জিম্বাবুয়ের কাছে বড় হারের লজ্জা!

স্পোর্টস ডেস্কঃ বাজে ব্যাটিংয়ের আরেকটি প্রদর্শনীতে দ্বিতীয় ইনিংসেও অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলাদেশ।সিলেটের অভিষেক টেস্টে স্বাগতিকরা হারল চার দিনেই।সিরিজের প্রথম টেস্ট ১৫১ রানে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।পাঁচ বছর পর জিম্বাবুয়ে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিতল।আর দেশের বাইরে টেস্ট জিতল ১৭ বছর পর!দেশের বাইরে তাদের সবশেষ জয়টাও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই,২০০১ সালে চট্টগ্রামে।সব মিলিয়ে দেশের বাইরে এটি জিম্বাবুয়ের মাত্র তৃতীয় জয়।অন্য জয়টা ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে।সিলেটে জিততে হলে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে।মাহমুদউল্লাহর দল যেতে পারেনি ধারেকাছেও।৩২১ রান তাড়ায় চতুর্থ দিনের এক সেশন বাকি থাকতেই অলআউট হয়েছে ১৬৯ রানে।টেস্টে এ নিয়ে টানা আট ইনিংসে দুইশর নিচে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ।ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলেও টেস্টের শুরুটা হলো বিব্রতকর এক হার দিয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২ ও ২য় ইনিংস: ১৮১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৩ ও ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২১) ১৬৯

ফল: জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শন উইলিয়ামস।

আরিফুলের বিদায়ে শেষ,হার নিশ্চিত হয়েছিল অনেক আগেই।আরিফুল হকের ব্যাটে শুধু হারের ব্যবধান কমেছে বাংলাদেশের।শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেন অভিষিক্ত আরিফুল।প্রথম ইনিংসে তিনি দলের পক্ষে করেছিলেন সর্বোচ্চ ৪১ রান।আরিফুলের আগে ডাক মেরে ফেরেন তাইজুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলাম অপু।২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার ব্রেন্ডন মাভুতা।তবে দুই ওপেনার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস এবং মাহমুদউল্লাহর উইকেট নিয়ে আসল কাজটা করেছেন সিকান্দার রাজা।তিনি ৪১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন।

টিকলেন না মিরাজও বেশিক্ষণ টিকলেন না মেহেদী হাসান মিরাজও।সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলেন তিনিও।বাঁহাতি স্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতার বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৫ বলে ৭ রান করেছেন মিরাজ। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১৫০ রান।
মুশফিকের বিদায়ে হার দেখছে বাংলাদেশ
মুশফিকুর রহিমে আউটে ক্ষীণ আশাটাও শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের।প্রথম টেস্টে হারের পথে স্বাগতিকরা।ব্রেন্ডন মাভুতার আগের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করেছিলেন মুশফিক।বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে আবার সুইপ করতে গেলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।টপ-এজ হয়ে বল উঠে গেল আকাশে।ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে খানিকটা দৌড়ে সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।৪৪ বলে ১৩ রান করে ফেরেন মুশফিক।বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ১৩২ রান।অভিষিক্ত আরিফুল হকের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।জয়ের জন্য তখনো ১৮৯ রান দরকার বাংলাদেশের,জিম্বাবুয়ের চাই ৪ উইকেট।

প্রথম সেশনেই ৫ উইকেট নেই
আগের দিন কোচ বলেছিলেন,জয়ের জন্য কয়েকটি বড় জুটির খোঁজে থাকবে বাংলাদেশ।কিন্তু উদ্বোধনী জুটি পঞ্চাশ পেরোলেও পরের চার জুটি বিশও পার করতে পারল না!আজ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।তাতে স্বাগতিকদের জয়ের আশাও ফিকে হয়ে গেছে অনেকটাই।অথচ শুরুটা কতই না ভালো হয়েছিল।আগের দিনের ২৬ রানের উদ্বোধনী জুটিটাকে চতুর্থ দিনে একটু একটু করে বড় করছিলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস।কিন্তু ৫৬ রানের এ জুটি ভাঙতেই পথ হারায় বাংলাদেশ।লাঞ্চ বিরতিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১১১ রান।লিটন,মুমিনুল,ইমরুল,মাহমুদউল্লাহ,শান্ত- প্রায় সবাই আউট হয়েছেন অপ্রয়োজনীয় আর বাজে শট খেলতে গিয়ে।

জয়ের জন্য এখনো ২১০ রান করতে হবে বাংলাদেশকে।স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে আছেন শুধু মুশফিকুর রহিম ও আরিফুল হক। মুশফিক ৩ রান নিয়ে লাঞ্চে গেছেন,বিরতির পর তার সঙ্গে যোগ দেবেন অভিষিক্ত আরিফুল।বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন সিকান্দার রাজা।সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ টানা বল করেছেন এই অফ স্পিনার।একটি করে উইকেট পেয়েছেন কাইল জার্ভিস ও ব্রেন্ডন মাভুতা।

আবার ব্যর্থ শান্ত
ফেরার টেস্টে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।তার বিদায়ে বিপদ বেড়েছে বাংলাদেশের।লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে ব্রেন্ডন মাভুতার শর্ট বলে অযথা শট খেলতে গিয়েছিলেন শান্ত।পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন সিকান্দার রাজা।৩২ বলে একটি চারে ১৩ রান করেন শান্ত।বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ১১১ রান।মুশফিকুর রহিম অপরাজিত আছেন ৩ রানে।লাঞ্চ বিরতির পর তার সঙ্গে যোগ দেবেন নতুন ব্যাটসম্যান।

আবার উইকেট ছুড়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও উইকেট ছুড়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ।বাংলাদেশ অধিনায়ককে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের তৃতীয় উইকেট নিয়েছেন সিকান্দার রাজা।অফ স্পিনারের বলে সুইপ করবেন না ডিফেন্ড করবেন,তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।শেষ মুহূর্তে গিয়ে এমন এক শট খেললেন যার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে শরীরে লেগে উঠে যায় শর্ট লেগে।সহজ ক্যাচ নেন দ্বাদশ ফিল্ডার ক্রেইন আরভিন।ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে ওপরে তুলে আনা মাহমুদউল্লাহ ৪৫ বলে করেন ১৬ রান।তার বিদায়ের সময় বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১০২।নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

বাংলাদেশের একশ
৪০ ওভার ৫ বলে দলীয় শতরান পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।অবশ্য এর মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা।৪১ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১০১ রান।মাহমুদউল্লাহ ১৬ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ১১ রানে অপরাজিত আছেন।জয়ের জন্য এখনো ২২০ রান করতে হবে বাংলাদেশকে।

অপ্রয়োজনীয় শটে ফিরলেন ইমরুল
সকালে পেসার কাইল জার্ভিসের পরপর দুই ওভারে স্লিপপে দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস।তবে সকাল থেকে টানা বল করে যাওয়া অফ স্পিনার সিকান্দার রাজাকে খেলছিলেন ভালোভাবেই।বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সেই রাজাকেই উইকেট উপহার দিলেন বাজে শট খেলে।লেগ স্টাম্পের ফুল লেংথ বলে পেছনের তিন স্টাম্প অরক্ষিত রেখে প্যাডল সুইপ করতে গিয়েছিলেন ইমরুল। কিন্তু খেলতে পারেননি।বল তার গ্লাভসে লেগে ভেঙে দেয় লেগ স্টাম্প।১০৩ বলে ৬ চারে ৪৩ রান করেন ইমরুল।তার বিদায়ের সময় বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৮৩ রান।মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

টিকলেন না মুমিনুল
লিটন দাসের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকলেন না মুমিনুল হক। তাকে ফিরিয়ে ১১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভেঙেছেন কাইল জার্ভিস।ডানহাতি পেসারের কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বল সোজা ব্যাটে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। বল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগে ভেঙে দেয় লেগ স্টাম্প, বোল্ড।১৩ বলে ২ চারে ৯ রান করে ফেরেন মুমিনুল। তার বিদায়ের সময় বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৬৭ রান। ৩৫ রানে ব্যাট করছেন ইমরুল কায়েস। ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে ওপরে এনে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

রিভিউ নিয়ে লিটনকে ফেরাল জিম্বাবুয়ে
বাংলাদেশের ৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন সিকান্দার রাজা। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন লিটন দাস।অফ স্পিনারকে অযথাই পুল করতে গিয়ে বল মিস করেন লিটন। বল আঘাত হানে তার প্যাডে। আম্পায়ার প্রথমে অবশ্য আউট দেননি। জিম্বাবুয়ে চায় রিভিউ। তাতে পাল্টে সিদ্ধান্ত। হক আইতে দেখা যায়, অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলটা মিডল স্টাম্পে আঘাত করত।৭৫ বলে ৩ চারের সাহায্যে ২৩ রান করেন লিটন। ২৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৫৬ রান। ৩৩ রানে ব্যাট করছেন ইমরুল। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুমিনুল হক।

ইমরুল-লিটন জুটির পঞ্চাশ
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। আগের দিনের ২৬ রানের জুটিটাকে দ্বিতীয় দিনে ফিফটিতে রূপান্তর করেছেন এই দুজন।১২৬ বলে ছুঁয়েছে উদ্বোধনী জুটির পঞ্চাশ। ২১ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৫০ রান  ইমরুল ২৭ ও লিটন ২৩ রানে ব্যাট করছেন।আগের দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের সকাল থেকে জিম্বাবুয়ের বোলারদের দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করছেন দুই ওপেনার। ইমরুল অবশ্য কাইল কার্ভিসের পরপর দুই ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন।প্রথমবার বল যায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্লিপের মাঝ দিয়ে। পরেরবার দ্বিতীয় স্লিপে একটুর জন্য ব্রেন্ডন টেলরের হাতে জমেনি বল।

জয়ের আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ কোচের
লক্ষ্যটা বেশ কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস। বড় কয়েকটি জুটি হলে বাংলাদেশ জিততে পারবে বলের বিশ্বাস তার।তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে রোডস বলেছেন, ‘আমরা কয়েকটি ভালো জুটির খোঁজে আছি এবং সেটা সম্ভব হলে আমরা এই ম্যাচ জিততে পারি। রান তাড়া করে এই ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোর গড়া অবশ্যই কঠিন, তবে অর্জন করা অসম্ভব নয়।’

রেকর্ড গড়ে জিততে হবে বাংলাদেশকে
সিলেট টেস্ট জিততে হলে বাংলাদেশকে চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড গড়তে হবে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছিল সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে, আর সিলেটে করতে হবে ৩২১ রান।শুরুটা দেখেশুনেই করেছেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। বিনা উইকেটে ২৬ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেন এই দুজন। জয়ের জন্য এখনো ২৯৫ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। ইমরুল ১২ ও লিটন ১৪ রান নিয়ে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছেন।সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আলোকস্বল্পতায় তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়েছিল আগেভাগেই। চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হয়েছে তাই আধা ঘণ্টা এগিয়ে সকাল সাড়ে নয়টায়।

তৃতীয় দিন শেষে

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২ ও ২য় ইনিংস: ১৮১

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৩ ও ২য় ইনিংস: ২৬/০ (লক্ষ্য ৩২১)।

Leave a Reply

Developed by: TechLoge

x