নিষেধাজ্ঞা অবসানের পর গাড়ি নিয়ে সড়কে সৌদি নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,সৌদি আরবঃ পূর্ব ঘোষণার অংশ হিসেবে রবিবার মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে আসেন সৌদি আরবের নারীরা।তাদের দেশটিই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোটা বেআইনি বিবেচিত হতো।সুদীর্ঘ আন্দোলন আর সৌদি অর্থনীতির বাস্তবতায় স্বীকৃত হলো তাদের বহুদিনের দাবি।এদিন থেকে গাড়ি চালানোর অনুমতি মেলায় তাদের চোখে মুখে ছিল উচ্ছ্বাস।২৪ জুনের প্রথম প্রহরে চালকের আসনে বসে বিরল সে দৃশ্যের সূচনা করেন সৌদি নারীরা।সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন অনেকে সরাসরি রাস্তায় নেমে এসে নারী গাড়ি চালকদের শুভেচ্ছা জানায় সেখানকার নাগরিকেরা।বাদ যায়নি পুলিশও।গাড়ির স্টিয়ারিং-এ থাকা নারীরা তাদের কাছেও পায়  ফুলেল অভিনন্দন।২৪ জুনের প্রথম প্রহরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও নানা শুভেচ্ছামূলক ভিডিও ও পোস্টে ভরে ওঠে।

সৌদি আরবই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর এতোদিন নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।তরুণ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি তার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে নানামুখী সংস্কার-কার্যক্রম হাতে নেন। এই সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত ছিল।গত বছর সেপ্টেম্বরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক ডিক্রিতে নারীদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন।তিনি ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের ২৪ জুন থেকে নারীরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে  জুন মাসে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে শুরু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রবিবার দেশটিতে আসে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ।মধ্যরাতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে সৌদি নারীরা।

রবিবার কালো রঙের লেক্সাস গাড়িতে চড়ে রিয়াদজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ২৩ বছর বয়সী মাজদুলীন আল আতিক।মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে নিজের অনুবূতির কথা জানান তিনি। মাজদুলীন বলেন,খুব অদ্ভুত লাগছিলো,আমি খুব খুশি। ঠিক এ সময়ে এটা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’ জেদ্দার বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী মনোবিজ্ঞানী সামিরা আল ঘামদিও প্রথম লাইসেন্সধারীদের একজন।মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত এবং এর মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনধারা একেবারে পাল্টে যাবে।’

সৌদি আরবে নারী চালক হিসেবে লাইসেন্স হাতে পাওয়া নারীদের একজন সামার। তিনি একজন টিভি উপস্থাপক। রবিবার মধ্যরাতে নারীদের গাড়ি চালানোর ঐতিহাসিক সে পর্ব শুরুর আগে তিন সন্তানের জননী সামার চার বছরের সন্তানকে চুমু খেয়ে নেন এবং তাকে শুভরাত্রি বললেন।এরপর একটি সাদা আবায়া মাথায় জড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরেন তিনি।উত্তরাঞ্চলীয় রিয়াদের নারজিস এলাকায় তার বাড়ি।বাড়ির সামনে পার্কিং থেকে জেনারেল মোটর্সের সাদা রঙা গাড়িটির চালকের আসনে বসে রওনা দেন তিনি। গাড়ি নিয়ে সৌদি আরবের প্রধান সড়ক কিং ফাহাদ হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে থাকেন তিনি।ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে সামার বলেন,আমি জীবনে কল্পনাও করতে পারিনি যে এখানে গাড়ি চালাব।এ রাস্তায় গাড়ি চালাব।

নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসহ কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সৌদি সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও এখনও দেশটিতে নারীদের জন্য অন্যতম বড় বড় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে এখনও নারীদের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা প্রচলিত।আইন অনুযায়ী নারীদের পড়াশুনা,ভ্রমণ বা অন্য কোনও কাজের জন্য বাবা,স্বামী বা ভাইয়ের অনুমতির দরকার পড়ে। সৌদি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি নারী অধিকারের লড়াইয়ের জন্য এই অভিভাবকত্ব একটি বড় ইস্যু।২০১১ সাল থেকে প্রায় ৩০ জন অ্যাকটিভিস্ট ও বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সৌদি আদালত। এইচআরডব্লিউ এর মতে এদের অনেককেই ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।এই কয়েকদিন আগেও যুবরাজের সংস্কার নিয়ে সংশয়ী বেশ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x