেম সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুং চ্যান মেং এবং বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী।সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ডগলাস ফু ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির অপর দুই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং এবং সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এসএস থিও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। পরে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেনI