কৌতিনিয়ো ও নেইমারের লক্ষ্যভেদে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো ব্রাজিল

স্পোর্টস ডেস্কঃ অবশেষে ভাঙল কোস্টারিকা বাধা।দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে ফিলিপে কৌতিনিয়ো ও নেইমারের লক্ষ্যভেদে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিল। একের পর এক আক্রমণ ভেস্তে যাওয়ার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে বার্সেলোনা মিডফিল্ডারের গোলে জয়ের সুবাস পায় তারা।আর ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে নেইমার স্কোরশিটে নাম তুললে সেন্ট পিটার্সবার্গে ব্রাজিল পায় ২-০ গোলের জয়।

ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ,বিপরীতে কোস্টারিকার প্রতিরোধের দেয়াল, সঙ্গে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সিদ্ধান্তে ব্রাজিলের পেনাল্টি বাতিল- সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে সবকিছুরই দেখা মিললো।যেখানে রক্ষণাত্মক কোস্টারিকার হৃদয় ভেঙে ব্রাজিল উৎসবে মাতে ইনজুরি টাইমের গোলে।নির্ধারিত সময় শেষে তখন শুরু হয়েছে ইনজুরি টাইমের খেলা। মার্সেলোর ক্রস রবের্তো ফিরমিনোর হেড হয়ে আসে গাব্রিয়েল জেসুসের কাছে। ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার বলটা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। সেটা অবশ্য ব্রাজিলের জন্য আশীর্বাদ হয়েই আসে। তার বাজে নিয়ন্ত্রণের কারণেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে বলটি পায়ের উপরের দিকের অংশের শটে জালে জড়িয়ে দেন কৌতিনিয়ো।

কেইলর নাভাসের দেয়াল ভেঙে উল্লাসে মাতা ব্রাজিল শেষ বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে আবারও করে গোলোৎসব। এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন নেইমার। দগলাস কোস্তার ক্রস ছোট বক্সের সামনে থেকে বাঁ পা পায়ের টোকায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। সব মিলিয়ে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে বসলো সেলেসাওরা। আর টানা দুই ম্যাচ হারে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল কোস্টারিকার। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সার্বিয়া, আর ১ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে সুইজারল্যান্ড।সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। কোস্টারিকা ম্যাচটি তাই তাদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় মহাগুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার এই ম্যাচের শুরুতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। রক্ষণাত্মক দল সাজানো কোস্টারিকাই বরং বারকয়েক আক্রমণে উঠে কাঁপিয়ে দেয় ব্রাজিলের রক্ষণ।

যার মধ্যে ১৩তম মিনিটে কনকাকাফ অঞ্চলের দলটি পেয়েছিল সবচেয়ে ভালো সুযোগ। সেলসো বোরগেস এগিয়ে নিতে পারতেন কোস্টারিকাকে। ক্রিস্তিয়ান গাম্বোয়ার চমৎকার ক্রস বক্সের ভেতর ফাঁকায় পেয়েছিলেন তিনি। শটও করেন দেপোর্তিভো লা করুনা মিডফিল্ডার, তবে পোস্টে রাখতে পারেননি।

তবে ২৫ মিনিটের পর থেকে দেখা যায় ব্রাজিলের আসল রূপ। ২৬ থেকে ৩০- এই চার মিনিটে কাঁপিয়ে দেয় তারা প্রতিপক্ষের রক্ষণ। ২৬তম মিনিটে তো গোল উৎসবেই মেতেছিল ব্রাজিল। তবে গোলটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। বক্সের বাইরে থেকে মার্সেলোর শট বক্সের ভেতর পেয়েছিলেন জেসুস। গোলমুখে শট নিয়ে তিনি লক্ষ্যভেদও করেন, তবে অফসাইডের ফাঁদে পড়ার উৎসব থেমে যায় সেলেসাওদের।

পরের মিনিটেই আবারও আক্রমণে ব্রাজিল। এবারের সুযোগটা ছিল দারুণ। ফিলিপে কৌতিনিয়োর ডিফেন্সচিরা পাস বক্সের ভেতর নেইমার ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলেও সুযোগ ছিল। কারণ সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। তবে রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষকের বাধা পেরোতে পারেননি পিএসজি তারকা।

বিরতি থেকে ঘুরে এসে আরও আক্রমণাত্মক ব্রাজিল। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও তৈরি হয় তাদের ৪৯ মিনিটে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রসবার।ফাগনেরের ক্রস হেড করেছিলেন জেসুস, ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকারের হেড কাঁপিয়ে দেয় ক্রসবার।৫৭ মিনিটে আবারও হতাশায় মাথায় হাত ব্রাজিল সমর্থকদের। এবার নেইমারকে হতাশ করেন নাভাস।পাউলিনিয়োর ক্রস বক্সের ভেতর থেকে সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের গোলমুখে নেওয়া শট প্রতিহত করেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক। পরের মিনিটে আবারও সুযোগ ব্রাজিলের। এবার কৌতিনিয়োর নিচু শট রুখে দেন নাভাস।৭২ মিনিটে আসে ব্রাজিলের আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ।কোস্টারিকার এক খেলোয়াড়ের ভুলে বল পেয়ে যান নেইমার।ফাঁকা রক্ষণ ও নাভাস গোললাইন থেকে এগিয়ে থাকায় বক্সের বাইরে থেকে নেন জোরালো শট। কিন্তু বল উড়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে।

৭৮ মিনিটে জন্ম নেয় অন্যরকম এক দৃশ্যের।বক্সের ভেতর নেইমারকে ফেলে দেওয়ায় রেফারি বিয়ন কুইপার্স বাজান পেনাল্টির বাঁশি।তবে তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান কোস্টারিকার খেলোয়াড়রা।শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে যোগ হওয়া ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিতে (ভিএআর) বাতিল হয় পেনাল্টি। প্রধান রেফারি মাঠের পাশে থাকা স্ক্রিনে আসল ঘটনাটি দেখে তার সিদ্ধান্ত বদল করেন।তাতে অবশ্য ব্রাজিল আটকে থাকেনি।শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছে গোলে জন্য। এবং সফলও হয় ইনজুরি টাইমে।যেখানে নেইমার ও কৌতিনিয়োর লক্ষ্যভেদে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পায় এবারের বিশ্বকাপের প্রথম জয়।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x