রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীন-রাশিয়াসহ দশটি দেশের বিরোধিতা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার প্রশ্নে উত্থাপিত একটি জাতিসংঘ-প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগেরও আহ্বান জানানো হয় অনুমোদিত প্রস্তাবে। রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে সক্ষম হননি। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। হারিয়েছেন বহু সম্মাননা। এই নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ত্রাণকর্মীদেরকে মিয়ানমারে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, সকল শরণার্থীর ফেরা নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গাদেরকে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার প্রদানের মতো বিষয়গুলোকে ওআইসির প্রস্তাবটিতে অন্তর্ভূক্ত হয়। এছাড়া মিয়ানমারে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের নতুন নিয়োগের জন্য তহবিল প্রদানের ব্যাপারে বাজেট কমিটির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই সাধারণ পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। পরিষদের ১২২ টি সদস্য দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিরোধিতা করেছে ১০ টি দেশ। আর ২৪টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। এদিকে মিয়ানমারের পাশাপাশি প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে চীন, রাশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম, বেলারুশ, সিরিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
এদিকে মিয়ানমার সরকারের আপত্তিতে দেশটিতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়ানঘি লির আসন্ন সফর অনিশ্চিত হয়ে আছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিপীড়নসহ মিয়ানমারজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্ত করতে জানুয়ারিতে দেশটি সফর করার কথা ছিল তার। কিন্তু ২০ ডিসেম্বরমিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়,জাতিসংঘের এই তদন্তকারীকে আর কোনও সহযোগিতা দেওয়া হবে না। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে লী জানিয়েছেন,মিয়ানমার সরকার তাকে সফরের অনুমতি দেয়নি। তার সন্দেহ, রাখাইনে এমন ভয়াবহ কিছু ঘটছে যা আড়াল করতে তাকে সফরে বাধা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আদি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায় ইয়াঙ্গুন। তাদেরকে পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া বাংলাদেশি মুসলিম হিসেবে দেখাতে চায় দেশটি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি বরং পদ্ধতিগতভাবে তাদের মৌলিক অধিকারও ছিনতাই করা হয়েছে। মুক্তভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম এমনকি বিয়ের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।