মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে চশমাহিলে জনস্রোত
নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর চশমা হিল এলাকায় শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়ছে। সমবেত সবার মুখেই শোকের কালো ছায়া। প্রায় সবাই এসেছেন তাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে শেষ বারের মতো দেখতে, যিনি শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মারা গেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লোকজন যোগ দিয়েছেন তাকে এক নজর দেখার লাইনে।চট্টলবীর’ খ্যাত গণমানুষের এই নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে তার বাসার সামনে হাজির হয়েছেন টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘উনি চট্টগ্রামে সর্বদলীয় নেতা। উনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা কারও একার ছিলেন না। উনি চট্টগ্রামের অভিভাবক। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো আর একজন নেতা চট্টগ্রামে জন্ম হবে কিনা সন্দেহ আছে।তিনি আরও বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আমি বাসার সামনের এই টিনের ঘরে দেখেছি। উনার মনটা ছিল বড়। শত্রু-মিত্র যেই হোক তার কাছে আসলে প্রথমে গালি দিতেন। পরে খাবার না খেয়ে যেতে দিতেন না।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টায় নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় চশমা হিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আগে থেকেই সেখানে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এরপর যতই বেলা বাড়ছে ততই নেতাকর্মীদের এই ভিড় বাড়তে শুরু করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসার সামনের সড়ক লোকে একাকার হয়ে যায়। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে লাইন ধরেন চট্টগ্রামবাসী।এর আগে সকাল পৌনে ৬টার দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে মরদেহকে গোসল দেওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে বাসার সামনে গাড়িতে রাখা হয়।এদিকে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মুত্যুর খবর শুনে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা বাসায় আসতে শুরু করেন। মুত্যুর খবর শুনে সকালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় আসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মঞ্জুর আলম, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম। শুধু এসব নেতারা নন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা এসময় তার বাসায় ভিড় জমান।
মঞ্জুর আলম বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের গর্ব ছিলেন, অহংকার ছিলেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা, গণমানুষের নেতা। আমরা আজ তাকে হারিয়েছি। তার প্রস্থানে এখানে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য হয়েছে উনার সঙ্গে রাজনীতি করার। উনাকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি। উনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের অভিভাবক। যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘তিনি অবহেলিত চট্টগ্রামের কাণ্ডারি ছিলেন। তার হাত ধরেই চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। তিনি জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্রাণপণ লড়াই করে ইতিহাসে কিংবদন্তি হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। সাবেক এ মেয়র স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন। তিনি প্রজন্ম পরম্পরায় মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিবছর বিজয় মেলা আয়োজন করে ইতিহাসে বিরল অবদান রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামবাসী একজন সফল সেবক ও অভিভাবক হারালো।’
More News from বাংলাদেশ
-
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হত্যা, ৩ আসামী গ্রেফতার,আসামীদের সর্বোচ্ছ শাস্তির দাবিতে মানব বন্ধন
-
গোলাপগঞ্জে আব্দুল মতিন ও ছায়া খাতুন ট্রাস্টের পক্ষে পিপিই প্রদান (ভিডিও সহ)