দূতাবাস স্থাপনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-গুলি, ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,জেরুজালেমঃ পবিত্র জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভকালে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে।নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।এছাড়া আহত হয়েছে এক হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, দূতাবাস উদ্বোধনের দিন সোমবার ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনিরা।এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।সোমবার মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর ও ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে পুরো সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। সীমান্ত বেস্টনি পেরিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা।

স্থানীয় সময় সোমবার বিকালে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করার কথা। মূলতঃ তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এই দূতাবাস ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস হিসেবে কার্যক্রম চালাবে।উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জারেড কুশনার ইসরায়েল পৌঁছেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মিউচিন ও উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।গত বছর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে আনার  সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ।

এদিকে ইসরায়েল ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের  প্রশংসা করলেও ফিলিস্তিনিরা মার্কিন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এর প্রবল বিরোধিতা করে আসছে।  জেরুজালেমকে নিজেদের ‘শাশ্বত ও অখণ্ড’রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েল।অপরদিকে, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম দাবি করে। তারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার পদক্ষেপকে পুরো নগরীর ওপর ইসরায়েলের শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট সমর্থন হিসেবে দেখছে। জেরুজালেমের পূর্বাঞ্চলকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।সোমবার দূতাবাস উদ্বোধনের দিন ফিলিস্তিনিরা সীমান্তে জড়ো হতে থাকে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা ওই সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ও পেট্রোলবোমা ছোড়ে।

এ সময় ইসরায়েলী বাহিনী গুলি, টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় গাজা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। নিরাপত্তা বেস্টনির পাশে অন্তত  ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি  জড়ো হয়েছে এবং তারা সহিংস হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তেলআবিব বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী আইনি প্রক্রিয়া মেনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।এর আগে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’  অর্থাৎ নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার অধিকারের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা গত ছয় সপ্তাহ ধরে সীমান্তে বিক্ষোভ করে আসছে।  গত ৩০ মার্চ  তারা গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমে তারা গড়ে তুলেছে দুেই লাখ ইহুদির বসতি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।আজ জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এটি আরো পরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি এগিয়ে আনা হয়েছে।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x