ব্রিটিশ এমপিদের ভিসা আটকে দেওয়ায় মিয়ানমারের তীব্র সমালোচনা

নিউজ ডেস্ক,যুক্তরাজ্যঃ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ব্রিটিশ এমপিদের মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি না মেলায় মিয়ানমারের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য। প্রাক্তন এই উপনিবেশকে বার্মা সম্বোধন করে ব্রিটিশরা। পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যদের মিয়ানমারের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ ও ‘হতাশাব্যঞ্জক’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। অতীতের ধারাবাহিকতায় স্থানীয়দের রোহিঙ্গা-বিদ্বেষী করে তুলতে সেখানে সেনা-প্রচারণা চালানো হয়েছে এবারের নিধনযজ্ঞেও। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্থানীয়দের রোহিঙ্গা-বিদ্বেষী মনোভাবের কথা সামনে আনার চেষ্টা করা হয়। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সমাজের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর ছড়িয়ে দেওয়া বিদ্বেষকেই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছে।

রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার মধ্যে রাখাইন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি। সফরে দেশটির ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’সহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও মিয়ানমারে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা প্রকল্পের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন যুক্তরাজ্যের এমপিরা। তবে ১ মার্চ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের খবরে জানা যায়, তাদের মিয়ানমার সফরের অনুমতি মেলেনি। ওই এমপিরা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ার ও লেবার পার্টির এমপি স্টিফেন টুইগ জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের বার্মিজ দূতাবাস তাদের ভিসা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। আমরা কি করে অবিশ্বাস করি, এই ঘটনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের প্রতিবেদনের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া নয়? এই কারণেই নেপিদোতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিসহ সেদেশের মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকগুলো বাতিল করতে হয়েছে।’

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় বার্মিজ কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল একই প্রতিনিধিদল। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়নের সময় যৌন সহিংসতার প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরেছিলেন ব্রিটিশ এমপিরা। জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই কমিটি। ব্রিটিশ এমপিরা বলছেন, মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডে ‘মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়’ তৈরি হয়েছে। আর তা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ব্রিটিশ এমপিদের প্রতি ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড হাউস অব কমন্সে বলেন, ‘ব্রিটিশ এমপিদের মিয়ানমার সফরের অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে বার্মিজ কর্তৃপক্ষ তিনটি কারণকে ইঙ্গিত করেছে: প্রথমত, মিয়ানমারে বর্ধিত সরকারি ছুটি চলছিলো, দ্বিতীয়ত নিরাপত্তাজনিত কারণে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশে কড়াকড়ি বজায় ছিল এবং তৃতীয়ত রাখাইনের ঘটনায় বার্মিজ সেনা সদস্যদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ জেনারেলকে চিঠি লিখেছিল।’

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x