বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিবাসন নীতি পাল্টালেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,যুক্তরাষ্ট্রঃ মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।সাধারণ জনগণ ও নিজ দলেরই রাজনীতিবিদদের প্রবল চাপ ও প্রতিরোধের মুখে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন ট্রাম্প।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।প্রতিবেদনে বলা হয়,পরিবারকে একত্রিত রাখতে’ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প।অভিবাসন প্রত্যাশী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করার পর সাবেক ও বর্তমান ফার্স্ট লেডি, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট নেতাসহ নির্বিশেষে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। ফুঁসে ওঠেন সাধারন মার্কিনিরা।দেশের বাইরেও ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ও কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ অনেকেই সমালোচনা করেন।

মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুখতে সম্প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন,তিনি নতুন কোনও অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেননি।বিগত ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের নেওয়া নীতি মেনেই মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।অবশ্য অবৈধ অভিবাসীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতেও দেখা গেছে।তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সে সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। অতীতে দেখা গেছে, যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না, তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি।

পূর্বে ট্রাম্পকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাওয়া রিপাবলিকানরাও শিশুদের কান্না ও বন্দিত্বের ছবি দেখে নড়েচড়ে বসে। নীতির বিরোধিতা করেন সাধারণ মার্কিনিরা।ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে ফার্স্টলেডিদের মধ্যে ৫ জন ট্রাম্পের এই বিচ্ছিন্নকরণ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন।এছাড়া ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেন,পপুলিজম বা লোকরঞ্জনবাদ অভিবাসী সমস্যার সমাধান নয়।এরপর বুধবার নিজের অব্স্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন ট্রাম্প।তবে তিনি দাবি করেন,বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুদের কান্নার ছবি দেখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।তবে তার নির্বাহী আদেশের মধ্যে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি।মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা বলেছেন,৫ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ২০৬ জন বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ জন শিশুকে। বুধবার ট্রাম্প দাবি করেন,পরিবারকে এক রাখতে চাই আমরা। আলাদা রাখার দৃশ্য আমার ভালো লাগেনি।’ ট্রাম্প বলেন, তার স্ত্রী মেলানিয়া ও মেয়ে ইভাঙ্কা তার ওপর এই নীতি থেকে সরে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় হৃদয়সম্পন্ন যেকোনও মানুষ বিষয়টি অনুভব করবে।

তবে অভিবাসন নিয়ে নিজের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ছিল যতদিন মামলা চলবে আটককৃত অভিবাসন প্রত্যাশী পরিবারগুলো একসঙ্গে থাকতে পারবে।অভিবাসন মামলার ক্ষেত্রে পরিবারকে একসঙ্গেই রাখা হবে।শিশুরা কতদিন আটক থাকবেন সেই বিষয়ে আদালতের রায়ের সংস্কারের অনুরোধ করা হয়েছেনির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করার সময় উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী কার্সটেন নিলসেন। রিপাবলিকান কংগ্রেস নেতা পল রায়ান বলেছেন তারা বৃহস্পতিবার ভোটের মাধ্যমে একটি আইন পাশ করবেন। এতে করে পরিবার একসঙ্গে থাকতে পারবে। তবে এর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x