সিলেটে যৌতুকের দাবিতে পা ভেঙ্গে দেয়া স্বামী আটক
সিলেট প্রতিনিধি।। সিলেটে যৌতুকের দাবিতে পা ভেঙ্গে দেয়া পাষন্ড স্বামীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশ। আটককৃত ব্যক্তির নাম জাকিরুল ইসলাম রিপন (২৭)। গত বুধবার নগরীর বাদামবাগিচা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
সিলেট এসএমপি থানাধীন বিমানবন্দর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন আটকের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন আটককৃত জাকিরুলকে গত বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত সিলেট নগরীর মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফারজানা মুনালিসা ও ছাত্র জাকিরুল ইসলাম রিপন। তাঁরা উভয়ই আইন(ল)বিষয়ে অধ্যায়নরত। তাঁরা একই ইউনিভার্সিটিতে একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। ফলে একে অপরের সাথে ক্লাসের ফাঁকে দেখা সাক্ষাত হতো। একপর্যায়ে উভয়ই জড়িয়ে পড়েন ভালোবাসার বন্ধনে। এই বন্ধনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি। যা উভয়ের অভিভাবকের সম্মতিতে অনুষ্টিত হয়।মুনালিসা থাকতেন শশুর বাসা সিলেটের এয়ারপোর্ট রোডের হক ভিলা বাদামবাগিচা ২০/২ –এ। শশুরের নাম হাজী আব্দুল হক। তিনি এয়ারপোর্ট রোডের হক ভিলা বাদামবাগিচা ২০/২ –এ বাসিন্দা।
বিয়ের শুরুর দু’য়েক মাস খুবই আনন্দে কাটলেও এর পর পর থেকে স্বামী জাকিরুল যৌতুক দাবি করে বসেন বলে অভিযোগ মুনালিসার। তার পরিবার আর্থিকভাবে এতোটা সচ্চল ছিল না বলে যৌতুকের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় শারিরীক নির্যাতন করে স্বামী প্রাণ প্রিয় প্রেমিক জাকিরুল একটি পা আলাদা করে ফেলেন।পরবর্তীতে তিনটি লোহার রড দিয়ে পা একত্রিত করা হয়। এর আগেই অনেকবার যৌতুকের দাবি করে মারধর করে বলে মুনালিসা অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মোনালিসা। মামলা নং – ১১/১/১৮।
তিনি বাবার বাসা ঢাকায় পরবর্তী চিকিৎসার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অবস্থানকালে মুনালিসাকে বিভিন্ন ভাবে জাকিরুল হয়রানী করছে বলেও অভিযোগ মুনালিসার।
যৌতুকের জন্য যখন অত্যাচার করত জাকিরুল তখন শশুর-শাশুরী সামনে থেকে নিরব ভূমিকা পালন করতেন বলে মুনালিসা দাবি করেন। এছাড়াও বাবার বাড়ি থেকে ৫ ভরি স্বর্ণ সহ ব্যবহারিক সকল মূল্যবান জিনিসপত্র জাকিরুল আটক করে রেখেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি ঢাকায় বসবাস করে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে থানায় জিডি করেছেন জানিয়ে মুনালিসা বলেন- স্বামী জাকিরুল তাঁর স্বপ্নের দিকটাকে কেড়ে নিয়েছে।তার আঘাতে আমি পঙ্গু হয়ে মানবতর জীবন যাপন করছি। তিনি চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
মুনালিসা এঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাভিত্তি যেন না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে পাশন্ড স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। তাঁর পঙ্গুত্বের কারণে বর্তমানে পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
মুনালিসার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে জানা যায়, তার একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে,পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। তার বাবা একজন দর্জি।তার বাবা এখন দিশেহারা হয়ে আছেন।জাকিরুল বিদেশে যাওয়ার পায়তারা করছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাকিরুলের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং – ১১/১/১৮।