ভুয়া খবর মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে নতুন গোয়েন্দা ইউনিট চালু
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যে নতুন একটি গোয়েন্দা ইউনিট চালু করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিউনিকেশন্স ইউনিট’। অন্য দেশ বা ব্যক্তিগতভাবে কেউ যেন বিভ্রান্তি তৈরির লক্ষ্যে ভুল তথ্য ছড়াতে না পারে সে লক্ষ্যেও কাজ করবে এ সংস্থা।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা ভুয়া খবরের যুগে বাস করছি। সরকার এ ব্যাপারে আরও বেশি সাড়া দেবে। এই আন্তঃসংযুক্ত, জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তা যোগাযোগের আরও ভালো ব্যবহার করা হবে।’
তিনি বলেন, এটা করার জন্য আমাদের বিদ্যমান সক্ষমতার ভিত্তিতে আমরা একটি নিবেদিত জাতীয় নিরাপত্তা যোগাযোগ ইউনিট তৈরি করবো। এটা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কুশীলব ও অন্যদের ছড়ানো ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লন্ডনের ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরও পদ্ধতিগতভাবে প্রতিপক্ষকে বিরক্ত করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন এই ইউনিটের নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ দফতর। সরকারের অভ্যন্তরে একটি দল গঠন করা হবে যা নিরাপত্তা সংক্রান্ত যোগাযোগের পাশাপাশি বাইরের পেশাদারদেরও এতে যুক্ত করবে। তবে সংস্থাটির প্রকৃত কাঠামো এবং কর্মীদের বিস্তারিত বিবরণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের সরকারি যোগাযোগ পরিষেবা (জিসিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক অ্যালেক্স আইকিন তার সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। এতে অ্যালেক্স আইকিন বলেন, ‘ভুল তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার সক্ষমতার বিপরীতে বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্রুত এটি মোকাবিলায় সাড়া দেবে-এমন একটি সংস্থা তৈরিতে তিনি আগ্রহী।
ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন এই ইউনিট দেশের প্রতিরক্ষা দক্ষতার একটি বৃহত্তর পর্যালোচনার অংশ। এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদের ছড়াছড়ি, এর উৎস ও প্রভাব জানতে একটি পার্লামেন্টারি তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। হাউস অব কমন্স মনে করে, এসব প্রচারণা ও বানোয়াট খবর জনগণকে বিভ্রান্ত করছে; যা উদ্বেগজনক।
হাউস অব কমন্স-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, মিথ্যা খবরের ছড়াছড়ি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এতে মিডিয়ার প্রতি আস্থার জায়গাটি নষ্ট হয়। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন অনলাইন পাইরেসি ও অবৈধভাবে কনটেন্ট ভাগাভাগির বিরুদ্ধে লড়াইকে নিজেদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে মেনে নিয়েছে তখন ভুয়া সংবাদের ছড়াছড়ি বন্ধেও তাদের সহায়তা দরকার। অনলাইন পাঠকদের কাছে এমন উপকরণ পৌঁছে দেওয়া উচিত যা দিয়ে তারা কোনও সংবাদের মূল ও সত্যতা নিজেরাই বের করতে পারবে।
ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিউনিকেশন্স ইউনিট’ দেশের প্রতিরক্ষা দক্ষতার একটি বৃহত্তর পর্যালোচনার অংশ। ব্রিটিশ সরকারের এই পর্যালোচনাকে প্রতিরক্ষা কর্মসূচির আধুনিকায়ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় ১০ বছরের একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া ২০২৫ সালে জয়েন্ট ফোর্স নামে আরেকটি সমান্তরাল কর্মসূচি নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভুয়া খবর ছড়ানোর বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। কেননা, তখন পোপ সংক্রান্ত বানোয়াট সংবাদসহ বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদগুলো সামাজিক যোগাযোগর মাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছিল। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে যেসব বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো তিন কোটি বারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে।