রাখাইনে ব্রিটিশ এমপিদের ঢুকতে দেবে না মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,মিয়ানমারঃ যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টারি কমিটির মিয়ানমার সফরের পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়েছে বার্মিজ কর্তৃপক্ষ। রাখাইনের প্রকৃত অবস্থা দেখতে তারা ওই সফরে আসতে চেয়েছিলেন। দ্য টেলিগ্রাফের  খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থান নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের  সমালোচনার পর ওই সফরের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নেপিদো।রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার মধ্যে রাখাইন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি। সফরে দেশটির ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’সহ  ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও মিয়ানমারে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা প্রকল্পের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের এমপিরা।

এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় বার্মিজ কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একই প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর দমনপীড়নের সময় যৌন সহিংসতার প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরেন ব্রিটিশ এমপিরা। ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া ওই জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় সাত লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ার ও লেবার পার্টির এমপি স্টিফেন টুইগ জানান, যুক্তরাজ্যের বার্মিজ দূতাবাস তাদের ভিসা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। এই উপসংসহার থেকে সরে আসা কঠিন যে, মিয়ানমারের এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের প্রতিবেদনের প্রত্যক্ষ ফলাফল।’

স্টিফেন টুইগ এমপি বলেন, বার্মিজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাউস অব কমন্সের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি সহায়তা প্রকল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই কমিটি। ব্রিটিশ এমপিরা বলছেন, মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডে ‘মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়’ তৈরি হয়েছে।মিয়ানমারের ইরাবতী সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সম্প্রতি জানায়, রাখাইন থেকে ৯০ ভাগ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনও রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বর্মি সেনারা। বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে সেনা সদস্য বাড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করছেন।

বান্দরবানের ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সীমান্তে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা থাকলেও তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ বা বয়স্ক তাদের ইতোমধ্যে কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখোলা সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া মাইকিংয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অনবরত ভয়ভীতি প্রদর্শনের ফলে সম্প্রতি অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে পালিয়ে গেছে। তারপরও আমরা রোহিঙ্গাদের এই মাইকিংয়ে বিব্রত না হওয়ার জন্য বলেছি। আমাদের আশ্বাসে এখনও অনেক রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। আগে যে পরিমাণ রোহিঙ্গা ছিল, এখন অর্ধেকেরও কম সংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে সেখানে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আগের তুলনায় বেশি মিয়ানমারের সেনাসদস্য অবস্থান করছে।’

রোহিঙ্গাদের কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, বর্মি সেনারা শরণার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে। শান্তিতে ঘুমাতেও পারি না। শিবিরের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এখন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চায়। জোর করে রাখাইনে পাঠানো হতে পারে এমন আশঙ্কায় এরইমধ্যে শিবিরের ১৫০ পরিবার বাংলাদেশে চলে গেছে।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x