হাসপাতালের বিল ছাড় শিশুটির প্রাণের বিনিময়ে!
নিউজ ডেস্কঃ গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা অব্যবস্থাপনায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি নবজাতকের বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোনো বিল নিচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে নবজাতকের বাবা আদনান নান্দারেজ ফয়সাল মন্তব্য করেন, নবজাতকের প্রাণের বিনিময়ে হাসপাতালের বিল ছাড় হয়েছে।
রোববার ওই হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তাদের প্রথম সন্তান মারা যায় বলে জানান ফয়সাল।
নবজাতকের বাবা ফয়সাল অভিযোগ করে বলেন, গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে তার স্ত্রী আলতাফুন্নাহারকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করান। তারা নবম তলার ৫১৯ নম্বর কেবিনে ওঠেন। ওইদিনই সকালের দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ডাক্তার জানায়, পরিপক্ক হওয়ার এক মাস আগেই বাচ্চাটি ভূমিষ্ট হয়েছে। এজন্য তার পায়ুপথসহ হজমের জায়গায় অপারেশন করতে হবে।
শুক্রবার রাতেই অপারেশন করা হয় ওই বাচ্চার। এরপর বাচ্চার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে যায়। কিন্তু গতকাল শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বাচ্চার শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়। সিস্টেম অনুযায়ী কেবিনের কলিং বেল দিলেও কেউ সাড়া দেননি। এরপর ওয়ার্ড রিসিপশনে গিয়ে দেখা যায় যে, কজন নার্স দায়িত্বে ছিলেন তাদের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। কোনো ডাক্তার ছিলেন না। সারারাত ডাকাডাকি করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগটা আসলে কার কাছে করব, সেই ব্যক্তিটাই তো ছিলেন না। রোববার সকালে ডিউটি ডাক্তার এসে কি যেন করলেন। সেটাও সকাল ৮টার দিকে। এরপর বাচ্চার অপারেশন করতে হবে বলে ওনারা নিয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে এসে বলেন আপনাদের বাচ্চা মারা গেছেন।
এ বিষয়ে ফয়সালের আত্মীয় সালেহীন বলেন, একটা কথা এখানে স্পষ্ট যে, চিকিৎসায় অবহেলাতেই বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে। কারণ এখানে ডাক্তার ও নার্স কেউ ছিলেন না। যারা ছিলেন তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। প্রাইভেট হাসপাতালে বিশাল অংকের টাকা খরচ করে মানুষ কেন আসে? এরপর ডাক্তারের পেছনে পেছনে ঘুরলেও তারা অপারেশনের নাম করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করালেন। তারপর মৃত্যুর কথা বললেন।
দুপুরে নবজাতকের মৃত্যুর কথা শুনে ছুটে আসেন আত্মীয় স্বজনরা। তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা সময় থমকে যায়। দোষ চাপানো হয় একে অপরের ওপর। তবে হাসপাতালের উপ পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) ডা. আবদুর রহমান এসে শিশুটির আত্মীয় স্বজনদের ডেকে দোষ স্বীকার করে সরি বলেন।
এ ব্যাপারে উপ-পরিচালক ডা. আবদুর রহমান বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ গাফিলতি ছিল। ডাক্তার ও নার্সরা রাতে ডিউটির পরিবর্তে ঘুমায়। চিকিৎসায় যে অবহেলা হয়েছে তা আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা ওনাদের সঙ্গে বসেছি। ওনাদের কাছে সরি বলেছি। আসলে সরি বলে তো ওনাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যাবে না। এরপরেও আগামীতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে দেখা হবে।
আর হাসপাতালের ম্যানেজার (অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচআর) মো. সোহরাব আলী বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আর ওনাদের যত বিল হয়েছে তা নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘প্রাণের বিনিময়ে কি বিল পরিশোধ’ জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, না তেমনটা নয়। মানবিকতার খাতিরেই বিল নেওয়া হচ্ছে না। প্রাণ তো নাই, তাই টাকা নিয়ে কী হবে, এ রকম আর কি।
‘শিশুটির প্রাণের বিনিময়েই হাসপাতালের বিল ছাড়!’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একরকম মেনেই নিয়েছেন। আপনিও কি মানছেন জানতে চাইলে শিশুটির বাবা বলেন, ওনারা বিলের কপিটাই তো দিচ্ছেন না। তবে টাকা দেব কী করে। ওনারা সরি বলেছেন, আমরা মেনে নিয়েছি। এর বিনিময়ে বিল পরিশোধ করব না, তা তো হতে পারে না। আমরা বিল পরিশোধ করতে চাই। আর ওনারা বিল না নিলে ঘটনাটি অনেকটা আপনার প্রশ্নের মতোই হবে।