নাগরিক শোকসভায় বক্তারা: বড় মনের মানুষ ছিলেন শাহাব উদ্দিন বেলাল

মোঃ বাবুল হোসেন ।। শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল ছিলেন একজন আজন্ম মানবহিতৈষী। তিনি মানুষের সেবায় নিজেকে উতসর্গ করে গেছেন। সে কারণেই তাঁর মৃত্যু নাড়া দিয়েছে কমিউনিটির হৃদয়কে।

৬ মার্চ মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোক সভায় এভাবেই প্রয়াত শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলালকে আখ্যায়িত করলেন বক্তারা। শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ শোক সভায় বক্তারা বলেন শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল ছিলেন একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ। কেবল পরিচতিজনদের নয়; অপরিচিত লোকের বিপদেও তিনি সাহায্য নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তেন। নিজের কাজের মধ্যদিয়ে তিনি বড় মনের মানুষের সাক্ষর রেখে গেছেন। গত নভেম্বর মাসে মহাসমারোহে লন্ডনে বিয়ানীবাজার পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন করা হয়। ওই উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে অনুষ্ঠানকে সফল করতে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল। এই উদযাপন পরিষদ শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলালের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৬ মার্চের ওই নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে। একইসাথে সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আলহাজ আবদুল মতলিবের প্রতিও বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় ওই শোক সভায়। শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল গত ২৬ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। আবদুল মতলিব ইন্তেকাল করেন গত ২১ ফেব্রুয়ারি। শোকসভায় প্রয়াত এই দুই বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্বের আত“ার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফিজ মাওলানা হাসান আহমদ। প্রয়াত এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে উতসর্গ করে একটি বিশেষ স্মরণীকা প্রকাশ করা হয়। এতে শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলালের স্মৃতিচারণ করে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আহমদ কুসুমের একটি লেখা স্থান পেয়েছে। লেখাটি সকলের হৃদয়কে নাড়া দেয়। শোকসভা পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আলহাজ ছমির উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন আহবায়ক আলহাজ মনজ্জির আলী। শোকসভায় অতিথি হিসেবে যোগ দেন যুক্তরাজ্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার আবুল কাশেম খান, আলহাজ সরফ উদ্দিন, আলহাজ সোনা মিয়া, বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম এমবিই, কমিউনিটি নেতা ডাক্তার আবদুল কাদির, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শাহানুর খান, সাবেক কমিউনিটি নেতা লুতফুর রহমান এনু, কাউন্সিলার সেলিম উল্লাহ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বেলাল আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী, সাপ্তাহিক সুরমার সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, সাপ্তাহিক জনমতের নির্বাহী সম্পাদক সাঈম চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান, যুক্তরাজ্য বাসদের সভাপতি গয়াসুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলার শহীদ আলী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আবদুল মালিক খোকন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আতাউর রহমান, যুক্তরাজ্য জাসদ (জেডি) সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হুমায়ুন কবির, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক লুতফুর রহমান সায়াদ, ইস্ট লন্ডন আওয়ামী লীগের আবদুল আলী, এসেক্স আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, লন্ডন আওয়ামী লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহিম শামীম, নিউহ্যাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির মুরাদ, কবি নজরুল ইসলাম, আয়োজক কমিটির ইফতেখার হোসেন মাখন, বিলাল মোহাম্মদ ফাহিম, মোঃ বাবুল হোসেন, লুতফুর রহমান, যুক্তরাজ্য জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, সাধারণ সম্পাদক এম ইকবাল হোসেন, সহ সভাপতি আবদুল বাছির। তাঁরা বর্ণবাদ বিরোধী প্রয়াত নেতা ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলার প্রয়াত শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলালের সাথে কাটানো বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। তারা বলেন যে, কমিউনিটির যে কোনো কল্যাণকর উদ্যোতে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

গত প্রায় ২৭ বছর যাবত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট করেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি তাঁর এই রোগকে কথনো পাত্তা দেননি। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সব সময়। সমানতালে চালিয়েছেন রাজনীতি ও সাংবাদিকতা। তাঁর হাস্যজ্জোল উপস্থিতি কমিউনিটির যে কোনো আয়োজনকে মাতিয়ে তুলতো। শাহাব উদ্দিন আহমদের মৃত্যু বিলেতের বাঙালি কমিউনিটিতে যে শূণ্যতার তৈরি হয়েছে তা আর কখনো পূরণ হওয়ার নয়। কারণ, মানুষের কল্যাণে, আত“ীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের উপকারে, আড্ডায় শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল ছিলেন অসাধারণ। তিনি ছিলেন ছোট-বড় সকলের বেলাল ভাই। নাগরিক শোক সভায় প্রয়াত শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলালের ছোট ভাই হেলাল উদ্দিন আহমদ, বড় ছেলে আবুল হাসনাত, দ্বিতীয় ছেলে আবুল খায়ের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা করেন। পরিবারে শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল কতটা অমায়িক ছিলেন সেসব স্মৃতি স্মরণ করেন। ছেলে আবুল খায়ের বলেন, বাবার মৃত্যুর আগে তাঁরা বুঝতে পারেননি কমিউনিটিকে তাদের বাবা এতটা জনপ্রিয়। বলেন, এ দেশে জন্ম নেয়ার কারণে কমিউনিটির সাথে মেশার বিষয়টি ঠিকমত তারা বুঝতেন না। বাবার মৃত্যুর পর কমিউনিটিতে একের পর এক শোক সভার আয়োজন দেখে তাঁর আবেগাপ্লুত এবং সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। শাহাব উদ্দিন আহদের বাকী তিন পুত্রও শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রয়াত অপর বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আবদুল মতলিবের বড় ভাই হাজি আবদুস শহীদ ও ছেলে বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

More News from যুক্তরাজ্য

More News

Developed by: TechLoge

x