তাইজুলের ঘূর্ণিতে দুর্দান্ত এক জয় বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্কঃ চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় দিন থেকেই উইকেটে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছিলেন স্পিনাররা।বল ব্যাপক টার্ন ও স্কিড করছিল।মাঝে মধ্যে লাফিয়ে উঠছিল,কখনও নিচু হয়ে যাচ্ছিল।সময় যত গড়িয়েছে এ মাত্রা তত বেড়েছে।স্বভাবতই তৃতীয় দিনে ব্যাট করা দুরূহ ছিল।শেষ পর্যন্ত তাই ফললো।বাংলাদেশ স্পিনারদের স্পিনে নাকাল হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।২০৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৩৯ রানেই গুটিয়ে গেল সফরকারীরা।এতে ৬৪ রানে জিতে ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।দুর্দান্ত এ জয়ে ফের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন তাইজুল ইসলাম।যোগ্য সমর্থন জোগালেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে সুবিধা করে উঠতে পারেননি ফর্মের মগডালে থাকা তাইজুল।পেয়েছিলেন মাত্র ১ উইকেট।দ্বিতীয় ইনিংসে ষোলকলা পূর্ণ করলেন এ বাঁহাতি স্পিনার।শিকার করলেন ৬ উইকেট।সাকিব-মিরাজের শিকার ২টি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে শুরুতেই হোঁচট খায় উইন্ডিজ।সূচনালগ্নেই কাইরন পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন সাকিব।এ নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে ২০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি।একইসঙ্গে দ্রুততম ২০০ এবং ৩ হাজার রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ইয়ান বোথামকে।এ ডাবল ছুঁতে ইংলিশ কিংবদন্তির লেগেছিল ৫৫ টেস্ট।টাইগার দলপতির লাগল একটি কম,৫৪ টেস্ট।
পরে শাই হোপকেও টিকতে দেননি সাকিব।একইভাবে এ টপঅর্ডারকে ফিরিয়ে দেন তিনি।সেই চাপের মধ্যে জোড়া আঘাত হানেন তাইজুল।একই ওভারে ক্রেগ ব্র্যাথওয়েট ও রোস্টন চেজকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।এতে বিপর্যয়ে পড়েন অতিথিরা।এ পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন শিমরন হেটমায়ার।সফলও হচ্ছিলেন তিনি।প্রথম ইনিংসের মতো এ ইনিংসেও বিধ্বংসী হয়ে উঠছিলেন।তবে তাকে বেশিদূর এগোতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।নাঈম হাসানের ক্যাচে পরিণত করে এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের (২৭) বিষদাঁত ভেঙে দেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের প্রাথমিক প্রতিরোধ ছিল সেই পর্যন্ত।পরক্ষণেই দুর্দান্ত ফ্লাইট ডেলিভেরিতে শান ডাওরিচকে এলবিডব্লিউ করে তাদের মহাবিপর্যয়ে ফেলেন তাইজুল।এর মধ্যে দেবেন্দ্র বিশুকে সরাসরি বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে পাঠান তিনি।খানিক বাদে কেমার রোচকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূরণ করেন এ বাঁহাতি স্পিনার।ফলে জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকদের।
কিন্তু না!শেষদিকে ঝামেলা সৃষ্টি করেন জোমেল ওয়ারিক্যান ও সুনিল আমব্রিস।নবম উইকেটে ৬৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তারা। দুজনই ক্রিজে সেট হয়ে গিয়েছিলেন।টাইগারদের জয়ের পথে চোখ রাঙাতে থাকেন এ জুটি।এ অবস্থায় ওয়ারিক্যানকে ফিরিয়ে তাদের চোখ রাঙানি থামান মিরাজ।প্রতিরোধ গড়া জুটি ভাঙার পর বেশি দূর এগোতে পারেনি দ্বীপসমূহের দলটি।আমব্রিসকে ফিরিয়ে সফরকারীদের ১৩৯ রানে থামান তাইজুল।এটি তার ষষ্ঠ শিকার।এর সঙ্গে থামে আমব্রিসের সংগ্রামী ইনিংস (৪৩)।এর আগে দ্বিতীয় দিনের ৫ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশ।মুশফিকুর রহিম ১১ ও মেহেদী হাসান মিরাজ শূন্য রান নিয়ে খেলা শুরু করেন।তবে শুরুটা ভালো এনে দিতে পারেননি তারা।স্কোর বোর্ডে ১৪ রান যোগ হতেই গ্যাব্রিয়েল শ্যাননের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুশফিক (১৯)।
দিনের শুরুতেই মিস্টার ডিপেন্ডেবল ফিরলেও লড়াই চালিয়ে যান মিরাজ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি।তাতে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ।কিন্তু হঠাৎই খেই হারান মিরাজ।দেবেন্দ্র বিশুর বলে শান ডাওরিচকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এ অলরাউন্ডার।ফেরার আগে লড়াকু ১৮ রান করেন তিনি।পরে নাঈম হাসানকে নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে তাকে যথার্থ সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন নাঈম।বিশুর বলে শাই হোপকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।সঙ্গী হারিয়ে টিকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও।একই বোলারের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।ফেরার আগে ১ চার ও ১ ছক্কায় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মিস্টার কুল।টাইগার শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকেন জোমেল ওয়ারিক্যান।তাইজুল ইসলামকে রোস্টন চেজের তালুবন্দি করে ফেরান তিনি। এতে ১২৫ রানে থামে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।আগের ইনিংসের ৭৮ মিলে মোট লিড দাঁড়ায় ২০৩।ক্যারিবীয়দের হয়ে বিশু নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।৩ উইকেট নেন চেজ। ২টি ঝুলিতে ভরেন ওয়ারিক্যান।
দ্বিতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩২৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১২৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (টার্গেট ২০৪) ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ (ব্র্যাথওয়েট ৮, পাওয়েল ০, হোপ ৩, আমব্রিস ৪৩, হেটমায়ার ২৭, ডাওরিচ ৫, বিশু ২, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ৪১, গ্যাব্রিয়েল ০*; সাকিব ৭-০-৩০-২, নাঈম ৭-১-২৯-০, তাইজুল ১১.২-২-৩৩-৬, মিরাজ ৮-১-২৭-২, মোস্তাফিজ ২-০-১১-০)