আসাদের রক্তভেজা শার্ট আদর্শের পতাকা হলেও হুমায়ুন আজাদ ও মাহমুদুর রহমানের রক্তভেজা শার্ট আদর্শের পতাকা নয়!!!

রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী।। গত রবিবার লন্ডন সময় ভোর তিনটা মোবাইল ফোন অফ করে বেডে যাবো এমনি সময় বিকট শব্দে আমার ফোনটি বেজে উঠে। আমার স্ত্রী তখন নিদ্রাদেবীর আরাধানায় লিপ্ত। আমি ফোনটি রিসিভ করে রুমের বাইরে চলে আসি। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে মহিলা কন্ঠ। ভারী মিষ্টি গলা। কেমন আছেন ফয়সল ভাই? বললাম ভালো। বললেন এত রাতে ফোন করেছি আশা করি মাইন্ড করবেননা। বললাম বলুন। কাজে ফোন করেছি। মাহমুদুর রহমান সাহেবকে যে ভাবে আদালত প্রাঙ্গনে মারা হয়েছে তা কি দেখেছেন? বললাম ফেইসবুকে দেখেছি। বললেন আপনি তো লেখালেখি করেন, লিখছেননা কেন? বললাম কি লাভ ওসব লিখে? মিষ্টি কন্ঠের মহিলা বিগড়ে গেলেন, বললেন আপনারা তো আওয়ামীপন্থী লেখক সাংবাদিক, বলে তিনি আচ্ছামত আমাকে ধোলাই দিলেন। এদিকে আমার স্ত্রী মহিলা কন্ঠ শুনে ঘুম টুম ছেড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে, আমি খেয়ালই করিনি। ভাগ্যিস মহিলা ঝগড়াটে টাইপের ছিলেন, মিষ্টি গলা থেকে মুহুর্তেই কর্কস কন্ঠে কথা বলা শুরু করেছিলেন। আমি বললাম দেখি কি করা যায় বলে কথা শেষ কররো, মহিলা বললেন আপনি কি ফোন রেখে দিবেন, বলেছিলাম জি রেখে দিব, এত রাতে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। আর দয়া করে ভবিষ্যতে এত রাতে ফোন না করলে খুশী হবো। বলে লাইনটি ছেড়ে দেই। লাইন ছেড়ে দেয়ার পর আমার স্ত্রীর প্রশ্নের পালা, কে এই মহিলা? বললাম চিনিনা, জানিনা, এত রাতে ফোন করে দেশের এক সম্পাদককে শারীরীকভাবে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বলে আমাকে বলছে লিখার জন্য। স্ত্রী বললেন নিশ্চয়ই তুমি তাকে চিনো। বললাম চিনিনা, চলো এখন ঘুমাই। সকালে কথা বলবো, স্ত্রী ঘুমাতে চায়না। কে এই মহিলা তাকে বলতে হবে। শেষ পর্যন্ত ন্ত্রীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বেডে গেলাম। তারপরও স্ত্রী বললো আমি আজ যদি আমার বাবার বাড়ী বেড়াতে যেতাম বাসায় না থাকতাম তাহলে তুমি এই মহিলার সাথে ছুটিয়ে অনেকক্ষন কথা বলতে। তোমাকে আমি চিনি। এক সময় রাগ করতাম স্ত্রীর এসব কথায় এখন আর করিনা। সব স্ত্রীরা একই রকম। স্বামী কিছু করলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। স্ত্রীর যন্ত্রনায় কোনো অনুষ্টানে গেলে মহিলাদের সাথে ছবি তুলা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ভেবে পাইনা দেশের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রিধারী পড়া লেখা জানা মহিলারা স্বামীর ব্যাপারে এত ছোট মন মানসিকতা নিয়ে বেচে আছে কি করে? আমাকে খুবই কষ্ট দেয়, আমাকে মাঝে মধ্যে বিষয়টি ভাবায়!
সে যাক, সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবছি মাহমুদুর রহমান সাহেবকে নিয়ে লিখবো কি-না? কারন মাহমুদুর রহমান সাহেবকে নিয়ে লিখলে সরকারের হাইকমান্ড রাগ করে কিনা? বিবিসি বাংলার সিরাজুর রহমান সাহেব মারা যাওয়ার পর আমি একুশে গানের রচিয়তা জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরী সাহেবকে প্রস্তাব করেছিলাম লন্ডনে তার মৃত্যুতে নাগরিক শোক সভার আয়োজন করলে তিনি সেখানে অতিথি হিসেবে যোগ-দিতে কোনো সমস্যা আছে কি? জবাবে গাফফার ভাই বলেছিলেন আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড তার উপর নাখোশ হতে পারে। তারপরও তিনি বলেছিলেন আমাকে জানাবেন। আর জানানো হয়নি, নাগরিক শোকসভাও এখন পর্যন্ত হয়নি।

ঢাকায় যখন যাই তখন আসাদ গেটের সামনে গাড়ী থামলে আমি থাকাই। কারন আসাদের রক্তভেজা শার্ট এক সময় ছিল ছাত্র সমাজের আদর্শের পতাকা। আজ দিন বদলে গেছে। আজ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে দেশ বেসমাল! নেতারা সন্ত্রাসী লালন করেন পালন করেন, কেউ রগ কাটে কেউ বা হাতুড়ী দিয়ে পেটায়, কেউ কেউ আবার চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে পথের কাটা সরিয়ে দেয়! অথচ এ রকম তো হওয়ার কথা ছিলনা একটি দেশের রাজনীতিতে, গনতন্ত্রে মতের অমিল থাকবেই, মত পার্থক্য থাকবেই, তাই বলে ভিন্নমতকে আপনি সরিয়ে দিবেন? এ কেমন রাজনীতি-রে বাবা? কারা জন্ম দিয়েছে এ প্রতিহিংসার রাজনীতি? “এ পাপ আমার এ পাপ তোমার“ কথাটি মোটেই মিথ্যা নয়। মাহমুদুর রহমান সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ঘটেছিল ২০০৯/১০ এর দিকে, তখন তিনি লন্ডনে এসেছিলেন। আমার দেশের লন্ডন প্রতিনিধি এবং লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা পোষ্টের সম্পাদক তারেক চৌধুরী পূর্ব লন্ডনের ক্যাফে-গ্রীল রেষ্টুরেন্টে মাহমুদুর রহমান সাহেবের সম্মানে আয়োজন করেছিলেন লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের। মত বিনিময় শেষে আমরা যখন রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়েছিলাম তখন কে বা কারা মাহমুুদুর রহমান সাহেবকে ছুরিকাহত করে, ভাগ্যিস তার পড়নে যে স্যুট ছিল সে স্যুট বিদ্ধ করে ছুরি শরীরে আঘাত করেনি। ঘটনাটি ঘটেছিল আমাদের অনেকের সামনে। সবাই কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন, আমার রাগই উঠেছিল। সবাই তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দ্রত মাহমুদুর রহমান সাহেবকে পূর্ব লন্ডন থেকে সরিয়ে নিতে। বিএনপির মহাসচিব মির্জ্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ছিলেন লন্ডনে, তিনি ও দ্রত ঘটনাস্থলে পৌছে ঐ হামলার প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি তখন ব্রিটবাংলা নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলাম লন্ডন থেকে। ব্রিট বাংলা কর্তপক্ষের সাথে ঐ রাতেই এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হওয়ার কথাছিল মাহমুদুর রহমান সাহেবের। আমাকে বলা হলো মতবিনিময় কি ক্যান্সেল করবেন? আমি বলেছিলাম না, মতবিনিময় হবে, আমি তখন রাগে কাপছিলাম, কাপছিলাম এ কারনে মাহমুদুর রহমান সাহেবের সাথে যদি কারো মতের অমিল হয় তাহলে সেটির প্রতিবাদ করার ভাষা আছে। কিন্তু তাকে ছুরিকাহত করা হবে কেন? আমি ইষ্ট লন্ডনে পায়ে হেটে মাহমুদুর রহমান সাহেবকে ব্রিট বাংলার অফিসে নিয়ে গিয়েছিলাম, মতবিনিময় শেষে তাকে নিয়ে তারেক চৌধুরী লন্ডনের লিভারপুল-ষ্ট্রীটের একটি তার্কিশ রেষ্টুরেন্টে ডিনার করেছিলেন, সেখানে আমিও ছিলাম। তিনি আমাকে সে রাতে বলেছিলেন সরকার দেশে গেলে তাকে মেরে ফেলবে, অথবা গ্রেফতার করবে। আমি বলেছিলাম আপনি যদি এ রকম আশংকা করেন তাহলে যাবেন কেন? লন্ডনে থেকে যান। তিনি বলেছিলেন না আমি যাবো। তখন পর্যন্ত আমি মাহমুদুর রহমান সাহেবকে জানতাম একজন সম্পাদক হিসেবে, একজন জাতীয়তাবাদী কলাম লেখক হিসেবে। তার লেখনি শক্তি খারাপনা। পরবর্তীতে আমার ঐ রাতে মাহমুদুর রহমান সাহেবকে নিয়ে বিপ্লবী হয়ে উঠার কারন অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুবই সহজ সরল একজন মানুষ, অনেকেই আমাকে বোকা ভাবে। আমার খুবই কাছের মানুষরা ভাবে বোকা। লন্ডনে আমার টিভি টক শো ষ্ট্রেইট ডায়লগের লাইভ প্রোগ্রামে বসে বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা রিমোট এক্সেসেসের কাহিনী বলতে গিয়ে একজন বলেছিল আপনি ওসব বুঝবেননা, যদিও আপনি প্রেজেন্টার তারপরও আপনি কিছুটা—-। আমি বলেছিলাম একটু বুঝাননা ভাই, আপনি তো কম্পিউটার এবং ইন্টারন্যটের বিষয়ে বিলগেইটস অথবা মোস্তফার জব্বার সাহেবের থেকে বেশী বুঝেন। তিনি আমাকে বুঝাতে লাগলেন।

প্রিয় পাঠক তিনি ইন্টারনেট এমনভাবে বুঝালেন যেন মনে হলো আমি কিন্ডার-গার্ডেনের ছাত্র আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। অনুষ্টান পরে তাকে বলেছিলাম ভাই গত ৮ বছর থেকে লন্ডনে চ্যানেল আই চালাই, সব কিছু রিমোটে এক্সেস করতে হয়। তিন জায়গা থেকে এই চ্যানেলটি ইউরোপে চলে। ইন্টারনেট যেটির কথা বলেছেন এই ইন্টারনেটের বিল প্রতিমাসে টিভি মালিকরা যা দেন তা হয়তো লন্ডনের অনেক মানুষের সেটি দিতে হয়না। ঐ ভদ্রলোক সে দিন বলেছিলেন আপনার মোবাইলে যদি ওয়াই-ফাই কোথাও ষ্টোর করেন তাহলে সেটি কি কখনো মুছে যায়? আমি কথা বাড়ইনি। মানুষ এতটাই বোকা ভাবে অন্য মানুষকে, কিন্তু কেন?

প্রিয় পাঠক, আমি তখন অনেক ছোট, স্কুলে পড়ি, একদিন প্রচন্ড গরমের কারনে স্কুল ছুটি দেয়া হলো, আমরা খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাড়ী ফিরছি। আমার বাড়ীর পাশে আসতেই দেখি এক বিষধর সাপ ফনা তুলছে আর আমার দিকে থাকাচ্ছে। আমার সাথে আমার যে বন্ধু ছিল সে বলে উঠলো সাপ সাপ, আমি বললাম চেচামেচি করছিস কেন? আমরা কি সাপের সাথে ঝগড়া করছি, বন্ধু বলেছিল সাপের পাশ দিয়ে গেলে সাপ কাঁমড় দিবে, আমি বলেছিলাম যেহেতু সাপের সাথে আমি লাগিনি অতএব সাপ আমাকে কিছুই করবেনা। আমার বন্ধু সেদিন বলেছিল তুই যা আমি যাবো না। আমি গেলাম, সাপের পাশ দিয়ে, সাপ আমাকে দেখে সে তার পথে চলে গেল আমি আমার বাড়ী চলে আসলাম।

প্রিয় পাঠক, বিনা বাতাসে যেমন গাছের পাতা নড়েনা। তেমনি বিনা কারনে কোনো কিছুই হয়না। মাহমুদুর রহমান সাহেবের ব্যাপারে আমি অনেক কিছুই শুনেছি। তিনি কাবা শরীফের গিলাব নিয়েও নিউজ করেছেন, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের ব্যাপারেও নিউজ করেছেন, নিউজ করেছেন তিনি জালানী উপদেষ্টা তৌফিক এলাহি চৌধুরী সাহেবের ব্যাপারেও। কিন্তু তিনি হুমায়ুন আজাদের রক্তেভেজা শার্ট নিয়ে মন্তব্য করেছেন, বলেছেন এটি একটি তুচ্ছ ঘটনা এবং তা-ও বলেছেন টেলিভিশনের লাইভ টক শোতে, তা কিন্তু আমার জানা ছিলনা, এটি ফেইস বুকে অনেকেই লিখেছেন এবং জানতে চেয়েছেন মাহমুদুর রহমান সাহেবের আজ কেমন লাগছে? আমি এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিনা, হুমায়ুন আজাদ সাহেবের শার্ট রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বলেই আদালত প্রাঙ্গনে মাহমুদুর রহমান সাহেবের শার্টও রক্তে রঞ্জিত হবে??? বিএনপি যা করেছে আওয়ামীলীগকে কি তাই করতে হবে? মাহমুদুর রহমান সাহেব অনেক জ্ঞানী মানুষ সন্দেহ নেই। হুমায়ুন আজাদের রক্তে ভেজা শার্ট দেখে যদি রহমান সাহেব অট্রহাসি হেসে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি অন্যায় করেছেন। তিনি হাসতে পারেননা, তিনি বলতে পারেননা এটি একটি তুচ্ছ ঘটনা, তিনি বলতে পারেননা এ আঘাত সামান্য। কাকে কি বলবেন। আমরা যারা দলকানা তারা কিন্তু দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন হুস বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি, তারা ভাবেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী। ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় সেটা বুঝেও না বুঝার ভান করেন। অনেকগুলো ঘটনার উদাহারন দিলাম, গল্প বললাম, শানে নযুল একটিই ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, নিতে চায়না। একটি কথা আছে পাপ বাপকে ছাড়েনা, আর খুন কোনো দিন চাঁপা থাকেনা।

যে পাপ বিএনপি করেছে আজ একই পাপ আওয়ামীলীগ ফেরৎ দিচ্ছে। অনেকেই বলেন দেশে আওয়ামিলীগের যন্ত্রনায় কিছুই করতে পারছেননা। দেশে অবশিষ্ট বলতে কিছুই নেই। সত্য কথা বললে এসবের জন্ম কে দিয়েছে? কারা শেখ হাসিনার মিটিংএ গ্রেনেড হামলা করেছে? কারা কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করেছে? সত্য কথা বললে বিএনপি এখন ক্ষেপে যাবে। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে যা ঘটেছে তা সবই রিটার্ন দিচ্ছে আওয়ামীলীগ, বিএনপি যদি অদুর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যায় তাহলে তো আর কোনো কথা নেই। আওয়ামীলীগের বংশ রাখবেনা। ডঃ হুমায়ুন আজ্দা সাহেবকে যখন রক্তাত্ব করেছিল ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একুশের বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে আমার তখন খারাপই লেগেছিল, তারপর তিনি জার্মানীর মিউনিখে মৃত্যুবরন করেন। জানিনা ওপারে কেমন আছেন হুমায়ুন আজাদ? উনারাও একটু বেশী করে ফেলেন, ধর্মের ব্যাপারে এমনভাবে তারা কথা বলেন এমন সব আজে বাজে কথা বলেন মানুষের সেন্টিমেন্টে তখন কিন্তু লাগে। কি দরকার একজনের ধর্ম নিয়ে কথা বলার? যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কি করার আছে? আমার মাঝে মধ্যে হিন্দু মানুষদের জন্য খারাপ লাগে, ওরা দুনিয়াতেও জলে শেষ বিচারে কি হবে তা একমাত্র ভগবান জানেন। আমার বেশ কিছু হিন্দু বন্ধু বান্দব রয়েছেন তাদেরকে আমি বলি বন্ধুরা তোমরা মৃত্যুর আগে অন্তত কলিমাটা পড়ে নিও, তাহলে তোমাদেরকে আগুনে জলতে হবেনা। হিন্দুরা গরু জবাই করা সয্য করতে পারেনা, তাদের খারাপ লাগে তারা গোমাংস ভক্ষন করেনা, এটা তাদের ধর্মীয় ব্যাপার আমি তাদের ধর্মীয় মুল্যবোধকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মৃত্যুর পরে তারা যে জলে আমার আসলেও খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে, আমি চাইনা তাদেরকে এভাবে জালানো হোক। আমি ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই তারা যেন মৃত্যুর পর হিন্দু মানুষদেরকে না জালানোর পক্ষে একটি আইন প্রণয়ন করেন। আমার এই আবেদন পড়ে কেউ আমাকে ভূল বুঝবেনননা প্লিজ, আমি কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করতে চাইনা। আমি ধর্মকে পুজি করে বিখ্যাত লেখক হতে চাইনা। বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিয়ে যে বাড়াবাড়ি এসব কবে বন্ধ হবে? প্রতিহিংসার রাজনীতি কবে বন্ধ হবে?

প্রিয় পাঠক, এ কালচার থেকে কি বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারবে? কেউ কেউ বলেন “আমি অধম হলে তুমি উত্তম হবে না কেন?“ আমি বলি এ-সবই বইয়ের ভাষা। বইয়ের ভাষা আর বাস্তবতা এক নয়। আগেকার দিনে অভিভাবকদের কাছে শুনতাম ভালো মানুষরা যদি থাপ্পর খায় তাহলে গালে হাত দিয়ে বাড়ী চলে যায়, আর বাজে মানুষরা থাপ্পর খেলে সাবইকে বলে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা, এক দল ক্ষমতায় গেলে আরেক দল ভালোভাবেই মার দেয়, মার খাওয়া দল যখন ক্ষমতায় যায় তখন আগের দলকে রিটার্ন দেয়!! এটা কি রাজনীতি? সুস্থ ধারার রাজনীতি কি এসব? মারা মারি তো রাজনীতিতে হয়না। রাষ্ট চালানোর কি সব রকম যোগ্যতাই হচ্ছে মারামারি? মারের উপরে কি কোনো ঔষধ নেই বাংলাদেশে?

একজন সাংবাদিক একজন সম্পাদক একজন লেখক কি করে আরেকজন লেখকের রক্ত ভেজা শার্ট নিয়ে অট্রহাসি হাসেন? একজন সাংবাদিক আরেকজন সাংবাদিকের উপর রাষ্টের অত্যাচার দেখে দুর থেকে কিভাবে হাসেন? এটা কি হাসির বস্তু? আমরা ও্সবের অবসান চাই। আমরা মাহমুদুর রহমান সাহেবের মত কেউ যেন আদলত প্রাঙ্গনে রক্তাত্ত না হন সে রকম বাংলাদেশ চাই। আমরা হুমায়ুন আজাদের মত শিক্ষকের রক্তভেজা শার্ট দেখে একজন মাহমুদুর রহমান যেন অট্রহাসিতে ফেটে না পড়েন সেটাই কামনা করি, আমরা কামনা করি বাংলাদেশের রাজনীতির কালচার থেকে যেন সব অনিয়ম দুর হয়। আমি প্রার্থনা করি মাহমুদুর রহমান সাহেবের মত কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো আজে বাজে মন্তব্য না করেন। কারন মানুষের গৌরবের এবং অহংকারের কিছু জায়গা থাকে। মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা সার্ভবোমত্ব আমাদের অহংকার, এ অহংকারকে- অহংকারের জায়গায় সসম্মানে থাকতে দিন। আপনি বিখ্যাত হবেন হোন তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আপনি ধর্ম নিয়ে কোরান নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, বঙ্গবন্ধু নিয়ে, ওসমানী নিয়ে, জিয়াউর রহমান নিয়ে, শেখ হাসিনা নিয়ে, খালেদা জিয়া নিয়ে বাজে কথা কেন বলবেন। ইতিহাস সবার বিচার করবে কে কি করেছেন। কারা মুক্তিযুদ্ধকে কুলষিত করেছেন, আর কারা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্টিত করেছেন।

যে কোনো লোক তো তার মতামত প্রকাশের জন্য এখন ফেইস বুকে যা ইচ্ছে তা লিখতে পারেন, আপনি কোথায় কি করলেন কে কার সাথে প্রেম করলো, কার সাথে শারীরীক মেলা মেশা কত ঘন্টা করলো, কার কয়টা বিয়ে হলো, কার কতটা ডিভোর্স হলো, সবই তো গৌরবের!!! ৫/৭টা বিয়ে হওয়া ও তো অনেকটা গৌরবের না? কিছু সংখ্যক মহিলাদের লেখা ফেইস বুকে পড়লে আমার কেন জানি অশান্তি লাগে। মহিলা তো শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া ও, ইন্দীরা গান্ধী, বেনজীর ভুট্রো, মার্গারেট থেচারও ছিলেন মহিলা, তাদের কি স্বামী সংসার সমাজ ছিলনা? তারা কি এসব কাপড়ের নীচের কথাগুলো লিখতে পারেননা? বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের এক কাহিনীর কথা মনে পড়ে। অবশ্য যারা কাপরের নীচের অংশ নিয়ে লিখে যারা রাতের কাজের কথা দিনে লিখে ফেলে তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ। মার্গারেট থেচারের ঘটনা ছিল তিনি যখন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তখন তার স্বামী ডেনিস তাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন, কারন থেচারের মেয়ে ক্যরল থেচার মায়ের সাথে দেখা করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি ধরতে পারছিলেননা। কারন মার্গারেট থেচার ভীষন ব্যস্থ প্রধানমন্ত্রী। তিনি দিনে ২০ ঘন্টা কাজ করতেন। মেয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে না পারায় বাবা ডেনিসের কাছে বিচার-প্রার্থনা করে। ডেনিস একদিন থেচারকে বাড়ীতে ডাকেন। তিনি সরকারী বাসভবন ডাউনিংষ¦ট্রীটে থাকতেননা। থেচার বাড়ীতে আসলে ডেনিস বলেছিলেন জাতীর মা হতে তার কোনো আপত্তি নেই তবে সব কিছুর আগে তাকে ক্যরল থেচারের মা হতে হবে, এবং ডেনিস তাকে ডিভোর্স দেয়ার হুমকী দেন, থেচার তার পরিবার স্বামী সংসার ঠিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রের কাজ কিছুটা কমিয়ে পরিবারের দিকে নজর দেন। থেচার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রাষ্ট্রের কাজ ২০ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ১২ ঘন্টা করে ফেলেছিলেন। থেচার বুঝতে পেরেছিলেন তর্ক করে লাভ নেই। নারী স্বাধীনতা বলে লাভ নেই। সংসার ঠিকাতে হবে। আমাদের কিছু সংখ্যক মহিলারা শারীরীক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে, ফেইসবুকে মেয়েদের রোগ নিয়ে লিখে, আরে বাবা মেয়েদের রোগ নিয়ে লিখার তো এখন আর ঐ দিন নেই, মেয়েরা এখন ছেলেদের থেকে অনেক শিক্ষিত ।

অবশ্য তাদের অন্য ধান্ধা, আমাদের কিছু সংখ্যক ফেইসবুক কেন্দ্রিক মহিলা লেখক রয়েছেন যাদের বিখ্যাত হওয়ার জন্য কিছু আজে বাজে লিখা লিখেন.কারন এদেরকে মানুষ তো হ্যালো বলেনা। ওরা নিজেকে ভাবে সামথিং, মানুষ কেন তাকে হ্যালো বলবে? তার কি কন্ট্রিবিউশন সমাজে? এই লন্ডনে কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যাদের কোনো অবদান নেই এই কমিউনিটিতে। লন্ডনের পথে ঘাটে আনেকের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছে, বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা আমি লক্ষ্য করেছি, অর্থ লিপ্সা, আর আতœপ্রচারণা। দেশে গেলে শাড়ী, সোলোয়ার কামিজ নিয়ে আসে লন্ডনে, এনে বাড়ী বাড়ী বিক্রি করে, দেশে গেলে শুঠকী নিয়ে এসে বাড়ী বাড়ী বিক্রি করে তাদের কি অবদান এ কমিউনিটিতে? ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ে পড়াশুনা করে যদি আশা করেন লোকে তাকে সালাম দিবে? নো, নেভার? আমি তো অনেকের এসব কাজ কারবার দেখি কিন্তু কিছু বলিনা, আমার তো মাঝে মধ্যে বলতে ইচ্ছে করে তুমি কে? কি তোমার অবদান এ কমিউনিটিতে? কি দিয়েছো এ কমিউনিটির মানুষকে? ফালতু কথা বলো।

সে যাক, মাহমুদুর রহমান সাহেব নাকি বলেছেন “৭১ এ রাজাকাররা যেভাবে মানুষ হত্যা করে অন্যায় করেছে, মুক্তিযুদ্ধারাও অনেক রাজাকাকে হত্যা করে সমান অন্যায় করেছে। পাঠক লেখা আর লম্বা করতে চাইনা। আপনি বিখ্যাত হোন কিন্তু ধর্ম নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার ব্যাক্তিগত যন্ত্রনা নিয়ে সমাজকে রাষ্টকে বিরক্ত করবেননা। কারন আপনার ৭টা হাঙ্গা বিয়্ া হলো বলে সবার তো ৭টা হাঙ্গা হয়নি। আপনার দৃষ্টিতে রাজাকার আর মুক্তিযুদ্ধাদের অন্যায় যদি সমান হয় হতে পারে, কিন্তু আরেকজনের কাছে তো মুক্তিযুদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সন্তান, আপনার কাছে স্বামী ত্যাগ করা ফ্যশন, অন্যের কাছে সেটি লজ্জার। আপনার কাছে জীবন হয়তো শুরু হতে পারে ৫০ এ আর বিশ্বকাপে ওয়েস্টের খেলোয়াররা খেলা শুরু করে দেয় ২০ এ, ৫০ এ একজন খেলোয়ার বলে শর্ট দিতে পারেনা। এসব কে কাকে বুঝাবে। চারিদিকে শুধু ফালতু মানুষদের কথাবার্তা শুনে আমি মাঝে মধ্যে অসুস্থবোধ করি, অশান্তি লাগে। কিছু সংখ্যক মহিলাদের সারাক্ষন ফেইসবুকে লেখালেখি ফটো দেয়া অশান্তি লাগেনা? আল্লাহ তুমি আমাকে আর সমাজকে রহম করো। আমীন।

লেখকসভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব,সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি 

বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম,ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ।

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

 

Leave a Reply

More News from মতামত

More News

Developed by: TechLoge

x