জেরেমি করবিন বা লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে চেনেন না ট্রাম্প, টুইট করেন বিছানায় শুয়ে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বৃটেনে বিরোধী লেবার দলনেতা জেরেমি করবিন বা লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে ‘চেনেন না’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাধারণত সকালে নাস্তা করার সময়, মধ্যাহ্নভোজের সময় আবার কখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে টুইট করেন। লন্ডনের ডেইলি মেইল অনলাইনের সম্পাদক পিয়ার্স মরগানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাকে ঘিরে লন্ডনে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সমালোচনায় মুখর হলেও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বৃটেনে ‘ভেরি পপুলার’ বা খুবই জনপ্রিয়। অন্যদিকে এ বছরের শেষের দিকে তার লন্ডন সফরে আসার কথা রয়েছে। তার প্রতিবাদে বৃটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ প্রতিবাদের ডাক দেয়া হয়েছে।
তাতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে সেলিব্রেটি, রাজনীতিক ও অধিকার বিষয়ক কর্মীদের। এসব খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। পিয়ার্স মরগানকে দেয়া সাক্ষাতকার হলো ট্রাম্পের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টেলিভিশন সাক্ষাতকার। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে যান ট্রাম্প। সেখানে আইটিভির জন্য ওই সাক্ষাতকার ধারণ করেন মরগারন। এতে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি আপনার দেশে আমি খুবই জনপ্রিয়। বৃটিশ জনগণের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক ভক্তের মেইল বা চিঠি পাই। নিরাপত্তা নিয়ে আমার যে সেন্স বা অনুভূতি তারা তা ভালবাসেন। আমি অনেক ভিন্ন রকম কথা বলি। বৃটিশ জনগণের পক্ষ থেকে আমরা অভূতপূর্ব সমর্থন পাই। উল্লেখ্য, ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষুরধার সমালোচক বৃটিশ লেবার দলনেতা জেরেমি করবিন ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। সাক্ষাতকারে তাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন পিয়ার্স মরগান। জবাবে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি এসব লোককে চিনি না। টুইট করা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত আমি বিছানায় থাকতেই টুইট করি। কখনো কখনো নাস্তা ও মধ্যাহ্নভোজের সময় টুইট করি। বিশেষ করে খুব সকালে আমি এটা করি। তারপর দিনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কখনো কখনো আমার লোকজনকে নির্দেশনা দিই। এই সাক্ষাতকারেই ট্রাম্প জানান, তার মা মেরি জন্মেছিলেন স্কটল্যান্ডে। এবং ট্রাম্প নিজে বৃটেনকে ভালবাসেন। ট্রাম্পের ভাষায়, আমার বাস্তবতা হলো আমি এমন একজন যিনি বৃটেনকে ভালবাসেন। যুক্তরাজ্যকে ভালভাসেন। আমি স্কটল্যান্ডকে ভালবাসি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমি খুব ঘন ঘন এসব স্থানে যেতে পারি না। এসব দেশে যেতে পারলে আমি খুশি হবো। এরপরেই পিয়ার্স মরগান তুলে আনেন জেরেমি করবিন ও সাদিক খানের ইস্যু। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের সঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘ সময় ধরে ঘোর বিরোধিতা চলছে। গত বছর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ও লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ হামলায় লন্ডনের মেয়রের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেন। তাতে লেখেন, সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ৭ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। তারপরও লন্ডনের মেয়র বলছেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সাক্ষাতকারে ডনাল্ড ট্রাম্পের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও কথা ওঠে। এতে তিনি নিজের খাদ্যাভ্যাসের পক্ষে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি ফাস্ট ফুডের অভ্যাস থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, না। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে চাই না। আমি ভাল খাবার খাই। বিশ্বের সেরা শেফদের হাতে তৈরি এসব খাবার। আমি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। মাঝে মাঝেই আমার এসব ফাস্টফুড দরকার হয়। আমি মনে করি প্রকৃতপক্ষেই ভাল খাবার খাই আমি।
এই সাক্ষাতকারে ডনাল্ড ট্রাম্প তার বৃটেন সফর নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষি।ট করেছেন। গত বছর ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে বৃটেন সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে সেই সফর হতে পারে। কিন্তু তার সফর নিয়ে বৃটেনে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে। এরই মধ্যে তার ওই সফরের বিরোধিতা করে ফেসবুকে একটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ট্রাম্প বিরোধী জোট। তারা লন্ডনের ইতিহাসে নতুন ইতিহাস রচনা করতে চাইছে। ২০০৩ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে পদচ্যুত করার প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভের চেয়েও বড় বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি চলছে। এতে সাড়ে সাত লাখ থেকে ১০ লাখ মানুষ যোগ দেবে বলে আয়োজকরা মনে করছেন। এ বিক্ষোভের সঙ্গে রয়েছেন টটেনহ্যামের এমপি ডেভিড ল্যামি, ওয়ালথামস্টো’র এমপি স্টেলা ক্রেসি, স্টিফেন ফ্রাই, অধিকারকর্মী পল ম্যাসন প্রমুখ। সমর্থন দিয়েছেন ক্লাসিস্ট মেরি বিয়ার্ড, কৌতুক অভিনেতা ডেভিড বাডিয়েল।