আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে আজ দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী। চার বছর ধরে কংগ্রেসের সহ-সভাপতির দায়িত্ব সামলানোর পর এবারে কংগ্রেসের সভাপতি তিনি। কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেক অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে শনিবার সকালে দিল্লির ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে ভিড় জমান কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। শুরু হয় আনন্দ উৎসব আর মিষ্টি বিতরণ।

সকালেই কংগ্রেস সদর দপ্তরে এসে পৌঁছান সোনিয়া গান্ধী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ ভারতের একাধিক রাজ্যের বর্তমান ও প্রাক্তন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা। হাজির ছিলেন বিশেষ করে কংগ্রেসের নবীন-প্রবীণ সংসদ সদস্যরা। রাহুল গান্ধীর হাতে জয়ের শংসাপত্র তুলে দেন নির্বাচন কমিশনার। ফলে আজ থেকেই অবসান হলো সোনিয়া যুগের। কংগ্রেসে শুরু হলো রাহুল অধ্যায়ের।

১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের সভানেত্রী হন সোনিয়া গান্ধী। দীর্ঘ ১৯ বছর তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। কংগ্রেসের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় সভাপতি পদে বসে থাকার নজির কারো নেই। সোনিয়া গান্ধী যখন কংগ্রেসের হাল ধরেন তখন কংগ্রেসের অবস্থা আজকের মতোই শোচনীয় ছিল। সেই সময় সোনিয়ার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় কংগ্রেস। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাঁরই নেতৃত্বে দশ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস।

এদিন ভাষণে মনমোহন সিং সোনিয়া যুগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর নেতৃত্বের কথা ইতিহাস লেখা থাকবে। সেই সময় দেশের আর্থিক বৃদ্ধি সর্বোচ্চ হয়। পাশাপাশি রাহুলের নেতৃত্বের উপর আস্থা রেখে তিনি বলেন, নতুন সভাপতি দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

সোনিয়া গান্ধী সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য রাহুলকে অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০ বছর আগে সভাপতি পদে আমার অভিষেক হয়। বিবাহ সূত্রে রাজনৈতিক পরিবারে আসি আমি। এই পরিবারের সংস্পর্শে এসে বুঝি তাদের কাছে এই দেশই ছিল জীবন। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য দেশের জন্য প্রাণ ত্যাগ করেছেন।

এর পরই  সোনিয়া গান্ধী তাঁর শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরণ করেন। সোনিয়া বলেন, তাঁর কাছে দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি। তাঁর মৃত্যুর পর মনে হয় যেন মা চলে গিয়েছেন। তারপর থেকে রাজনীতিকে অন্য চোখে দেখা শুরু করি। প্রথমটায় রাজনীতি থেকে পরিবারকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্ত ঘটনাচক্রে আমার স্বামীকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। উনার মাধ্যমে দেশের রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। সেখান থেকে বেরতে সময় লাগে।

সোনিয়া আরো বলেন, যখন দেখলাম কংগ্রেসের প্রতি আঘাত নেমে আসছে, দল কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখনই দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে রাজনীতিতে এগিয়ে আসি। সেই সময় মাত্র তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ধীরে ধীরে সবার সহযোগিতায় একের পর এক রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার গঠন হয়। এর জন্য কংগ্রেসের কর্মী থেকে নেতা সবাইকে ধন্যবাদ। সব থেকে বেশি কৃতিত্ব প্রাপ্য মনমোহন সিংয়ের। যিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

কংগ্রেসের সামনে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, ভারতের মাটিতে আজ মত প্রকাশে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশজুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। রাহুলের প্রতি ভরসা রয়েছে।  নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে কংগ্রেস।

কংগ্রেসের সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই রাহুল গান্ধী দলের সাংগাঠনিক শক্তিকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে রাজনীতিতে এসেছি। দেশের মানুষের ভালোবাসাই আমাকে টেনে এনেছে। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে।

রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে খোঁচা দিয়ে বলেন, এই সরকার দেশকে গরিব বানিয়ে রাখতে চাইছে। দেশে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। ওরা ভাঙতে পারে। আমরা তৈরি করি। ভারতকে বাঁচাতে পারে একমাত্র কংগ্রেসই।

রাহুল বলেন, কংগ্রেসকে দমিয়ে রাখা যাবে না। গণতন্ত্রের উপর আঘাত কখনই মেনে নেবে না কংগ্রেস। ভালোবাসা দিয়ে দেশবাসীর মন জয় করব আমরা। আমি চাই দেশবাসীর মুখের ভাষা হয়ে উঠুক কংগ্রেস। বিজেপি চাইছে কংগ্রেসহীন ভারত তৈরি করতে। কিন্তু সেই চেষ্টা কখনো সফল হবে না।

Leave a Reply

More News from আন্তর্জাতিক

More News

Developed by: TechLoge

x