উত্তাল ফিলিস্তিন, বিক্ষোভ দমনে গুলিবর্ষণ ইসরায়েলি বাহিনীর, আহত শতাধিক
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ প্রতিরোধের আগুনে জ্বলছে ফিলিস্তিন। জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির ঘোষণায় ফুঁসে উঠেছে সেখানকার জনগণ। শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনী। আহত হন শতাধিক বিক্ষোভকারী। ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে এই প্রতিরোধ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও।
জুমা’র নামাজকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের আশঙ্কায় ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিল। এজন্য পশ্চিম তীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। তবে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায়ে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
এর আগে সকালে তেল আবিব থেকে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর অভিমুখী বেশকিছু যানবাহনে পাথর নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া শুক্রবার থেকে নতুন ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাস।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে জুমা’র নামাজের পর বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
বুধবার ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় নেমে আসেন। তখন থেকেই আন্দোলন বড় আকার ধারণ করতে থাকে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি আহত হন।
শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বে এইল সেনাঘাঁটি অভিমুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শত শত ফিলিস্তিনি। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।
পশ্চিম তীরের হেবরন, বেথেলহেম, নেবুলাস, তুলকার্ম, কালকিলিয়া ও জেরিকো শহরে ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর।
জেরুজালেমে শত শত ফিলিস্তিনি আল আকসা মসজিদ থেকে দামেস্ক গেট অভিমুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। জেরুজালেম ইসলামিক পরিচয় বহন করে বলে স্লোগানও দেন তারা। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি পুলিশ।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সহিংসতার কেন্দ্রে ছিল জেরুজালেম। ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা, তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। কিন্তু শহরটিকে ইসরায়েলি রাজধানী ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে তারা।
জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপে সহিসংতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্বনেতারা। তবে এসব উপেক্ষা করেই বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই ঘোষণার প্রতিবাদ ও নিন্দায় মুখর হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো জোট। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও।
এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মুসলিম বিশ্বে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দেন। তুরস্ক, জর্ডান, লেবানন, মিসর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নেমে এসেছে হাজারো মানুষ। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ইসরায়েলের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেন। মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা। জর্ডান, পাকিস্তান, তিউনিসিয়া, লেবাননেও একই রকম বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে এবং ট্রাম্পের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার মানুষ। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা।