ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,সৌদি আরবঃ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন,আমি ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি।যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সৌদি সরকার দুই সপ্তাহও টিকবে না-ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েকদিনের মাথায় সৌদি যুবরাজের পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া এলো।মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,মধ্যপ্রাচ্যে দুই নেতার অর্জন অনেক।বিশেষ করে চরমপন্থা,চরমপন্থী দর্শন,সন্ত্রাসবাদ ও দায়েশ (আইএস) বিরুদ্ধে দুই নেতার উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে।

সৌদি সরকারের অস্তিত্ব নিয়ে ট্রাম্পের তীর্যক মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে যুবরাজ বলেন,মিত্রদের মধ্যে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক। যে কোনও বন্ধুই আপনার ভালো-খারাপ নিয়ে বলবে। শতভাগ বন্ধু আপনাকে ভালো বলবে না,এমনকি আপনার পরিবারও না। আপনাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবে। আমরা বিষয়টিকে ওই ক্যাটাগরিতেই ফেলতে চাই।এমবিএস নামে পরিচিত ৩৩ বছরের সৌদি যুবরাজ বলেন,ট্রাম্প তার নিজ দেশে মার্কিন নাগরিকদের সামনে একটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। আমার কাছ থেকে আপনি এর উত্তর পেয়েছেন।এর আগে ৩ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার মিসিসিপি’তে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সৌদি সরকার দুই সপ্তাহও টিকবে না।সমাবেশে উচ্ছ্বসিত ট্রাম্প বলেন,আমরা সৌদি আরবকে সুরক্ষা দিচ্ছি। আপনারা বলতে পারেন তারা ধনী। আমিও রাজা সালমানকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি রাজাকে বলে দিয়েছি যে,আপনাকে আমরা সুরক্ষা দিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া আপনি দুই সপ্তাহও টিকতে পারবেন না।’

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব খর্ব করার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইসরায়েল ঘেঁষা একটি কথিত শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সৌদি আরবকে পাশে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছে।ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় যখন প্রায় মুসলিম বিশ্ব উত্তাল সেই সময়েও সৌদি আরবের অবস্থান ছিল দৃশ্যত ট্রাম্পের পক্ষেই। ওই সময়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোতে জেরুজালেম সংক্রান্ত খবর প্রকাশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। জর্ডানে থাকা সৌদি নাগরিকদের সতর্ক করা হয়, দেশটিতে এ ইস্যুতে যেন ট্রাম্পবিরোধী কোনও বিক্ষোভে তারা অংশ না নেন। এছাড়া ট্রাম্পের ইহুদি ধর্মাবলম্বী জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গেও সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি বারবার সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

জেরুজালেম বা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরব দৃশ্যত ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ালেও এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারণায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে উইকনসিস রাজ্যে এক নির্বাচনি প্রচারণায় তিনি বলেন, আমরা সৌদি আরবকে সুরক্ষা দিচ্ছি্। কেউ তাদের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে আসে না। কারণ আমরা তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছি। রিয়াদ এর বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করছে না। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন, প্রাথমিকভাবে তেলের কারণেই আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি। এখন আমাদের তেলের এতো প্রয়োজন নেই।২০১৮ সালের এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে একাধিক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি ইস্যুতে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সৌদি আরব যদি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত দেখতে চায় তাহলে তাদের ওয়াশিংটনকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া মার্কিন সেনাদের পাশাপাশি সিরিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোরও নিজস্ব বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আইএস’কে পরাজিত করার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। শিগগিরই আমরা অন্যদের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যাপারে একটি নতুন সংকল্পে আসবো। আমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সৌদি আরব খুবই আগ্রহী। আমি তাদের বলে দিয়েছি যে, আপনারা চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় অবস্থান করুক। তাহলে আপনারাই হয়তো এর জন্য অর্থ পরিশোধ করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেছেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির জন্য কাতারকে অবশ্যই অর্থ দিতে হবে। সিরিয়ায় তাদের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাতারের সুরক্ষা বাতিলের আগেই তাদের এটা করতে হবে।

কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি নিয়েও কথা বলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নিলে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কাতার সরকারের পতন ঘটবে।গত মার্চে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় সৌদি আরবের অঢেল সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে যুবরাজের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, সৌদি আরব খুব ধনী দেশ। নিজেদের সম্পদের কিছু অংশ তারা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে যাচ্ছে। দুনিয়ার সেরা সামরিক সরঞ্জামাদি কেনার জন্য, মার্কিন নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য তারা এই অর্থ দেবে। তাদের মার্কিন অস্ত্র ক্রয়ের কারণে শত শত কোটি ডলার ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অস্ত্র ব্যবসায় ৪০ হাজার মার্কিন নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।

Leave a Reply

More News from আন্তর্জাতিক

More News

Developed by: TechLoge

x