আবারও আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলিদের হানা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,জেরুজালেমঃ জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র আল আকসা মসজিদে ঢুকে পড়েছেন শত শত ইহুদি। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ভারী অস্ত্রসজ্জিত ইসরাইলি বিশেষ বাহিনীর সেনারা। রবিবার থেকে এ পর্যন্ত ধর্মীয় স্থাপনাটিতে এ পর্যন্ত ১৭৩১ জন ইহুদি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।অবৈধ দখলদার ইসরাইলিরা তাদের প্যাসওভার দিবস উদযাপন করতে মুসলিমদের প্রথম কেবলা মসজিদ আল আকসায় অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।গত রবিবার থেকে এই অনুপ্রবেশ শুরু হলেও বৃহস্পতিবার ভোরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ইহুদিকে নিয়ে ইসরাইলি সেনারা আল আকসায় ঢুকে পড়ে। তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনি তরুণরা। কিন্তু ইসরাইলি সেনারা কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ও তাজা গুলি নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে অন্তত ৫০০ অবৈধ দখলদার মসজিদের ভেতরে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর তারা কুব্বত আসসাখরার পাশে ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন।
ফিলিস্তিনের ধর্মীয় অভিভাবক পরিষদের (রিলিজিয়াস এন্ডোওমেন্টস অথরিটি) মুখপাত্র ফিরাস আল দিব জানান, বৃহস্পতিবার অন্তত ৪৯১ অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইহুদি ও ভারী অস্ত্র সজ্জিত ইসরাইলের বিশেষ বাহিনীর ১৩ কর্মকর্তা মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েন।এ নিয়ে গত রবিবার থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৩১ জন দখলদার ইহুদি অবৈধভাবে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছেন। তাদের এই অনুপ্রবেশে ফিলিস্তিনিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের আশঙ্কা, কট্টরপন্থী ইহুদিরা মসজিদুল আকসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করতে পারেন।ইহুদিদের দাবি, ওই পবিত্র স্থানে বাইবালে উল্লিখিত তাদের ধর্মীয় নেতা জোসেফকে কবর দেয়া হয়েছে। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, জোসেফ হলেন হযরত ইউসুফ (আ)। মুসলমানদের কাছে তিনি একজন সম্মানিত নবী।তবে ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, জালজালিয়াতির জন্য কীর্তিমান ইহুদিরা আসলে মুসলিম ধর্মীয় নেতা শেখ ইউসুফ দায়িকতের কবরকে ইউসুফ নবীর কবর দাবি করেছেন। আর এই দাবির নেপথ্যে রয়েছে আল আকাসার ওপর তাদের ভুয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার মতলব।প্রসঙ্গত, আল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে- ইসলামের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রাসূলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। ২০১৬ সালে এই ধর্মীয় স্থাপনাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূলের মাজার। আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরও একটি বড় কারণ হলো প্রথম থেকে হিজরত পরবর্তী ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা আল আকসা মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়।মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে পরিচিত এ মসজিদটি পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত। আল আকসা মসজিদের অর্থ হচ্ছে- দূরবর্তী মসজিদ। মসজিদটির অপর নাম ‘বায়তুল মুকাদ্দাস।’
সূত্র: আল জাজিরা