বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া জয়
স্পোর্টস ডেস্কঃ প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্টের বড় জয়ের আভাসটা পেতে শুরু করেছিলো বাংলাদেশ।হেটমায়ার ব্যাট হাতে প্রতিরোধ দিয়েছিলেন ঠিক,তাতেও বাংলাদেশকে রোখা যায়নি।স্পিন তত্ত্বে’ মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে তৃতীয় দিনেই বাংলাদেশ জয় পেয়েছে এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে।এই জয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের নজির গড়লো স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের অপয়া দিনটি অবশ্য বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি দিন।তাদের ১১১ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার প্রতিপক্ষকে ফলো অনে ব্যাট করতে পাঠায় সাকিব আল হাসানের দল।ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টার মতোই নখদন্তহীন ছিলো ক্যারিবীয় ব্যাটিং।প্রথম ঘণ্টায় প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যাওয়া উইন্ডিজ প্রথম সেশনের আগেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে হারায় ৪ উইকেট! তাতে তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্নভোজনের আগে ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ (২-০) করার ঐতিহাসিক সুযোগটি রূপ নেয় সম্ভাবনায়।বিরতির পর হেটময়ার প্রতিরোধ দেওয়ার চেষ্টা করলেও মিরাজ,সাকিব আর তাইজুলদের স্পিনে পুরোপুরি ঘায়েল হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গুটিয়ে গেছে ২১৩ রানে।
৩৯৭ রানে পিছিয়ে ফলো অন করতে নেমে পুরনো ব্যর্থতার নজিরই উপস্থাপন করে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দল।দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রানে হারায় প্রথম উইকেট।সাকিব আল হাসানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট।ফেরেন ১ রান করে।কিয়েরন পাওয়েলও বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টা করেছিলেন মিরাজের বলে।পরাস্ত হওয়ায় তার উইকেট ভেঙে দেন উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম।পাওয়েল এই ইনিংসেও ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন ৬ রানে।দুই ওপেনারের বিদায়ে ফলো অনে পড়ে যাওয়া উইন্ডিজের অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় আরও বিবর্ণ!
সকালের দুই নায়ক ছিলেন মিরাজ আর সাকিব।দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং লাইনে এবার আক্রমণ হানেন তাইজুল ইসলাম।আমব্রিসকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলেন শুরুতে।পরের উইকেটে রোস্টন চেজকে সুযোগ দেননি থিতু হওয়ার।তাকেও বিদায় দিয়েছেন মুমিনুল হকের ক্যাচ বানিয়ে।বিরতির পর শাই হোপও ছিলেন বাকিদের অনুসারী।ব্যাট হাতে কিছুটা রান তোলা এই ব্যাটসম্যানকে বিদায় দেন মিরাজ।শ্যানন ডাওরিচ এই ইনিংসে বেশি কিছু করতে পারেননি।নাঈম হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকারকে।
হেটমায়ার আগের চেয়ে আরও বেশি ভয়ানক হয়ে অপরপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন।বাকিরা যেখানে বাংলাদেশি স্পিনে ধরাশায়ী সেখানে মেরে খেলতে থাকেন হাত খুলে।তবে অপর প্রান্তে সঙ্গীর অভাবটা বোধ করতে থাকেন নিয়মিত।দেবেন্দ্র বিশু কিছুক্ষণ থিতু হলে তাকে এবার প্রথম স্লিপে ক্যাচ আউট বানিয়ে ছাড়েন মেহেদী মিরাজ।এই উইকেটের পতনে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ১০ উইকেট শিকারের কীর্তিও গড়া হয়ে যায় তরুণ এই অফ স্পিনারের।আক্রমাত্মক মন্ত্রে খেলা হেটমায়ার ব্যক্তিগতভাবে দারুণ একটি ইনিংস উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন।৯৩ রান করে ফেলা এই বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকে আর থিতু হতে দেননি মিরাজ।মিঠুনের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান।আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান ৯২ বলের ইনিংসে মারেন ৯টি ছয় আর ১টি চার।
এরপর লেজ ছেঁটে দিতে আর সময় নেয়নি বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ।হেটমায়ারকে ফিরিয়ে ওয়ারিকানকেও বিদায় দেন মিরাজ। তাতে এই ইনিংসেও ৫ উইকেট শিকারের নজির রাখলেন মিরাজ। একই সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ৭ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড এখন তার দখলে। লুইসকে ফিরিয়ে ক্যারিবীয়দের ইনিংস গুটিয়ে দেন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল নিয়েছেন ৩ উইকেট।সাকিব প্রথম ইনিংসে তিনটি আর এই ইনিংসে নেন ১টি উইকেট। এছাড়া নাঈম নেন ১টি।