সংসদে কোরাম সংকট হয় না;এমপিরা লবিতে,মন্ত্রীরা অফিসে থাকেনঃ চিফ হুইপ

নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় সংসদে কোরাম সংকট হয় না বলে দাবি করেছেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি বলেছেন, পত্রিকায় লেখে সংসদে কোরাম হয় না। কিন্তু লবিও সংসদের অংশ। এমপিরা লবিতে থাকেন, মন্ত্রীরা তাদের অফিসে কাজ করেন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দশম সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি একথা বলেন।

এদিন অধিবেশন সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া দাবি করেন, চলমান দশম জাতীয় সংসদ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অর্থবহ ও সফল সংসদ।

সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আমি যে কয়টি সংসদে সদস্য হয়ে এসেছি তার মধ্যে নবম ও দশম সংসদ সব চেয়ে অর্থবহ। এর থেকে অর্থবহ সংসদ এর আগে কখনও দেখিনি। বিশেষ করে দশম সংসদের কার্যক্রম ও এই সংসদে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা বিরল ইতিহাস। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী এই দশম সংসদের যে প্রশংসা হয়েছে, তা এর আগে কখনও হয়নি।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান এমপিরা গণতন্ত্রের বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছেন বলেও মন্তব্য করেন ফজলে রাব্বি মিয়া। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

এর আগে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত করেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল মতিন খসরু, জাতীয় পার্টির হুইপ তাজুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ আলোচনায় অংশ নেন।

এমপিরা লবিতে,মন্ত্রীরা অফিসে

দশম সংসদকে অর্থবহ দাবি করে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘এই সংসদ অর্থবহ সংসদ। এই সংসদ জনগণের কল্যাণের সংসদ। দেশ ও জাতির জন্য কাজ করেছে। অনেকে পত্রিকায় লেখেন সংসদে কোরাম হয় না। সংসদে উপস্থিতি থাকে না। আমি এ কথা বলতে চাই, সংসদের কোরাম সবসময় থাকে। লবি ইজ দ্য পার্ট অব দ্য হাউস। মাননীয় মন্ত্রীরা অনেক সময় এই সংসদের ভেতরে তাদের অফিসে কাজ করেন। যদি এমনটাই হয় যে সংসদে হয়ত এমপি সাহেবরা কম, তারা লবিতে থাকেন। তারা মন্ত্রীর রুমে গিয়ে তাদের এলাকার কাজ করেন। মন্ত্রী সাহেবরা তাদের রুমে বসে থাকেন। তার অর্থ এই নয়, এই সংসদে তারা থাকেন না। তারা আছেন, ছিলেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামী দিনে বেশি বেশি উপস্থিত থেকে তারা সংসদকে আরও কার্যকর করবেন।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এই সংসদ খুব সফল। গালিগালাজ, অসাংবিধানিক বক্তব্য দেওয়া সংসদ এটা নয়। এই পার্লামেন্ট নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল। বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় অনেকে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খুব অনুশোচনা করে।’

ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সংসদ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিল, যারা তাদের জীবনে দুয়েকটি নির্বাচন করেছেন, সেখানে তারাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।’ খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মামলা মোকাদ্দমা নিয়ে কারও কথা বলা উচিত নয়। কোর্ট হচ্ছে অথিরিটি। তারা আইনমতো তাদের সিদ্ধান্ত দেবে।’

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত নির্বাচন। খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও জনগণ তাতে সাড়া দেয়নি।’ এরচেয়ে কার্যকর সংসদ আর হতে পারে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই সংসদের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে ও গণতন্ত্রের কল্যাণে এই সংসদ কাজ করছে। কারা নির্বাচনে এলো, কারা এলো না–সেটা তাদের বিষয়। সত্তরের নির্বাচন তৎকালীন দ্বিতীয় প্রধান দল মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে বর্জন করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।’ আগামী সংসদও যেন এমন সুন্দর পরিবেশে গঠিত হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এসে পস্তাচ্ছে। আশা করি, এবার তারা আসবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার কোনও পথ নেই। নো খালেদা জিয়া, নো ইলেকশন–এই ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। তারা ৮ ফেব্রয়ারি নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। তারা না এলে নির্বাচন হবে না–এটা কোনও কথা হতে পারে না।’ বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী নির্বাচনে আসতে চাইছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আদালত কী রায় দেবেন কেউ জানে না। তারা স্বাধীন। আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেবেন। তারা আদালতকে প্রভাবিত করতে চাইছেন।’

১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সব সংসদকে অকার্যকর দাবি করে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ, ৯৬ সালে বিএনপি এবং ২০০১ সালে আবার আওয়ামী লীগ এবং ২০০৯ সালে বিএনপি সংসদ বর্জন করেছিল। ওই সময়ের সবগুলো সংসদ অকার্যকর ছিল। সত্যিকার অর্থে এই সংসদই কার্যকরভাবে চলছে। জাপা নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে গৃহযুদ্ধ হতো।’

কাজী ফিরোজ রশীদও অতীতের সব সংসদের তুলনায় বর্তমান সংসদকে কার্যকর দাবি করে বলেন, ‘যারাই বিরোধী দলে থেকেছে, নানা অজুহাতে সংসদ বর্জন করেছে। সরকারের অনেক সমালোচনা এই সংসদে হলেও কোনও শব্দ এক্সপাঞ্জ করতে হয়নি। বিরোধী দল হিসেবে তারা ওয়াকআউট করলেও সংসদ বর্জন করেনি। এই সংসদের আমলে যত উন্নয়ন ঘটেছে অতীতে কখনোই হয়নি।’

এসময় তিনি স্পিকারের বিরুদ্ধে সময় না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, সংসদীয় কমিটিতে একজন সভাপতির পদ দিয়েছেন। রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা সরকারি দল নিলেও বিরোধী দলকে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্লটের আবেদন করা হলেও দেওয়া হয়নি। ফাইল ছোড়াছুড়ি, অশ্লীল গালাগালি আমরা করিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির হাজার বছর বিরোধী দলে থাকলেও নির্বাচনে আসা উচিত নয়। এবার আসলে নাকে খত দিয়ে আসতে হবে। তিন বার ক্ষমতায় থাকা দল কীভাবে নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে? আমাদের কাছ থেকে শিখতে হবে সংসদ কীভাবে চলে।’

Leave a Reply

More News from বাংলাদেশ

More News

Developed by: TechLoge

x