হাথুরুর শিষ্যদের হাতেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি
স্পোর্টস ডেস্কঃ মুশফিক আউট, পুরো স্টেডিয়ামে পিন পতন নীরবতা। মিরপুরে যেন কিছুক্ষণের জন্য কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। প্রথমবার রিভার্স সুইপ খেলতে ব্যর্থ হওয়া মুশফিক দ্বিতীয়বার সুইপ খেলেই আউট হলেন। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে গেলো। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য ছোটখাটো যুদ্ধ করলেন পরের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে, কিন্তু জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
আরও একটি স্বপ্নের করুণ অপমৃত্যু ঘটলো মিরপুরের ২২ গজে। শেরে বাংলা স্টেডিয়াম জড় পদার্থ না হলে বোধহয় কেঁদে উঠতো। মুশফিক-সাকিব-মাশরাফিদের জড়িরে ধরে বলতো, ‘তোমরা কি আমাকে একটা শিরোপা দেবে না?’ এক যুগ ধরে এমন হাহাকার হোম অব ক্রিকেটের। চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে চারবারই হারের বেদনায় নীল বাংলাদেশ।অথচ মিরপুর স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বর দুই হাত ভরে দিয়েছে ক্রিকেটারদের। সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন এই মাঠে খেলে। তামিম ওয়ানডেতে নির্দিষ্ট কোনও ভেন্যুর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই মাঠেই।ফাইনালের আগের দিন শিরোপা-খরার কথা জানালে কিছুটা আনমনা মাশরাফি বলেছিলেন, ‘কথাটা মনে না করিয়ে দিলেই পারতেন।’ তবে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল আগের তিন ফাইনালের হতাশা দূর করার সংকল্প। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ অর্থাৎ মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ আরও একবার হতাশ করলেন ভক্তদের।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের হতাশা কাটাতে বছরের শুরুটা ভালো করার প্রতিজ্ঞা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু লঙ্কানদের বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ আর ফাইনাল আবারও হতাশ করলো টাইগার-ভক্তদের।
মিরপুরে টাইগারদের আগের তিনটি ফাইনালও কম হতাশ করেনি। এবারের মতো ২০০৯ সালেও শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবুয়েকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সেবারও ফাইনালে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১৫২ রানে। তবে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের জন্য ‘সহজ’ লক্ষ্য কঠিন করে তুলেছিলেন টাইগারদের বোলাররা। দুরন্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে ১১৪ রানে ৮ উইকেট তুলে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কে জানতো, মুত্তিয়া মুরালিধরনের ব্যাটের তাণ্ডবে এভাবে কপাল পুড়বে!মুরালির ঘূর্ণি-জাদুতে প্রতিপক্ষের নাকাল হওয়ার কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু সেই ফাইনালে ২ উইকেট নেওয়া সর্বকালের সেরা অফস্পিনার জ্বলে উঠেছিলেন ব্যাট হাতে। ৩০ বলে প্রয়োজন ৩৫ রান—এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেনের ওপরে। রুবেলের করা ৪৬তম ওভারে ২০ রান নিয়ে মুরালিই জয়ের পথে নিয়ে যান শ্রীলঙ্কাকে। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।
তিন বছর পর আবার মিরপুরে বাংলাদেশ ফাইনালে। ২০১২ এশিয়া কাপে ভারত আর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। প্রতিপক্ষকে ২৩৬ রানে আটকে রেখে জয়ের স্বপ্নই দেখছিল স্বাগতিক দল। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান, হাতে উইকেট ৩টি। কিন্তু সেদিনও ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। মাত্র ২ রানে হেরে যাওয়ার পর সাকিবকে জড়িয়ে মুশফিকের কান্নার কথা আজও ভুলতে পারেনি ক্রিকেটপ্রেমীরা।২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনাল আবার দুঃখ দিয়েছিল বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সেবার এশিয়া কাপ ছিল ২০ ওভারের। তবে বৃষ্টির কারণে ১৫ ওভারে নেমে আসে মিরপুরের ফাইনাল। সাব্বির (২৯ বলে অপরাজিত ৩২) আর মাহমুদউল্লাহর (১৩ বলে অপরাজিত ৩৩) আক্রমণাত্মক ব্যাটিং টাইগারদের এনে দিয়েছিল ১২০ রান। শিখর ধাওয়ান (৬০) আর অধিনায়ক বিরাট কোহলির (অপরাজিত ৪১) ব্যাটে শিরোপা জিততে সমস্যা হয়নি ভারতের।
আজ শুধু মাঠের ভেতরে নয়, মাঠের বাইরে আরেকটি লড়াই ছিল বাংলাদেশের। লড়াইটা সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিপক্ষে। সেই লড়াইয়েও হেরেছে স্বাগতিকরা। হাথুরুসিংহে প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর যেন বাংলাদেশের ‘শত্রু’ হয়ে উঠেছিলেন। চারদিকে রব উঠেছিল, ‘শত্রুকে বধ করতেই হবে।’ যেন শ্রীলঙ্কা নয়, টাইগারদের প্রতিপক্ষ হাথুরুসিংহে!
হাথুরুসিংহের দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। লিগ পর্বে প্রথম লড়াইয়ে ১৬৩ রানের বিশাল জয় দিয়ে হাথুরুসিংহকে দারুণ জবাব দিয়েছিল মাশরাফির দল। কিন্তু লঙ্কানদের পাল্টা আক্রমণে মুখ থুবড়ে পড়ে স্বাগতিক দল, দ্বিতীয় লড়াইয়ে মাত্র ৮২ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়তে হয় টাইগারদের। মানে ফাইনালের আগে ১-১ সমতা।ফাইনালে সুযোগ ছিল মাশরাফিদের এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তা আর হলো কই? সাকিবের ইনজুরি ড্রেসিংরুমে নিঃসন্দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে মোহাম্মদ মিঠুনের মতো অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে ওপেনিংয়ে নামানোর সিদ্ধান্ত ‘বুমেরাং’ হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। দুর্দান্ত বোলিং করে লঙ্কানদের ২২১ রানে থামিয়ে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ-রুবেলরা। তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে মিরপুরে আবার হতাশা সঙ্গী বাংলাদেশের।