এ বছর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যৌন কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুইডিশ নোবেল অ্যাকাডেমি।২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণার সময় ২০১৮ সালের পুরস্কারও ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। শুক্রবার (৪ মে) সুইডিশ নোবেল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো খবরটি জানিয়েছে। অ্যাকাডেমি জানায়, লোকজনের আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য,ছয় ক্যাটাগরির নোবেল পুরস্কারের মধ্যে ৫টি পুরস্কার নরওয়েজিয়ান একাডেমি থেকে দেওয়া হলেও সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি।সুইডিশ অ্যাকাডেমির তহবিলে পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ফরাসি আলোকচিত্রী জঁ-ক্লদ আরনল্টের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল গত বছর শেষের দিকে। আরনল্ট হলেন সুইডিশ অ্যাকাডেমির সদস্য ক্যাটারিনা ফ্রস্টেনসনের স্বামী।যৌন হয়রানি নিয়ে সরব হওয়ার আন্দোলন #মি টু ক্যাম্পেইনে অনুপ্রাণিত হয়ে গত নভেম্বরে আরনল্টের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন ১৮ নারী। এরপর আরনল্টের স্ত্রী ফ্রস্টেনসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। তবে ফ্রস্টেনসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে ভোট দেয় অ্যাকাডেমি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থেকে তিন সদস্য ক্লাস অস্টেরগ্রেন,কোজেল ইসেপমার্ক এবং পিটার ইংলুন্ড সরে দাঁড়ান। এরপর এপ্রিলে পদত্যাগ করেন ফ্রস্টেনসন। আর তার কিছুক্ষণ পরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন অ্যাকাডেমি প্রধান দানিয়ুস।
সুইডিশ নোবেল কমিটিতে যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে তৈরি হওয়া অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।এ বছর আদৌ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা যাবে কি না, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ মে) নোবেল কমিটির ১০ সদস্য একটি বিশেষ বৈঠকে বসেন।
শুক্রবার সুইডিশ অ্যাকাডেমির বিবৃতিতে জানানো, এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে না। আগামী বছর ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বিজয়ীর নাম একসঙ্গে ঘোষণা করা হবে। সুইডিশ অ্যাকাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অ্যাকাডেমির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় এবং অ্যাকাডেমিতে লোকজনের আস্থা কমে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে এখন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ অ্যাকাডেমির পরিচালনা সংক্রান্ত সংকটগুলো সমাধান করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।উল্লেখ্য, ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান,রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। পরে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। আর বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়। ৫টি ক্যাটাগরির পুরস্কার নরওয়েজিয়ান একাডেমি থেকে দেওয়া হলেও সাহিত্য পুরস্কার দেয় সুইডিশ অ্যাকাডেমি।এর আগে ১৯৪৩ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে নোবেল পুরস্কার দেওয়া বন্ধ ছিল। আর ১৯৩৫ সালে যোগ্য বিজয়ী না পাওয়া যাওয়ায় পুরস্কার দেওয়া হয়নি।