বিপিএল চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স
স্পোর্টস ডেস্কঃ ক্রিস গেইলকে নিয়ে আগেই ভয় দেখিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার বিশ্বাস ছিল আসল জায়গায় কাজটা ঠিকই করে দিবেন ‘ইউনিভার্সাল বস’। বড় ম্যাচের বড় খেলোয়াড় কাজটা ঠিকই করলেন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। পূরণ করেছেনফ্র্যাঞ্চাইজির স্বপ্ন। রংপুর রাইডার্সকে জিতিয়েছেন বিপিএলের প্রথম শিরোপা।
পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেললেও আসল জায়গায় এসে পথ হারিয়ে বসল ঢাকা ডায়নামাইটস। এবার শুধু পথ হারায়নি। শিরোপার স্বপ্নও মাটি চাপা পড়েছে। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে গেইলের ৬৯ বলে ১৪৬ রানের ইনিংসে ২০৬ রানের পুঁজি পায় চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স। জবাবে ১৪৯ রানে থামে ঢাকার ইনিংস। ৫৭ রানের জয়ে রংপুর প্রথমবারের মতো জিতল বিপিএল শিরোপা।
পাহাড় সমান রান সংগ্রহ করলেও রংপুরের ব্যাটিং ছিল স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতো। ১২০ বলের খেলায় রংপুরের ইনিংসে ৫২ ডট বল। বাকি ৬৮ বলে রান আসে ২০৬! কিন্তু গেইলের দিনে পরিসংখ্যান শুধু রেকর্ডের পাতায় মানায়।
ফাইনালে মোহাম্মদ আমিরকে বাইরে রেখে ঢাকা বুঝিয়ে দিয়েছিল নিজেদের মন মতো উইকেটই পেয়েছে তারা। তিন স্পিনার সাকিব, আফ্রিদি ও সুনিল নারিনের সাথে বাড়তি পাওয়া মোসাদ্দেক। প্রথম দশ ওভারে নয় ওভারই করল তিন স্পিনার। আর বিশ ওভারে পেসাররা হাত ঘোরায় মাত্র ৬ ওভার। টি-টোয়েন্টির ফাইনালে বিরল এক ঘটনা।
প্রথম দশ ওভারে ম্যাচে ছিল ঢাকা। এ সময়ে রংপুরের রান ৬৩। রান রেট মাত্র ৬.৩০। ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যে স্ট্রাগল করছিল তা একটি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। প্রথম ৬০ বলের ৩১টি ডট বল। পরবর্তী দশ ওভারে ডট বল মাত্র ২১টি। রান হল ১৪৩! এই ১৪৩ রানের মধ্যে গেইল করেন ১১২ রান, ম্যাককালামের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান।
পাওয়ার প্লে’ টাও কাজে লাগাতে পারেনি রংপুর। ৬ ওভারে রান মাত্র ৪১। ষষ্ঠ ওভারে ১৯ রান আসলেও দশ ওভারের পর মূল ঝড়টা তুলেন টি-টোয়েন্টির দুই স্পেশালিস্ট।
ধীর গতির উইকেটে বল ব্যাটে আসছিল না ঠিকমত। ‘অনভ্যস্ত’ উইকেটে শুরু থেকেই সময় নিচ্ছিলেন ক্রিস গেইল। কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পর ভেতরের দৈত্যটা বের হয়ে আসে খুব সহজেই। এরপর তাকে আর থামানো যায়নি। ৩৩ বলে ফিফটির স্বাদ পাওয়া ক্রিস গেইল সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৫৭ বলে। ১৪৬ রানের খুনে ইনিংসটি সাজান ৬৯ বলে। যেখানে চারের মার ছিল মাত্র পাঁচটি। আর হাওয়ায় ভাসিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠান ১৮ বার।গেইল শোতে প্রায় দর্শক হয়ে ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ৪৩ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক। দুজনের ২০১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
১৮ ছক্কা মেরে গেইল ভেঙেছেন নিজের রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৭৫ রানের ইনিংসটি সাজাতে গেইল ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ১৭ ছক্কা। ইনিংসের শেষ বলে সাকিবকে ছক্কা মেরে নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙেন ক্যারিবীয় দানব। আর ১৪৬ রানের ইনিংস খেলে এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান (৪৮৫), ক্যারিয়ারে এগার হাজার রান (১১০৫৬) পূর্ণ করেন।
টস জিতে বোলিং নিয়ে রংপুর শিবিরে প্রথম ধাক্কাটি দেন সাকিব। দ্বিতীয় ওভার মেডেন নেন। সাথে জনাথন চার্লসের উইকেট। প্রথম চার বলে স্ট্রাগল করার পর পঞ্চম বলে লিডিং এজ হয়ে সাকিবের হাতে ফিরতি ক্যাচ দেন চার্লস। এরপর আর সাকিবকে পাওয়া যায়নি। মেডেন উইকেট নিয়ে শুরু করা সাকিব তিন ওভারে ব্যয় করেন ২৬ রান। চার স্পিনার ১৪ ওভারে দেন ১০৪ রান। আর তিন পেসার ৬ ওভারে খরচ করেন ৯৮ রান।
বিপিএলে ১৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড থাকলেও দুইশর বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল না। ইতিহাস আজও পাল্টাল না। ২০৭ রানের লক্ষ্য পাহাড় সমান হয়ে রইল সাকিব, লুইস, পোলার্ডের জন্য। ২৯ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট তুলে নিয়ে রংপুরের বোলাররা জয়ের ভিত গড়ে দেন।
প্রথম ওভারে মাশরাফির শিকার মেহেদী মারুফ। পরবর্তীতে জো ডেনলি ও এভিন লুইসকে আউট করেন সোহাগ গাজী। নিজের প্রথম ওভারেই রুবেল ফিরিয়ে দেন কাইরন পোলার্ডকে। সাকিব ও জহুরুল চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর বলে সাকিব (২৬) বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ঢাকার স্বপ্ন গুড়িয়ে যায়। ৫০ রানে করে জহুরুল ইসলাম শুধু ঢাকার পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র।
মোসাদ্দেকের বলে ২২ রানে কভারে সাকিবের হাতে জীবন পান ক্রিস গেইল। হাস ফসকে সাকিব শুধু গেইলের ক্যাচটিই ফেলেননি বরং শিরোপা হাতছাড়া করেছেন।
ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ফাইনালটা প্রায় একপেশে বানিয়ে জিতেছে রংপুর রাইডার্স। এ জন্য হয়তো মাশরাফিদের শিরোপা উল্লাসটা ছিল দেখার মতো। আর বিপিএল ও মাশরাফি তো একই সুতোয় গাঁথা। পাঁচ আসরে চার শিরোপা জেতা তো আর চাট্টেখানি কথা না!প্রথম তিন আসরে শিরোপা জেতার পর চতুর্থ আসরে মাশরাফি পাননি বিপিএলের ট্রফি। এক আসর পর আবারও সেরার মুকুট মাশরাফির মাথায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা।