মাহমুদউল্লাহর শতকে বাংলাদেশের রানের পাহাড়
স্পোর্টস ডেস্কঃ প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৪০০ রান।সেই লক্ষ্যকে অনেক ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ।নেপথ্য কারিগর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫০৮ রান করেছে টাইগাররা।এতে বড় অবদান আছে সাদমান ইসলামের ৭৬,সাকিব আল হাসানের ৮০ ও লিটন দাসের দুর্দান্ত ৫৪ রানের ইনিংসের।এ নিয়ে নবমবারের মতো ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে ৫০০ রান করল বাংলাদেশ।ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার।
প্রথম দিনের ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশ।সাকিব ৫৫ ও মাহমুদউল্লাহ ৩১ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন।প্রথম ইনিংসে ৪০০ করতে পারলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যাবে।সেই প্রত্যয় নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন তারা। ধীরে ধীরে সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল টাইগাররা।দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ব্যাটিং স্তম্ভ।স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব।দারুণ খেলছিলেন তিনি।রীতিমতো প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসাচ্ছিলেন।তবে হঠাৎই খেই হারান।কেমার রোচের বলে গালিতে শাই হোপকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্বাগতিক অধিনায়ক।ফেরার আগে ৬ চারে ৮০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি।তাতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ভাঙে তার ১১১ রানের জুটি।
সকালে দ্রুত ফিরেছিলেন সাকিব।তবে তার বিদায়ের প্রভাব বিন্দুমাত্র টের পেতে দেননি লিটন দাস।স্বাচ্ছন্দে খেলেন তিনি।সোজা ব্যাট চালান।তবে প্রথমবারের মতো পরাস্ত হতেই সাজঘরে ফেরেন দারুণ খেলতে থাকা এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ফেরেন তিনি।ফেরার আগে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন লিটন।ওয়ানডে স্টাইলে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলে ৫৪ রানে ফেরেন তিনি।এর ৩৮ রানই আসে চার (৮টি) ও ছক্কা (১টি) থেকে।
লিটনের পর ক্রিজে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ।সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতেও আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।স্বাভাবিকভাবেই তার ওপর এদিনও প্রত্যাশা ছিল দলের।তবে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ব্যক্তিগত ১৮ রানে ফেরেন তিনি।প্রথমে অবশ্য আউট দেননি আম্পায়ার।পরে ক্যারিবিয়ানরা রিভিউ নিলে তাদের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক প্রমাণ হলে আঙুল উঁচু করতে বাধ্য হন আলিম দার।একে একে স্বীকৃত সব ব্যাটসম্যান ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান মাহমুদউল্লাহ।ক্রিজে এসে তাকে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকেন তাইজুল।এতে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান তিনি। রোস্টন চেজকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন মিস্টার কুল।মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এ ইনিংস খেলার পথে ৬টি চার মারেন মিস্টার কুল।এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি।
মাহমুদউল্লাহ প্রথম সেঞ্চুরি করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে।এরপর এ ফরম্যাটে ভীষণ রানখরায় ভোগেন তিনি।দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেতে আট বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় তাকে।গেল মাসের মাঝামাঝিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরেই তিন অংক স্পর্শ করেন এ মিডলঅর্ডার।তিন সপ্তাহ না পার হতেই একই ভেন্যুতে ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান তিনি।স্বাভাবিকভাবেই তাইজুলের সঙ্গে অসাধারণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে মাহমুদউল্লাহর।তাতে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে বাংলাদেশ।তবে সহ-অধিনায়কের শতকের পর হঠাৎই মেজাজ হারান তাইজুল।ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে কানায় লাগিয়ে শান ডাওরিচকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি।ফেরার আগে সতীর্থকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দিয়ে করেন ২৬ রান।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও।শেষদিকে ঝড় তোলেন তিনি।এর খেসারত গুনে ওয়ারিক্যানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।ফেরার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারসেরা সর্বোচ্চ ১৩৬ রান করেন সাকিবের ডেপুটি।২৪২ বলে ১০ চারে এ ইনিংস সাজান তিনি।এর আগে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১১৫।২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ রান করেন তিনি।১২ রানে অপরাজিত থাকেন নাঈম হাসান।ক্যারিবীয়দের হয়ে কেমার রোচ,দেবেন্দ্র বিশু,জোমেল ওয়ারিক্যান ও ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট-প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট।