রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করার আহ্বান জাতিসংঘের
ডেইলিইউকেবাংলা নিউজঃ নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানা গেছে, মিশেল বাশেলেট মঙ্গলবার জেনেভা থেকে এক বিবৃতি এ আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে এ জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার থেকে এ প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। দুই দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২৬০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এ প্রত্যাবাসন শেষ হবে।কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার মত অনুকূল পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লিও প্রত্যাবাসন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মিশেল বাশেলেট তার বিবৃতিতে বলেন, শরণার্থীদের বলপূর্বক ফেরত পাঠানো হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে।শেষ পর্যন্ত গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্টওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মধ্য নভেম্বর সময় ঠিক হয়।
কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা ভোলকার টুর্ক মঙ্গলবার বলেন, রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।এখনও তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকার নেয়নি। সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।’
বাশেলেট তার বিবৃতিতে কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা দুই রোহিঙ্গার আত্মহত্যাচেষ্টার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুখে দেখছি আতঙ্ক আর ভয়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তারা।জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত নমুনা। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়েছে, হয়তো গণহত্যাও।
বাশেলেট বলেন, যেখানে জবাবদিহিতার লেশমাত্র নেই, যেখানে সহিংসতা এখনও থামেনি; সেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর অর্থ হবে-তাদের আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের চক্রের মধ্যে ছুড়ে ফেলা। এই জনগোষ্ঠী দশকের পর দশক ধরে ওই দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের খবর এখনও আসছে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, গুম আর গণগ্রেফতারের খবর।বাশেলেট জানান, এক লাখ ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা এখন রাখাইনে সরকারি আশ্রয় শিবিরে আছে। বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় আছে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। এই জনগোষ্ঠী এখনও চলাফেরা ও অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে তবেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার।
More News from বাংলাদেশ
-
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হত্যা, ৩ আসামী গ্রেফতার,আসামীদের সর্বোচ্ছ শাস্তির দাবিতে মানব বন্ধন
-
গোলাপগঞ্জে আব্দুল মতিন ও ছায়া খাতুন ট্রাস্টের পক্ষে পিপিই প্রদান (ভিডিও সহ)