৭ ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতির রূপকার এম সহিদুল ইসলাম

নূর উদ্দিন লোদী ●● স্বাধীন দেশে দীর্ঘ ৪৬ বছর  ধরে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কালের পরিবর্তনে এমনও সময় আসবে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের নৈপথ্যে  অনেক রুপকারের নাম অনাগত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেহেতু ভাষণটি  অলিখিত ছিল !!! তাই আজ বিশ্ব স্বীকৃতির মাধ্যমে অনাগত অদৃশ্য শক্তির হাত থেকে জাতি  রক্ষা পেল ।

 

৭ই মার্চের ভাষণ বাংলার ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।  পৃথিবীতে মনে হয় এই একটি ভাষণ এত বেশি বার মানুষ শুনেছেন এবং এতো বেশী বার প্রচারিত হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ভাষণের মধ্যে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের ও শোসনের ইতিহাস, বাঙালির রক্ত দানের সংগ্রামের ইতিহাস সর্বশেষে মুক্তিযুদ্ধের রণ কৌশল ও দিক নির্দেশনা ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড  ১১০৮ টি শব্দের এই ভাষণের মাধ্যমে ।

 

১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের কাল জয়ী ভাষণটি ৭ কোটি মুক্তিকামী মানুষকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল! দীর্ঘ ৪৬ বছর পরে সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি UNESCO Memorial World Heritage এ বিশ্ব স্বীকৃত লাভ করে আজ নতুন করে আবার প্রমাণ হলো এই ঐতিহাসিক ভাষণটি শুধু বাংলাদেশের নয় পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা উৎস। ৭ই মার্চের ভাষণটি বিশ্ব স্বীকৃত অর্জনের পরে সোঁনার বাংলার ১৬ কোটি মানুষ শহর থেকে শুরু করে মফস্বল পর্যন্ত সভা আর জনসভার মাধ্যমে আনন্দ টুকু ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন এমন কি প্রবাসেও ।

 

কোটি কোটি মানুষের আনন্দ ভাগাভাগি মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তিটি

 

যিনি নিজ উদ্যোগে স্বার্থ হীন ভাবে দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকে এই কালজয়ী ভাষণটি UNESCO Memorial World Heritage এ সংরক্ষণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি হলেন বর্তমানে বিমসটেকের  মহাসচিব,  ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, UNESCO তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন ২০১২ সাল থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাল। শিক্ষা , বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিভাগে। আমি কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা চিত্তে স্মরণ করি সেই মহান ব্যক্তি এম সহিদুল ইসলামকে

 

■ ১৯৯২ সাল থেকে Memory of the word Heritage এ তে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ  ঐতিহাসিক দলিল গুলি অন্তর্ভুক্ত হয়ে আসছে। তবে এগুলি হতে হবে নিজের হাতে লেখা এবং প্রাচীন, তাছাড়া এখানে অন্তর্ভুক্ত দলিল গুলি  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কতটা  প্রভাব পড়বে।

 

** কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৭ই মার্চের ভাষণটি স্বীকৃতি লাভ করে **

 

জনাব এম সহিদুল ইসলাম চিন্তা করে দেখলেন ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণটি পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা যোগাতে সহযোগিতা করবে। সেই চিন্তা থেকে নিজে প্রস্তুতি নিলেন কি ভাবে  Memory of the world Heritage এর অন্তর্ভুক্ত করা যায় ।

 

২০১৫ সালের শেষের দিকে UNESCO  department of  secretary এর সাথে প্রাথমিক আলাপ করেন। যেহেতু  অলিখিত একটি ভাষণ। কোন পান্ডুলিপি বা লিখিত বক্তব্য ছিল না, তাই কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এই বিষয়টা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছিলেন, যদি কোন কারণে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত করতে না পারেন তাহলে কেমন দেখাবে, সেই জন্য পুরো সতর্কতা অবলম্বন করে অগ্রসর হয়েছিলেন ।

UNESCO  Department of secretary পরামর্শ দিলেন কি প্রক্রিয়ায় নমিনেশন জমা দিতে হবে। তখন তিনি তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তত্ত্ব সংগ্রহ করতে লাগলেন।

 

বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর UNESCO এটা ঢাকায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ইউনিস্কোর সাথে। এখানের সচিব ছিলেন জনাব মনজুর হোসেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ইউনিস্কোতে একটি মিটিং এ যুগ দিয়েছিলেন  তিনি। তখন এম সহিদুল ইসলাম জনাব মনজুর হোসেন সাহেবের সাথে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তখন  সচিব মনজুর হোসেন বল্লেন ইউনিস্কোতে এ ব্যাপারে কিছু আছে কিনা আমি জানিনা তবে মুক্তিযুদ্ধা জাদুঘরের একজন ট্রাস্টি জনাব মফিদুল হক সাহেব ২০১৩ সালে Cambodia একটি ওয়াকসপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ৭ই মার্চের ভাষণের উপর কিছু কাজও করেছেন তিনি সম্ভবত একটি ফাইল তৈরী করেছেন এবং পরবর্তীতে সেটা আর অগ্রসর হয়নি।

 

তখন জনাব এম শহীদুল ইসলাম বিষয় টি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন এবং প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে ফোনে আলাপ করলেন  যেহেতু বিষয়টি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যদি সফল হওয়া যায় তাহলে তো ভালো , আর যদি সফল না হতে পারেন যে কোনো কারণে তাহলে এটা নিজের  কাছে একটু খারাপ দেখাবে। তখন  পররাষ্ট্র মন্ত্রী জোর দিয়ে বললেন কাজ শুরু করার জন্য ।

 

  • আত্মবিশ্বাস আর মনোবল নিয়ে ১৭ই মে ২০১৬ ইং জনিব এম সহিদুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি জনাব মুফিদুল হক সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলাপের পরে জনাব মফিদুল হক যে ড্রাফটি তৈরী করেছিলেন Cambodia এর ওয়াকশপের জন্য সেই ড্রাফটি জনাব এম সহিদুল ইসলাম সাহেবের কাছে পাঠালেন ( এই ড্রাফটি ছিল ৪৫ আর পি এম একটি রেকর্ড যেটা মুক্তিযুদ্ধা জাদুঘরের সংরক্ষিত আছে )।

 

ড্রাফটি হাতে পাওয়ার পরে Memory of the world heritage এ যে সকল ফাইল ইতিমধ্যে স্বীকৃত লাভ করেছিল সেই সব ফাইল গুলি ভালো করে দেখে নিলেন। দেখার পরে তিনি মনে করলেন  আরো কিছু তত্ত্ব যুক্ত করতে হবে। তত্ত্ব সংগ্রহের জন্য  যোগাযোগ করলেন ইনফরমেশন মিনিস্টির অফিসার জনাব লিয়াকত আলী খান সাহেবের সাথে এবং বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলাপের পর এম সহিদুল ইসলাম একটি লিস্ট পাঠালেন জনাব লিয়াকত আলী খান সাহেবের কাছে এবং এই লিস্টের সকল তত্ত্ব গুলি সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

 

পরে অনেক গুলি তত্ত্ব পাঠালেন জনাব জনাব লিয়াকত আলী খান। যেমন  ৭ই মার্চের ভাষণ ঐ দিন  বেতারে প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি, পরবতীর্তে ৮ই  মার্চ প্রচারিত হয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তান বেতারের একজন অফিসার নওশর আহমদ চৌধুরী এবং  মুহিবুর রহমান সাহেব Deparment of chief যিনি  শব্দ ধারণ করেছিলেন film ফুটেজ করেছিলেন এবং ভাষণটি প্রচার করেছিলেন। যে ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল ,  film footage  করা হয়েছিল এবং আনুষাঙ্গিক সকল সরঞ্জামগুলি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত ছিল সবগুলোই সংগ্রহ করে পাঠালেন জনাব লিয়াকত আলী খান।

 

তত্ত্ব সহ যখন সকল কাগজপত্র রেডি তখন মুক্তিযুদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি জনাব মুফিদুল হক সাহেব  সাথে আলাপ করে joint venture এ নমিনেশন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যেমন: একটি হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ৪৫ আর পি এম রেকর্ড । আরেকটি হলো

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে un editor সকল রেকর্ড Original ফিল্ম footage সহ সকল সরঞ্জামাদি।

 

ফাইনাল জমা দেওয়ার পূর্বে  Memory of world heritage এর এক্সপার্টদের সাথে পরামর্শ নিলেন সহকর্মীদেরকে নিয়ে ২৫ মে ২০১৬ । সেখানকার এক্সপার্টরা কিছু সংশোধন করার পরামর্শ দিলেন। পরবতীর্তে সংশোধন করে এম শহীদুল হক সাহেব  ৩০ মে ২০১৬ সালে নমিনেশন জমা দিলেন ( এবং ৩১মে নমিনেশন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল )।

 

Memory of world heritage Subcommittee প্রাইমারি স্ক্রুটিনি করে তারা  জানালেন ১০ই এপ্রিল ২০১৭ সালে।

নমিনিশনটি অন্তর্ভুক্ত করা যাবে আমরা সাব কমিটির সকল মেম্বার একমত হয়েছি, কারণ এই ভাষণটি বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা জোগাবে। তবে ফাইলটি আরো কিছু ছোট ছোট সংশোধন করে দিতে হবে। এম সহিদুল ইসলাম সাব কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সহ কর্মীদেরকে নিয়ে সংশোধন করে পুনরায় জমা দিলেন ১৭ই এপ্রিল ২০১৭ সাল।

 

পরবতীর্তে এটা international advisory  committee এর expert রা ১৪ সদস্যের মেম্বাররা মিলে

আবার ফাইনাল স্ক্রুটিনি করেন। এবং ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০১৭ তে আই এস সি যে মিটিং ছিল ঐ মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়

Memory of the world Registry heritage এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণ সহ সারা বিশ্বের মোট ৭৮ টি নমিনেশন।

 

২৯ শে অক্টোবর ২০১৭ এম সহিদুল ইসলাম আন অফিসিয়ালি একটি ই-মেইলের মাধ্যমে জানতে পারলেন নমিনেশন টি সফল  হয়েছে । ৩০শে অক্টোবর ২০১৭ সালে অফিসিয়াল এলাউন্স করা হয়, তখন সারা বিশ্বের মানুষের জানার সুযোগ হয়।

 

উল্লেখ্য:  নমিনেশনের দেওয়া সকল তত্ত্বের  সত্যতা যাচাই করার জন্য তিন জন ব্যক্তির নাম দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল!!! যারা ৭ই মার্চের ভাষণটি সরাসরি শুনেছিলেন। তবে তিন জনের মধ্যে দুই জন বিদেশী হতে হবে। তিনজন  হলেন ১) Jacobs  Field ২) Simon Dring  ৩) প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ।

 

বাংলাদেশ  UNESCO এর  কাছে দুইটা ঋণী হয়ে গেল  ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর UNESCO- র  মাধ্যমে বাংলাদেশের একুশ এখন সারা বিশ্বের একুশ, আর  বাংলাদেশের ৭ ই মার্চের ভাষণ এখন সারা বিশ্বের ৭ই মার্চের ভাষণ ।

 

N R B No Residents Bangladeshi’s একটি সংগঠনের সাথে কাজ করে আসছি দীর্ঘ এক দশক ধরে বর্তমান এবং অনাগত প্রজন্মকে শিকড়ের সন্ধানে আগ্রহী করার লক্ষ্যে ।

 

যখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের  কোন সু-খবর অবলোকন হয় তখন নিজের মনের অজান্তে কি যেন এক ভালো লাগা কাজ করে , এটা ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর মতো নয় ,এটা অনুভব করি  বুকের বাম পাজর থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত।

 

৭ ই মার্চের ভাষণটি বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের নৈপথ্যে আপনার অবদান অমর হয়ে গাতা থাকবে আমরা প্রবাসীদের হৃদয়ে।

N R B Non Residents Bangladeshi’s এর পক্ষ হতে দায়বদ্ধতা থেকে   আনন্দ চিত্তে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এখন বর্তমান প্রজন্মের প্রবাসীদের কে শিকড়ে আর টানে না,  সমাজ ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে

আগামীতে পৃথিবীর সকল বাংলাদেশী বর্তমান এবং অনাগত প্রজন্মেরা জানতে  পারবে বাংলাদেশর জন্ম বৃত্তান্ত, কারণ এই কালজয়ী  ভাষণটি বহু দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে।

কেননা মাত্র ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের আব্রাহাম লিঙ্কন ভাষণ যদি পৃথিবীর অনেক দেশের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাও আবার লিখিত ভাষণ।

 

লেখক : ইউকে সাপোর্ট গ্রূপ মেম্বার

এন,আর,বি রেসিডেন্টস বাংলাদেশীস

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

Leave a Reply

More News from মতামত

More News

Developed by: TechLoge

x