স্যাটেলাইট থেকে যে সুফল পাবে দেশ
ডেইলিইউকেবাংলা নিউজঃ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হল বাংলাদেশ।এর আগে বিভিন্ন দেশ প্রায় দুই হাজারের বেশি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে।এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া স্যাটেলাইট,পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট,নেভিগেশন স্যাটেলাইট ইত্যাদি। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হল যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট। টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করাসহ বহু সুফল আসবে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,এ স্যাটেলাইট থেকে মানুষ চার ধরনের সুফল পেতে পারেন।প্রথমত,এ স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় দুটিই করা যাবে।দ্বিতীয়ত,দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে অপটিক ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল পৌঁছায়নি সেসব জায়গায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণ করা যাবে।তৃতীয়ত,এর সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস।চতুর্থত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট।এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও স্যাটেলাইটটি কাজে লাগানো যাবে।
বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার আর্থ স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণের পর প্রায় ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটটি তার নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছবে।এ জন্য সময় লাগবে ৮-১১ দিন। আর পুরোপুরি কাজের জন্য প্রস্তুত হবে ৩ মাসের মধ্যে। এরপর প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার (ফ্রান্সের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) সহায়তায় এটির দেখভাল করবে বাংলাদেশ।পরে পুরোপুরি বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের হাতেই গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় আর্থ স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে এটি।
যেভাবে কক্ষপথে পৌঁছবে : যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট) কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চপ্যাড থেকে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করার কথা। স্পেসএক্স এবারই প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক-৫ সংস্করণ ব্যবহার করতে যাচ্ছে।
এ রকেটটি নাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের সব কটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এমনকি প্রথমবারের মতো ১০টি ফ্লাইট করতে পারে এ রকেট। যেখানে আগের রকেটগুলো মাত্র ২-৩টি উড্ডয়নে সক্ষম ছিল। তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১।
ফ্যালকন-৯ রকেটে রয়েছে চারটি অংশ। এর উপরের অংশে স্যাটেলাইট, নিচে অ্যাডাপটর। এরপরই রয়েছে স্টেজ-২। এ ছাড়া একেবারে নিচের অংশে স্টেজ-১। উৎক্ষেপণের পরপর স্টেজ ওয়ান চালু হয়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করবে ফ্যালকন-৯। তীব্রগতিতে ছুটবে মহাকাশের দিকে। উচ্চগতির এ রকেট উৎক্ষেপণের ৭ মিনিট পর অদৃশ্য হয়ে যায়।
নির্দিষ্ট সময় পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে ক্যানাভেরালের লঞ্চপ্যাডে ফিরে আসবে। এরপর চালু হবে স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই অবস্থান করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ধাপটি হল লঞ্চ অ্যান্ড আর্লি অরবিট ফেজ (এলইওপি)। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। প্রথম ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। ওই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপন করা হবে।
সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এ স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।