তারেক রহমান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম স্যার- মানুষকে সম্মান না দিতে পারলে অসম্মান করাটা কি ঠিক???
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী ।। ৯ জুন ‘১৮ দিবাগত রাত অর্থাৎ ভোর পৌনে একটার দিকে আমার মোবাইল ফোনের হোয়াটসআপ সংকেতটি বেজে উঠে, আমি তাকিয়ে দেখি বিএনপির ইফতার মাহফিলের দাওয়াত। একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে বিএনপি যুক্তরাজ্য কমিটির সভাপতি এম এ মালেক সাহেব ও কয়সর সাহেবের নামে দাওয়াতটি বিলি করা হচ্ছে। সেখানে লেখা আছে…
ডিয়ার জার্নালিস্ট ব্রাদার আসসালামু আলাইকুম মিডিয়া টাইম———। ইউকে বিএনপি হেজ অর্গেনাইজড এন ইফতার পার্টি এন্ড দোয়া মাহফিল। চিপ গেষ্ট দেশ নায়ক তারেক রহমান, অনারেবল স্পেসায়ল গেষ্ট মির্জ্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভেনু দ্য রয়েল রিজেন্সিী, উই ক্রয়ডলী ইনভাইটিং ইউ টু জয়েন আউয়ার ইফতার পার্টি। কাইন্ড রিগার্ডস। এম এ মালেক ও কয়সর এম আহমদ।
ক্ষমা করবেন তারেক রহমান সাহেব ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ক্ষমাই মহত্বের লক্ষন। এ মুহুর্তে লেখাটি লেখা ঠিক হচ্ছে কিনা আমি ভাবছি। কারণ আপনাদের দলের খুবই দুর্দিন যাচ্ছে এখন, আপনাদের নেত্রী জেলে। দলে নেতৃত্বের তীব্র সংকট। চারিদিকে অবিশ্বাস সন্দেহ। সরকার চায় আপনাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করে দিতে। যেমনিভাবে আপনারাও এক সময় চেয়েছিলেন আওয়ামীলীগকে শেষ করে দিতে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য দুটি রাজনৈতিক দলই চায় এক দল আরেক দলকে শেষ করে দিতে, নিশ্চিহ্ন করে দিতে। অথচ গনতন্ত্র কিন্তু সেটা বলেনা। গনতন্ত্র বলে সরকারী দল বিরোধী দল পাশাপাশি অবস্থান করবে। একে অপররের সাথে জাতীয় ব্যাপারগুলো ভাগাভাগি করে নিবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের দিনে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাসভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন, কথা বলবেন। কিন্তু এমনই একটি দেশের মানুষ আমরা এমনি একটি সমাজে আমরা বসবাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে গেলেন তাকে গেইট খুলে দেয়া হলোনা! কেউ কারো মুখ দেখতে চায়না। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশটাকে দেশের মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এমনভাবে মানুষ মানুষকে ঘৃণা করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। আচ্ছা কেন এমন হয়? আমরা কেন এত প্রতিহিংসা পরায়ন? কেন আমরা একজন আরেকজনকে দেখতে পারিনা। সমাজ ব্যবস্থা কেন দিন দিন অন্ধকারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে? একটি সমাজকে পথ তো দেখাবেন রাজনীতিবিদরা। কারণ তারাই তো দেশ কন্ট্রল করেন।
সে যাক, সমাজ যে দিকে যাবে আমিও সেদিকে যাবো এটাই নিয়ম। আমি তো আর সমাজ বদলাতে পারবোনা। কাউকে যদি বলি তুমি পরিবর্তন হও সে আমাকে আরো তিন কথা শুনিয়ে দিবে। বলবে নিজের নাই ঠিক আসেন এডভাইস দিতে।
প্রিয় তারেক রহমান সাহেব আমি এর আগে ও দু একবার আপনাকে লিখেছিলাম, লিখার পর আপনার দলের কেউ কেউ আমার লেখার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করারও চেষ্টা করেছেন। অবশ্য ব্যাক্তিগত আক্রমণ করে আমাকে লাভ নেই। কারণ আমার আওয়ামীলীগ বিএনপি থেকে চাওয়ারও কিছুই নেই পাওয়ারও কিছুই নেই। তবে দেশবাসীর প্রত্যাশা এ দুটি দলের কাছে অনেক। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যাশা করে অনেক কিছুই। স্বপ্ন দেখে মেঘের পর রৌদ্র আসবে, অন্ধাকরের পর আলো জলবে। রাত যতই গভীর হবে প্রভাত ততই রঙ্গিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রভাত রঙ্গিন হবেনা। বাংলাদেশের মানুষ লোন করে ঘি খায়। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমাদেরকে বোকা ভাবেন। দেশের এক শীর্ষ ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাস করেছিলাম দেশের লোন কত তিনি আমাকে বলেছিলেন, লোন কত সেটি বলবোনা তবে লোনের যে ইন্টারেস্ট আসে পেমেন্ট আসে সেটি আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কিছুই বলিনি। মন্তব্য নিস্প্রোয়জন।
জনাব তারেক রহমান এসব বলে লাভ নেই, আসল কথায় আসি, আপনাকে আপনার দলকে একটি কথা আজ স্বরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৪ সালে আপনি এক বক্তব্য দিয়েছিলেন সেখানে আমি বলেছিলাম আপনি আমাকে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করেছেন আপনার দলের নেতারা বলেছেন আপনি আমাকে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করেননি, আপনি আমার জ্ঞানের সীমা পরিসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আমি সেটা মেনে নিয়েছিলাম। আপনি আমার জ্ঞান নিয়ে কথা বলেছেন। বলতেই পারেন। সবার জ্ঞান সমান নয়। আপনি আমার থেকে অনেক জ্ঞানী এটা আমি অবশ্যাই মানি। আপনি দেশ চালানোর স্বপন দেখেন। আমি দেখিনা, আমি চ্যানেল আই ইউকে চালাতে পারিনা। হিমশিম খেতে হয়। আর তো দেশ?
যাই হোক আজকের লেখার কারণ হচ্ছে আপনার দলের লোকেরা যখন ইফতার মাহফিল অথবা যে কোনো অনুষ্টানের দাওয়াত অথবা নিমন্ত্রণ পত্র পাঠান তখন কি তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেননা? এবারের ইফতার মাহফিলের দাওয়াত পত্রটি আমি উপরে উল্লেখ করেছি। এটি যদি কোনো মিডিয়া হাউসে পাঠানো হয় অথবা নিউজ টিমকে বলা হয় তা–ও ধরে নিলাম ঠিক আছে সেই আমন্ত্রণ পত্রটি। কিন্তু একটি মিডিয়া হাউসের প্রধানকে অথবা সিইও অথবা ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে যখন দাওয়াত দেয়া হবে তখন তো অন্তত নামটি লিখে সেই ব্যক্তির পদবী লিখে দেয়া উচিৎ। কিন্তু তা না করে পাইকারী নিমন্ত্রণ পত্রটি পাঠিয়ে দেয়া হলো। আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। আমরা তো আপনার দলের কাছ থেকে ক্ষমতায় গেলে লাইসেন্স পারমিট অথবা টিভির লাইসেন্স চাইবোনা। এই সম্মানটুুকু কি পেতে পারিনা আমরা? আমাকে চ্যানেল আই চীপ রিপোটার রশিদ যখন জিজ্ঞাস করেছিলেন, আপনি কি যাবেন ইফতার মাহফিলে? আমি তখন সবিনয়ে তাকে বলেছি দাওয়াত পাইনি। রশীদ অবাক হয়ে বলেছিল বলেন কি উনারা তো দাওয়াত পাঠিয়েছেন রশীদকে বলেছিলাম এটা কি আমার নামে এসেছে? রশীদ বললো তাহলে আমি যাই আমার তো নিউজ করতে হবে। রশীদকে বললাম যাও। ইফতার খেয়ে আসো।
জনাব তারেক রহমান সাহেব আপনার দলের ইফতার মাহফিলের দাওয়াত আর আওয়ামীলীগের যুক্তরাজ্য কমিটির ইফতার মাহফিলের দাওয়াতের মধ্যে এত আকাশ পাতাল ব্যবধান কেন?
প্রিয় পাঠক, রমজানের আগেই যুক্তরাজ্য আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক জনাব সাজিদুর রহমান ফারুক সাহেবের ফোন, কুশালাদি জিজ্ঞাস করার পর জানতে চাইলাম ভাই আপনি তো কারণ ছাড়া ফোন করেননা। বললেন আপনার অফিসে আমরা আসতে চাই। বললাম আসুন। একদিন আসলেন ফারুক ভাই, সাথে যুক্তরাজ্য আওয়ামলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ভাই সহ অসংখ্য নেতা কর্মী। সুলতান ভাইকে দেখে আমি একটু অবাক হয়েছি কারণ রাত তখন ১২ টা , আমি ভেবেছিলাম কোনো সমস্যা হয়তো। কারণ সাংবাদিকদের সাথে আওয়ামলীগ বিএনপির প্রায়ই ছোট খাটো ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। আমি জিজ্ঞাস করি কোনে সমস্যা? বললেন না তোমাকে দেখতে এসেছি। সুলতান ভাইর সাথে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তি তর্ক হয়, সম্পর্কটা চমৎকার। বয়স হলেও ঘরে বসে থাকতে চাননা। সারাক্ষন কর্মী নেতাদের সাথে হেসে খেলে সময় কাটান। সারা জীবনের জন্য আওয়ামলীগ। আমার ভালোই লাগে। মুরুব্বী মানুষ। বিভিন্ন কথা বলার পর ফারুক ভাই বললেন, যে কারণে এসেছি সেটি আাগমী ৬ রমজান যুক্তরাজ্য আওয়ামলীগের ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত হবে আপনাকে আসতেই হবে। সুলতান ভাই বললেন, কোথাও তো যাসনা। এবার ইফতার মাহফিল মিস করলে রাগ করবো। সুলতান ভাইর জন্য মায়া হয় ভাবী মারা যাওয়ার পর সুলতান ভাই একাই চলছেন। একবার টাট্রা করে বলেছিলাম সুলতান ভাইর তো সেবার দরকার, একজন সংঙ্গীর দরকার, সে সময় উপস্থিত ছিলেন জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সুলতান ভাই টাট্রা করে বলেছিলেন গাফফার ভাই সকালে বিয়ে করলে আমি বিকেলে বিয়ে করবো।
যাই হোক, আওয়ামলীগের ইফতার মাহফিলের দাওয়াত যদি সুলতান ভাই ফারুক ভাই সহ আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতা কর্মীরা মধ্যরাতে মিডিয়া হাউসে এসে দিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনার দল যুক্তরাজ্য বিএনপি সেটি করলো না কেন? বিএনপি সহ অনেকগুলো দল বলে মিডিয়া নাকি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, কথাটি যদি আংশিক সত্য হয় তাহলে আংশিক তো ধরে নিতে হবে বিএনপি কিভাবে মিডিয়াকে হ্যান্ডল করে, বিএনপি যদি এভাবে মিডিয়াকে দাওয়াত দেয় তাহলে কি মিডিয়া যাবে সেই দাওয়াতে? আমি ব্যাক্তিগতভাবে কোনো দাওয়াতে যাইনা। না যাওয়ার কারণ আমি যে খুব বড় কিছু হয়ে গেছি তা না। রমজান আসলে আমার ডিউটি বেড়ে যায়। তা ছাড়া বয়স বেড়েছে। ইদানিং ইফতার পার্টিতে ও মহিলাদের সেলফির দৌড়াত্ব। এবার বিশেষ করে মাগরিবের নামাজের পর পরই তারাবীর নামাজের সময হয়ে যায়, কোথাও গেলে তারাবীর নামাজ মিস তাই অনেক ইফতার মাহফিলে যাওয়া হযনি। কিন্তু বিএনপি আওয়ামীলীগের ইফতার মাহফিল তো মিস করার কথা না।
মির্জ্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব লন্ডনে আসলেন আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি একটি সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা করা যায় কি-না, শুনলাম তিনি নাকি মিডিয়ায় কোনো সাক্ষাতকার দিবেননা, শুধুু তিনি তার নেতার সাথে দেখা করে চলে যাবেন। পরবর্তীতে দেখলাম তিনি বিবিসি বাংলায় সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এটি কি অন্যান্য মিডিয়াকে খাটো করেননি মির্জা ফখলুল ইসলাম আলমগীর সাহেব? বিএনপির নেতা কর্মীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন মিডিয়া বিএনপিকে সমর্থন করেনা। মিডিয়া সরকারের দালাল। আশা করি এখন থেকে বিএনপি সে অভিযোগ আর করবেনা। মির্জা সাহেব কেন লন্ডনে এসেছিলেন আমরা কেউই তা জানিনা, জানেন শুধু তারেক রহমান সাহেব————।
লেখক: সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব,সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম,ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ।
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)
More News from বাংলাদেশ
-
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হত্যা, ৩ আসামী গ্রেফতার,আসামীদের সর্বোচ্ছ শাস্তির দাবিতে মানব বন্ধন
-
গোলাপগঞ্জে আব্দুল মতিন ও ছায়া খাতুন ট্রাস্টের পক্ষে পিপিই প্রদান (ভিডিও সহ)