অবশেষে সুচির সম্মান প্রত্যাহার করল অক্সফোর্ড

আন্তর্জাতিকঃ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন নিয়ে নীরব থাকায় শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো সরকারপ্রধান অং সান সু চিকে দেওয়া সম্মাননা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নিল অক্সফোর্ড নগর পরিষদ।সোমবার অক্সফোর্ড নগর পরিষদে ভোটাভুটিতে সু চিকে দেওয়া ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননা ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে সবাই মত দেন। ১৯৯৭ সালে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ দিন নগর পরিষদ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘সহিংসতার প্রতি অন্ধ, এমন কাউকে’ উদযাপন করতে চায় না তারা।এর আগেই অক্সফোর্ডের নগর পরিষদের আন্তদলীয় কাউন্সিলররা এক ভোটাভুটিতে সু চিকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান। সোমবার সন্ধ্যায় ভোটাভুটির মাধ্যমে সর্বসম্মতিতে তারা আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।

এমন দিনে সু চির সম্মাননা ফিরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হলো, যে দিন মিয়ানমারে সফররত ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠকে দেশের সেনাপ্রধান দাবি করলেন, ‘মিয়ানমারে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য হয়নি।’

গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের মুখে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে।সু চির সম্মাননা প্রত্যাহার করে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণকারী ম্যারি ক্লার্কসন বলেছেন, ‘বহুজাতির ও মানবিক শহর হিসেবে অক্সফোর্ডের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে কিন্তু সহিংসতার প্রতি অন্ধত্ব দেখানো কোনো লোকের জন্য আমাদের এই সুনাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও বিচারের পক্ষে যারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আজ আমাদের মৃদূ কণ্ঠস্বর যুক্ত হলো।’

২০১২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সু চিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে এবং সেন্ট হিউ’স কলেজে তার ৬৭তম জন্মদিন উদযাপিত হয়। এই কলেজে ১৯৬৪-১৯৬৭ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে সেন্ট হিউ’স কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের মূল প্রবেশদ্বার থেকে সু চির একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলে। অক্টোবর মাসে সেন্ট হিউ’স কলেজের আন্ডারগ্রাজুয়েটরা তাদের ‘জুনিয়র কমন রুম খেতাবের তালিকা’ থেকে সু চির নাম মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সু চিকে দেওয়ার সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রত্যাহার করার বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখনো কিছু ভাবেনি কিন্তু মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রতিবাদে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বব গেলডফ ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব ডাবলিন’ সম্মাননা ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, যে সম্মাননা সু চি পেয়েছেন, সেই সম্মাননা তিনি রাখতে চান না।

Leave a Reply

More News from আন্তর্জাতিক

More News

Developed by: TechLoge

x