মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারেন সু চি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিধনযজ্ঞে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র সহযোগিতা থাকতে পারে। এ জন্য তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধীও হতে পারেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ বন্ধে ব্যর্থতার জন্য তাকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার অনেক যুক্তিও রয়েছে। জাতিসংঘ নিযুক্ত মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন চ্যানেল ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। বুধবার সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘের এই বিশেষ দূতের মিয়ানমারে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে দেশটি।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি’র ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিশেষ দূত লি বলেন, হয় তিনি (সু চি) অস্বীকার করেছেন অথবা পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অনেক দূরে সরে থাকছেন। আমার আশঙ্কা, তিনি এই সহিংসতায় সহযোগিতার জন্য দোষী অথবা তিনি এই সহিংসতা বন্ধে উদাসীন। তবে লি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সু চি’কে কোনো ট্রাইব্যুনালে দাঁড় করানোর সুযোগ খুবই কম। কারণ মিয়ানমার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পক্ষ হয়নি। লি বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নেত্রী হিসেবে সু চি বিবেচিত হলেও তিনি মানবাধিকারের দেবী হতে পারেন না। তিনি একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং এখনো রাজনীতিবিদ আছেন।
রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলতে গণহত্যা চালানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে লি বলেন, অবশ্যই। গণহত্যা হয়েছে বলতে গেলে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তবে আমি শুধু বলতে পারি সেখানে গণহত্যার আলামত রয়েছে। তবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশ চীন এখনো মিয়ানমারের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে। এ কারণে সংস্থাটির পক্ষে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, রাখাইনে নিহত রোহিঙ্গার যে সংখ্যা বলা হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হতে পারে। আমি যা জানতে পেরেছি তা হলো, এখন অথবা পরে আরো গণকবরের সন্ধান পাওয়া যাবে।
সাক্ষাত্কারে লি বলেন, তারা বলছে- আমি পক্ষপাতদুষ্ট এবং ন্যায়বিরুদ্ধ। কিন্তু আমি এই অভিযোগের ব্যাখ্যা চাইলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যখন আমি বললাম রাখাইনে বিচারবর্হিভূত হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তখন মিয়ানমার সরকার সব অস্বীকার করলো। এটাই কি আমার পক্ষপাতিত্ব?
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন হবে না বলে মনে করেন জাতিসংঘের এই দূত। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নকারী আইনগুলো বাতিল করা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। এমনকি তারা ফিরে যাওয়ার পরও। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা পশুর মতো আচরণ করে উল্লেখ করে লি বলেন, বছরের পর বছর ধরে এটা করা হচ্ছে।