সৌদিতে নিহত দুলালের বাড়িতে শুধুই কান্না

নিউজ ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের বালুকোল গ্রামে মো. দুলাল মন্ডল (৩২) সৌদি আরবে মারা গেছেন। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর গর্ভে ৮ মাস বয়সী সন্তান রেখে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ঋণ করে প্রায় ১০ মাস আগে পাড়ি জমায় সৌদি আরবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গত শনিবার ভোরে সৌদি আরবের ডিজান প্রদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় দুলালসহ আরও ১০ বাংলাদেশী নিহত হয়।
গত শনিবার দুপুর একটার পর দুলাল নিহত হয়েছেন এমন খবর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের বালুকোল গ্রামের দুলালের বাড়িতে পৌঁছার পর থেকেই এই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী স্বপ্না নাবালক তিন সন্তানকে নিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। বয়োবৃদ্ধ বাবা আকবর মন্ডল ও মা হাজেরা বেগম শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
মরদেহ কবে আসবে তাও তারা জানেন না। ছেলের মরদেহ শেষ বারের মত দেখতে এবং নিজ হাতে কবর দেয়ার জন্য দ্রুত মরদেহ ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পরিবারের স্বজনরা।
নিহত দুলালের চাচা মোস্তফা জানান, পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে দুলাল তৃতীয়। বড় দুই ভাই মারা গেছেন। ছোট এক ভাই দুর্ঘটনায় পঙ্গু। আরেক ভাই প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করতে দুলাল ধারদেনা করে গত ১০ মাস ২২ দিন আগে সৌদি আরবে যায়। সেখানে ডিজান প্রদেশের আল ফাহাদ কোম্পানীর পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেয়। গত শনিবার ভোরে কাজে যাবার সময় একটি সেনাবাহিনীর গাড়ির ধাক্কায় তাদের বহনকারী গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। এতে দুলালসহ ১০জন মারা যায়। ওই দিনই তার সহকর্মী বেলকুচির বাসিন্দা এক যুবক ফোন করে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপর থেকেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দুলালের বাবা আকবর মন্ডল জানান, দুলালের ঘরে সায়েম (৯) সাব্বির (৫) বায়েজিত (৫ মাস) নামে তিনটি নাবালক সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে দুলাল সৌদি আরবে যাবার সময় বায়েজিত মায়ের গর্ভে ছিল। শিশু বায়েজিত এখনো বাবার মুখ দেখেনি। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার আরো দুই ছেলে স্টোক করে মারা গেছে। আরেক ছেলে প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলো। এ দুঃখ সহ্য করার মত না। একজন পিতার কাছে ছেলে মৃত্যুর সংবাদ কত দুঃসহ তা বোঝাতে পারব না। মা হাজেরা বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে দুলাল মারা গেলো। এখনো ছেলে মরদেহ দেশে আসেনি। কবে-কখন আসবে তাও জানি না। তিনটি নাবালক শিশুকেও দেখার কেউ রইল না। সরকার যদি অনাথ শিশুদের প্রতি একটু দয়া করে তাহলে খুব খুশি হতাম। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন ন্নাহার সিদ্দীকা জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পাবার পর মরদেহ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হবে।

Leave a Reply

More News from প্রবাস

More News

Developed by: TechLoge

x