আওয়ামীলীগ সরকারকে বাঁচিয়ে দিলো দেশের এক গোয়েন্দা সংস্থা!!!
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী ।। বান্দিলাম পীরিতের ঘর, একটা ভালোবাসার খুঁটির-পর, আদরে দিলাম ঘরের ছাল ও-মনরে সুখেতে রব চিরকাল……. গানটি গেয়েছিলেন মমতাজ, গানটির অর্থ অনেক। সবাই পীরিতের ঘর বাঁধে, কেউ সুখী হয় কেউ হয়না। সুখ সবার জীবনে আসেনা, সুখ বড় আপেক্ষিক এক বস্তুর নাম। এইতো আমাদের জীবন, ভাঙ্গা গড়ার জীবনই এটি। আমার মাঝে মধ্যে সৃষ্টির এসব কাজ কারবারের উপর রাগ উঠে, দুই দিনের দুনিয়া, মানুষ কত কিছুই না করতে চায়। অথচ পারেনা। আমার কেন জানি মনে হয় সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে তিনি আড়ালে বসে দেখছেন আমরা কি করছি? কি দরকার এ দুনিয়ায় এসে? আমার কাছে মনে হয় সবই নিরর্থক। মানুষের জীবন এক অদ্ভুদ। জন্ম থেকে প্রথম ২৫ বছর কেটে যায় বুঝতে বুঝতে, প্রথম জীবন মা বাবার আন্ডারে, তারপর বিয়ে, স্ত্রীর আন্ডারে, ক্ষণে ক্ষণে স্ত্রীকে কৈফিয়ত দেয়া, কোথায় গেছি? কি করছি, কোনোা সুন্দরী মহিলার সাথে ছবি তুললে এত ক্লোজ হয়ে ছবি তুলার দরকার কি ইত্যাদি। ৪০/৫০ বছর পর অর্থনৈতিক সফলতা আসতে আসতেই, রোগ শোক, দ্রুত জীবন ক্ষয় হয়ে যায়। লিখতে বসে গানের কথা খুবই মনে পড়ছে। ইদানিং আমার মনটা কেমন জানি উদাস উদাস করে। আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করেছিলাম এই উদাসের কারণ কি?, বন্ধু বললেন নতুন করে হয়তো তুমি কারো প্রেমে পড়েছ। বন্ধুর কথা শুনে হাসতে হলো, আর কত প্রেম করবো? এ বয়স কি প্রেমের? বয়স ৫০…………..।
সে যাক, ২০১৫ সালের কোনো এক রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে এগিয়ে চলছে আমার গাড়ি। উদ্দেশ্য ঢাকার গুলশানে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাহেবের সাথে দেখা করা। লন্ডন থেকে তখন আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম কি এক কাজে। মানিক ভাই দাওয়াত করেছেন। যথাসময়ে তার বাড়িতে হাজির হই। তখনও তিনি বিচারপতি। সরকারি বাড়ি, গাড়ি, পুলিশ তিনি ব্যবহার করছিলেন। মানিক ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। পুলিশ সহ তার বাড়ির অনেকেই আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমরা গেলাম গুলশানের এক হোটেলে। খাওয়া দাওয়া হলো। অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম মানিক ভাইর সাথে। এক ফাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম কি অবস্থা প্রধান বিচারপতির। কারণ আমার কাছে খবর ছিল মানিক ভাইর সাথে প্রধান বিচারপতির সম্পর্ক ভালো না। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। মানিক ভাই কথা প্রসংঙ্গে বলেছিলেন তোমাকে একটা কথা বলি, আওয়ামীলীগ সরকার এ বিচারপতিকে নিয়ে বিপদে পড়বে। কারণ কি? জানতে চাইলে বলেছিলেন সময়ই কথা বলবে। আমি সেদিন মানিক ভাইর চোখে বিচারপতি কতৃক সমস্যার সেই দৃশ্যকল্প দেখেছিলাম, এবং আমি অনুভব করেছিলাম আওয়ামী সরকারের জন্য তার এক অস্থির আকুলতা, আমি সেদিন দেখেছিলাম তার চোখে আওয়ামী সরকারের সর্বনাশ।
সে যাক, মানিক ভাই লন্ডনে এসেছিলেন , এর মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে ঘটে গেছে দুর্ঘটনা। বিচারপতি এসকে সিনহা অনেক কিছুই বলেছেন, বলতে বলতে তিনি পাকিস্তানের উদাহরন টেনে নিয়ে বলেছিলেন, এখনো তো বাংলাদেশে পাকিস্তানের ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী সরকার বিব্রতবোধ করেছে। সরকারের মসন্দ কেঁপে তুলেছিলেন বিচারপতি সিনহা সাহেব। অনেকেই ভেবেছিলেন সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নিবে। বিচারপতি সিনহা সাহেবও সে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী সরকার এতটাই শক্ত হাতে সেটি দমন করেছে যে বিচারপতি সিনহা সাহেব বাধ্য হয়েই ছুটিতে গেলেন, শুধু ছুটিতে গেলেননা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাহেবের ভাষায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। আসলেও কি সিনহা সাহেব দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন? আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম মানিক ভাই কবে লন্ডনে আসবেন তার সাথে বিচারপতি সিনহা সাহেবকে নিয়ে কথা বলবো? আসলেন মানিক ভাই লন্ডনে। কিন্তু তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। চ্যানেল আই ইউরোপের সহকারী সম্পাদক এমি হোসেন খোঁজে বের করলেন মানিক ভাইকে। তার আগে আমি ফোন করি মানিক ভাইকে, দেশের নম্বারে। মানিক ভাইর লন্ডনের নাম্বার আমার কাছে ছিলনা। দেশের নাম্বার ও ছিলনা। ঢাকা চ্যানেল আই এর রিপোর্টার সোমা ইসলামের কাছ থেকে পাওয়া গেল নাম্বার। সোমা রিপোর্টার হিসেবে নাম করেছেন। নির্বাচন আসলে সোমার রিপোর্ট বেড়ে যায়। লন্ডনে অনেকেই সোমা ইসলামকে চেনেন। ঢাকার চ্যানলে আইতে রিপোর্টার হিসেবে যারা কাজ করেন তারা ইউরোপেও সমানভাবে পরিচিত ও জনপ্রিয়। কারণ ঢাকার চ্যানেল আইতে যতবার নিউজ যায় সবগুলি নিউজই লন্ডনে ইউরোপের বাঙালী দর্শকরা দেখেন। ঢাকার রিপোর্টারদের মধ্যে সোমা ইসলাম, চকর মালিতা, এনামুল কবির রুপম, মুরসালিন বাবলা, মাজহারুল হক মান্না, মোস্তফা মল্লিক, পরাগ আজিম, রিজভী নেওয়াজ, মাশরুর শাকিল, পান্থ রহমান, রাহুল রায়, শাকের আদনান, আরিফ চৌধুরী, রোকসানা আমীন, শাকিলা জেসমিন, সঞ্জয় চাকী, কাজি এমদাদ, তরিকুল ইসলাম মাসুম, পান্না, নিলাদ্রী শেখর,জান্নাতুল বাকী কেকা, সহ অনেকেরই নাম জানেন ইউরোপের দর্শকরা।
সে যাক, মানিক ভাইকে খোঁজে বের করা হলো, তিনি আসলেন চ্যানেল আইর লন্ডন ষ্টুডিওতে, আমার প্রোগ্রাম ষ্ট্রেইট ডায়লগে। খোলা মেলা আলোচনায় অনেক কথাই বললেন মানিক ভাই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে সব কথা বলেছেন সেটি হচ্ছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে চেয়েছিলেন বিচারপতি এসকে সিনহা। মানিক ভাইকে বিচারপতি সিনহা সাহেব বিদায় সম্বর্ধনা দিতে দেননি, রায় লিখতে দেননি, তার পেনসনের টাকাটাও তিনি আটকে দিয়েছিলেন!! মানিক ভাই বললেন ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সিনহা সাহেব ও বিদায় সম্বর্ধনা নিতে পারেননি। তিনি দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলেন। জিজ্ঞাস করেছিলাম সে কথাটি তো তিনিই বলেছিলেন, মানিক ভাই বললেন হ্যা আমিই বলেছি। পৃথিবী বদলার জায়গা, আজ আমার কাল তোমার, তবে একটি কথা মানিক ভাই বলেছেন বিচারপতি সিনহা কতৃক সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার কাজটি ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং ব্যর্থ করার কাজটি যিনি এককভাবে করেছেন তিনি হচ্ছেন দেশটির এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। তিনি বলেছেন, “মানিক ভাই সরকারকে যে বাঁচিয়ে দিলাম সেটি কেউ কোনোদিন জানবেনা“। গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কি? সরকারকে বাঁচানো, দেশকে বাঁচানো। দেশের বিরুদ্ধে যে সব বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে তাদের মিশনও ব্যর্থ করে দেয়া। তাহলে কি এ যাত্রা আওয়ামীলীগ সরকার বেঁচে গেল? আমরা জানিনা। সরকারের উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপ্টা যে যাচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিদের বক্তব্য থেকেই, তারা মাঝে মধ্যেই বলেন ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র চলবে, তার মধ্যে দিয়েই কাজ করতে হবে। সরকারকে অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয়। মোকাবেলা করে চলতে হয়।
প্রিয় পাঠক, মানিক ভাই যে সব কথা বলেছেন সে সব এখানে তুলে ধরলে লেখা শেষ হবেনা। আমি লেখা শেষ করে ফেলতে চাই, কারণ লম্বা লেখা পড়ার সময় নেই পাঠকের। আর লেখা লম্বা হলে কথা রিপিট হয়। এ রিপিটের কাজটি আমার পছন্দ নয়। আমি জানিনা মানিক ভাই যা বলে গেলেন তা কতটুকু সত্য? সরকারকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বাঁচিয়ে দিলে তো ভালো। আওয়ামীলীগ সরকার দেশের জন্য কত কিছু করেছে তার হিসেব হবে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর। এই যে মির্জা ফখরুল সাহেব মাঝে মধ্যে হুংকার দিয়ে বলেন সরকারের আয়ু আর বেশীদিন নেই।আমার জানতে ইচ্ছে করছে তিনি এসব বলেন কি করে? আমি তো দেখি আওয়ামীলীগ সরকার আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে যাবে। সেটি যে করে হউক………………।
লেখক : সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব,
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ।
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)