বিদেশে খালেদা জিয়ার পরিবারের সম্পত্তির তদন্ত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের কয়েকটি দেশে থাকা সম্পদের তথ্য সংসদে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখার সময় এসব তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত ৮৫টি প্রতিবেদন পরিশিষ্ট আকারে উপস্থাপন করেন তিনি। এর আগে গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ বিষয়ে প্রথম আলোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি ও সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি। বিষয়টি বর্তমানে সরকারের তদন্তাধীন রয়েছে বলেও সরকার প্রধান উল্লেখ করেন।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে দুর্নীতি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, এদেশের জনগণের সম্পদ আর লুটপাট, পাচার করতে দেওয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্তের মাধ্যমে উৎঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেওয়ার যেসব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে তার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির তালিকায় খালেদা জিয়া তিন নম্বর হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত এ সব সংবাদের কোনও প্রতিবাদও জানাননি তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি বা অন্য কোনও অপরাধ থেকে অর্জিত অর্থ নিয়মবর্হিভূতভাবে বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ইতোপূর্বে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত ২০ লাখ, ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার সেদেশ হতে ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে পাচারের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি/সত্তা শনাক্তকরে তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে গঠিত টাস্কফোর্স ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওপর অর্পিত হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচারের শনাক্ত হওয়া ঘটনাগুলোয় অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও বিএফআইইউ বিদেশে তাদের কাউন্টারপার্টনারদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ও অবৈধভাবে দেশে আনা অর্থ ফেরত দেওয়ার সাফল্যের কয়েকটি উদাহরণও সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিংবা অন্য পদ্ধতিতে অর্থপাচার বিষয়ক বেশকিছু মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন ও দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে বলে সংসদনেতা জানান।

তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছে। তারেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরের সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছে। এ ব্যাপারে এফবিআইও তদন্ত করেছে। এ মামলায় হাইকোর্ট তারেক রহমানকে ৭ বছরের সাজা দেয়। একইভাবে লন্ডনে ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংকেও প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

সংসদে উপস্থাপিত তথ্য প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে অর্থ পাচারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। আমরা ইন্টারনেটে এবং বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াতে যা যা পেয়েছি, সেগুলো আমরা সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। এটা কতটুকু সত্য কতটুকু মিথ্যা তা যাদের নাম এসেছে তারা নিজেরাই এর জবাব দিতে পারবেন। এর মধ্য থেকে সবাই যাচাই বাছাই করে নেবেন কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। কারও বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা অভিযোগ থাকে তারা নিশ্চয়ই সেটা নিয়ে কনটেস্ট করবে।প্রধানমন্ত্রী জানান, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার এই তথ্যগুলির বিষয়ে আমাদের তদন্তের কাজ চলছে, পাচার হওয়া অর্থ কীভাবে ফেরত আনা যায়, এটার বিচারের ব্যবস্থা কীভাবে নেওয়া যায় এটার ওপর কাজ চলছে।স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদের প্রশ্নোত্তরের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ছিল।

Leave a Reply

More News from বাংলাদেশ

More News

Developed by: TechLoge

x