গণহত্যায় অভিযুক্ত হতে পারে মিয়ানমার: ইউএনসিএইচআর
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেছেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে মিয়ানমারের বাহিনী।
জেনেভায় বাংলাদেশের আহ্বান করা মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বিশেষ সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসেইন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ামারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরও এখনো দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে।
কোনো দেশ, জাতি, নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গ্রুপকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার জন্য সে ধরনের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এ ধরনের ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার খুব বেশি নজির না থাকলেও বসনিয়া, সুদান ও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেস্টের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেইদ রাদ আল-হুসেইন বলেছেন, সহিংসতার মুখে আগস্ট মাস থেকে যে ৬ লাখ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের একজনকেও ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের ফিরে যাওয়ার বাস্তবতা নিয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ না করা হচ্ছে।জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হতিন লিন সভায় বলেছেন, দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সরকার কাজ করছে। দুই দেশের সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের শর্তগুলো চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। তিনি আরো বলেছেন, কোনো আশ্রয়শিবির থাকবে না।
জেইদ রাদ আল-হুসেইন এর আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধনের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ করেছে।
মঙ্গলবারের বিশেষ সভায় জাতিসংঘের এই শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ভয়ংকর বর্বরতা সম্পর্কে বর্ণনা দেন। বাড়িতে আগুন দিয়ে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারা, শিশু ও বয়স্কদের হত্যা, প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নির্বিচার গুলি করে হত্যা, নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ-গণধর্ষণ এবং ঘরবাড়ি-স্কুল-বাজার ও মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
৪৭ সদস্য দেশের এই ফোরামে তিনি বলেন, ‘এসব উপাদান গণহত্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে না, তা অস্বীকার করতে কেউ কি পারে- যে কেউ?’ তবে তার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লিন।তিনি দাবি করেন, উদ্বাস্তুদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে তার সরকার প্রস্তুত। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করে তাদের উদ্বাস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘কোনো আশ্রয়শিবির থাকবে না।’ অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে, আশ্রয়শিবিরে রাখা হবে না।নভেম্বর মাসের মধ্যেই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। মঙ্গলবার মিয়ানমার জানালো, গ্রুপ গঠনের শর্তগুলো চূড়ান্ত করার কাজ এখনো চলছে।রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মিয়ানমার সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময়ও বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স অনলাইন