জেরুজালেম প্রশ্নে ওআইসি চুপ থাকতে পারে না: প্রেসিডেন্ট

নিউজ ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না।জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে একটি সমন্বিত জবাবের সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম সংগঠন ওআইসির একটি জরুরি সম্মেলনে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এ ষষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই বৈরী পদক্ষেপে ওআইসি দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের অবশ্যই আল কুদস (জেরুজালেম) বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত ওআইসির বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে জোরালোভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, এই জরুরি সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই জোরালো বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আমরা ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে তাদের পেছনে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও শক্তি জোগাব।ওআইসির বর্তমান চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মুসলিম দেশগুলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত বলে মন্তব্য করার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। এর এক সপ্তাহ পর ইস্তাম্বুল কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে ওআইসির এ বিশেষ সম্মেলনে ৫০টিরও বেশি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও মন্ত্রীরা যোগ দেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের কথিত রাজধানী হিসেবে মার্কিন ঘোষণার বিপক্ষে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রহসনের সম্মুখীন ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার গঠনমূলক ও আশাব্যঞ্জক ভূমিকা আহ্বানের মধ্যদিয়ে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে শামিল হয়েছেন।রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবন এবং এ সংকট সমাধানে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আওতায় একটি গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর মার্কিন ঘোষণা এবং তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর প্রক্রিয়া মুসলিম অনুভূতিকে আহত করেছে এবং ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এছাড়া এটি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যও বিরাট হুমকির সৃষ্টি করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আরব-ইসরায়েল শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মক হ্রাস করেছে। রাষ্ট্রপতি একই সঙ্গে ইসরায়েলের গৃহীত নীতি-কৌশল ও পদক্ষেপসমূহ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে ওআইসির তাৎক্ষণিক ও সক্রিয় সম্পৃক্ততা কামনা করেন।তিনি বলেন, জেরুজালেমে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান ও প্রথম কেবলা হল ‘হারাম আল-শরিফ’। তাই মুসলিম বিশ্ব এটা কখনোই মেনে নেবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ওই ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মলেনের আয়োজন করায় তুর্কি নেতাকে ধন্যবাদ জানান।রোহিঙ্গা ইস্যু : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি প্রধান ও তার সদস্যদের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং দেশহারানো রোহিঙ্গাদের পক্ষে সম্প্রতি অস্টানা সায়েন্স সামিটে ঘোষিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন।তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে জীবন বাঁচাতে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে, সুরক্ষিত এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর স্থায়ী চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।

Leave a Reply

More News from বাংলাদেশ

More News

Developed by: TechLoge

x