লন্ডনে হাইকমিশনে ভাংচুর, খালেদা জিয়ার মামলায় কি বিদেশী আইনজীবি নিয়োগ করতে পারতেন না তারেক রহমান???

রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী ।। অনেকদিন হাসনা হেনা ফুলের ঘ্রাণ আমি পাইনা, জবা ফুল লন্ডনে দেখিনা, থাকলেও চোখে পড়েনা, দেখিনা কদম ফুলের গাছ, আমের হলুদ রঙের ভৌল দেখিনা, নারিকেল গাছ, তাল গাছ, সুপারি গাছ কোনো কিছুই নেই লন্ডনে, শীতের মৌসুমে উত্তর বঙ্গের খেজুরের রস তোলে আনা কৃষকদের দেখা মেলেনা লন্ডনে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ নেই, টিন সেড বাড়ি নেই, ছনের বাড়ি নেই, মানুষের কোলাহল নেই, বর্ষার দিনে রিমঝিম বৃষ্টির সময় প্রেমিকার দেয়া চাদর গায়ে দিয়ে প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোরও সময় নেই সুযোগও নেই, লন্ডনে মশার উপদ্রব নেই, কানের কাছে মশার শব্দের কারণে ঘুম ভাঙারও সুযোগ নেই, ব্যাংঙের গে গে ডাক নেই, ঝিঁ ঝিঁ পোকা নেই, ঘুঘু পাখির বিরামহীন ডাক নেই, কাঁঠাল পাকার ঘ্রাণ নেই, সে রকম মিষ্টি সুরের কথা বলার পাখিও নেই, রাতের চাঁদের আলোয় ধানের সবুজ ক্ষেত দেখারও সুযোগ নেই, নদীর মাঝখানে জেলেরা যেভাবে মাছ ধরে, পুকুরে জেলেরা যেভাবে মাছ ধরে সে রকম মাছ ধরার সুযোগ নেই, অথচ এসব আমাকে বড় বেশী টানে, আমি এসব মিস করি, আমি এসবের মধ্যে ডুবে থাকতে চাই, কিন্তু আমি এসব থেকে বঞ্চিত। এখানে লন্ডনে ক্ষুধার রাজ্য নেই, “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি“ এ রকম কবিতা লেখার কবিও নেই, ভাত দে হারামযাদা নইলে মানচিত্র খাবো সে রকম কবিতা লিখতে হয়না লন্ডনে। যান্ত্রিক এক সভ্যতার মধ্যে আমার ছুটে চলা। অথচ এসব আমি চাইনি, আমি চেয়েছি নদীমাতৃক বাংলাদেশে আমি আমার সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি। এক সময় দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার কারণে আমি বাধ্য হয়েই দেশ ছাড়ি। দেশের জন্য আমার মন কাঁদে, আমি অনেককেই বুঝাতে পারিনা, আমি দেশে চলে যেতে চাই, লন্ডনের জীবনে আমি অতিষ্ট। আমি এর আগেও অনেকবার লিখেছি লন্ডনের কম্পিউটারাইজড জীবনে নিজেকে আর খাপ খাওয়াতে পারছিনা। আমার খুবই কষ্ট হয়। আগে মা চাচীরা বলতেন তোমার চাচা তোমার বাবা রোগ শয্যায় থেকেও দেশে চলে যেতে চান। আমি হাসতাম, বলতাম বাবা কি পাগল হয়ে গেছেন, চাচা রয়েল লন্ডন হাসপাতালের বেডে  শুয়ে শিশুর মত আমাকে বলেছিলেন, আমি দেশের মাটিতে গিয়ে মরতে চাই, আমাকে দেশে নিয়ে চল। সারা জীবন লন্ডনে থেকেও দেশের জন্য মানুষের সে কি টান। আমি আগে হাসতাম। এখন আমি নিজেই অনুভব করি। দেশ আমাকে টানে, দেশের সব কিছুর জন্য আমার কেমন জানি নারী ছেড়া যন্ত্রণা। কিন্তু কাউকে আমি বুঝতে দেইনা। ভিতরে ভিতরে আমি নিজেকে অনেক শক্ত প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করি। কিন্তু দেশের ব্যাপারে আমি অসহায়।

প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা বাংলাদেশে থাকেন বাংলাদেশের জন্য আপনাদের মায়া হয় কি-না আমি জানিনা? যারা রাজনীতি করেন তাদের দেশপ্রেম কতটুকু? তারা কি দেশকে ভালোবাসেন?। দেশটি ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর আজ অবধি দেশের রাজনীতি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয়নি বলে আমি মনে করি। যদি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হতো তাহলে হয়তো দেশটি আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যেত। আমার কেন জানি মাঝে মধ্যে মনে প্রশ্ন জাগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ নামক একটি দেশ স্বাধীন করে কি ভুল করেছেন? তিনি কি অপরাধ করেছিলেন দেশ স্বাধীন করে? যদি তা না হয় তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো সপরিবারে? বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর দেশে যে হত্যা আর প্রতিশোধের রাজনীতি চলছে তার শেষ কোথায়? বাংলাদেশের মানুষরা এত প্রতিহিংসা পরায়ন কেন? খন্দকার মোশতাক নামের মীরজাফরের মনে- কি এমন যন্ত্রণা ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে শেষ করে দিতে হবে? রাজনীতি গণতন্ত্র তো প্রতিহিংসা শেখায় না, একজনের মতের সাথে অন্যজনের মতের মিল না-ও হতে পারে তাই বলে তাকে মেরে ফেলতে হবে? অনেকেই বলেন বঙ্গবন্ধুর  হত্যা কান্ডে  বিদেশী ষড়যন্ত্র ছিল। মানলাম বিদেশী যড়যন্ত্র। কিন্তু এ বিদেশী ষড়যন্ত্র কতকাল চলবে? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যা করা হলো জিয়াউর রহমান সাহেবকে। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হলো, সাত্তার সাহেবকে সরিয়ে দিয়ে চলে এলেন এরশাদ সাহেব, তিনি দেশ শাসন করলেন নয় বছর। তিনি মরেননি, তবে কষ্ট করেছেন অনেক। একজন রাষ্ট্রপ্রধান যিনি দুর্দান্ত প্রতাপে দেশ শাসন করলেন তাকেই ম্যাডাম জিয়া কারাগারে প্রেরণ করলেন, সেদিন দুঃখ করে এরশাদ সাহেব বললেন তিনি জেলে থাকাবস্থায় রমজানের সময় মিষ্টি চেয়েছিলেন তাকে দেয়া হয়নি। এখন ম্যাডাম জিয়া জেলে গেছেন জাতীয় পার্টির এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেছেন, এরশাদ সাহেব যে বড়োই গাছ লাগিয়েছিলেন জেলে, সেটি থেকে নাকি বড়োই খাওয়ানো হবে ম্যাডাম জিয়াকে। কি উপহাস রে বাবা, এ উপহাসের দেশে আমি যাই কি করে? এতটাই প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনীতির দেশে আমার যাওয়া কি ঠিক হবে? সম্প্রতি বেগম জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। বেগম জিয়া দন্ডিত হওয়ার পর থেকেই অনেকেই আমাকে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কথা বলছেন, আমি কি ব্যক্ত করবো? লন্ডনে বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনরা হুঁশিয়ার করে বলে দিয়েছেন কোনো ভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবেনা। দেশ থেকে বলা হয়েছে টক শো তে বুঝে শুনে কথা বলবেন। আমি গত ১০ বছর থেকে টক শো করি কখনো কোনো বাজে কথা বলিনি। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন প্রেজেন্টারের কাজ নয়, একজন লেখকের কাজ কি সরকারের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ লেখা? আমি তো দালাল সাংবাদিক নই যে, আমি দালালি করবো? কিছুদিন আগে ঢাকায় আমার এক বন্ধুর পত্রিকায় লেখা হয়েছে আমি নাকি বিএনপির সমর্থক, আমাকে বলা হয়েছিল উত্তর দেয়ার জন্য আমি দেইনি, কারণ আমি যা না তা যদি কেউ বলে তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। কারণ আমি বাংলাদেশের বাইরে থাকি। যারা দেশে থাকেন তাদের হয়তো অনেক কিছুই দিয়ে চলতে হয়। দেশে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদেরকে হয় বিএনপি করতে হয় নতুবা আওয়ামীলীগ করতে হয়। সেটি না করলে কি চলেনা? আর আমার বিএনপি আওয়ামলীগ করার কি দরকার? কোনো দরকার নেই। গত লেখায় আমার অবস্থান পরিস্কার করেছি।

সে যাক, ম্যাডাম জিয়ার রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপির নেতারা হামলা করেছেনহামলা করে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করেছেন। পরেরদিন আওয়ামলীগের নেতারা হাইকমিশনের সামনে গিয়ে বলেছেন হৈহৈ রৈরৈ বিএনপি গেল কই। লন্ডনে আছি গত ২৮ বছর এ ২৮ বছরে অনেক কিছুই দেখেছি, তবে ইদানিং যা ঘটছে তা কিন্তু আগে ঘটেনি। লন্ডনে এর আগেও বিএনপি আওয়ামীলীগ ছিল, এর আগেও মহিলারা দেশীয় রাজনীতি করেছেন বৃটেনে, কিন্তু আজকের মত ছিলনা। কিছু সংখ্যক মহিলাদের ফাজলামি দেখলে লজ্জাও লজ্জা পায়। ওরা নিজেকে কি ভাবে আমি জানিনা। ওরা কি ভদ্র ঘরের মহিলা না? ওদের কি স্বামী সংসার নেই? কিছুদিন আগে আমি আমার মোবাইলে এক মহিলার উলঙ্গ ছবি রিসিভ করেছি, আমি লজ্জায় সেটি সাথে সাথেই ডিলেট করেছি, কারণ মোবাইল ফোনটি এখন আমার ছেলেও মাঝে মধ্যে ব্যবহার করে। যারা এসব ছবি পাঠান তারা কি একবারও ভাবেন না যে, এসব পাঠানো কতটুকু যুক্তসংগত?  মা বোন তো সবারই আছে। আশা করি সবাই ভেবে দেখবেন। হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করে বিএনপি কি এচিভ করেছে আমি জানিনা, তবে দেশের বাইরে এসব না করা কি ভালো না? যারা এত সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা তো দেশেই গেলে পারেন। এখানে এসব করে কি লাভ? ঢাকার কোন একটি অনলাইনে নাকি একজন কলামিষ্ট লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর ছবি যারা ভাংচুর করেছে তাদের কে বৃটিশ সরকার কি কিছুই করতে পারে না?  এখানে বৃটিশ সরকারের কিইবা করার আছে? লন্ডনে আওয়ামীলীগ বিএনপি যারা করেন তাদেরকে বৃটিশ সরকার কি করবে? প্রিয় পাঠক, বেগম জিয়ার কারাদন্ড -কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো সূদুর প্রসারী প্রভাব ফেলবে? না কি এরশাদ সাহেবের মত অবস্থা হবে? আমরা জানিনা। রাজনীতির অন্দর মহলের যারা পন্ডিত তাদের কেউ কেউ বলছেন, এ কারাদন্ড ২১ শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলার পাপের ফসল। যদি একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা না হতো তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতো, কিন্তু গ্রেনেড হামলার পর সেখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। আজ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, কাল যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে শেখ হাসিনার কি হবে? তিনি ও কি জেলে যাবেন? এ রকম যদি চলতে থাকে তাহলে দেশে উন্নয়ন হবেনা। রাজনীতি স্থিতিশীল হবেনা, রাজনীতি স্থিতিশীল না হলে দেশে সব সময়ই এক অস্থির অবস্থা বিরাজ করবে।

সে যাক, বেগম জিয়ার সশ্রম কারাদন্ড হওয়ার পর আমার এক প্রিয় মানুষ যিনি বিএনপির সমর্থক আমাকে ফোন করে বলেছেন ভাই বেগম জিয়ার এ মামলায় কি বিদেশী আইনজীবী নিয়োগে কোনো বাঁধা ছিল? বলেছিলাম বাঁধা তেমন একটি নেই, তবে বার কাউন্সিলের পারমিশন লাগতো, সরকার পারমিশন দিত কি-না সন্দেহ? বললেন, আসলে বিএনপি পন্থী যারা আইনজীবী তারা তো কোর্টের ভিতরে ক্যামেরার সামনে দাড়ানো নিয়ে মারামারি করে, তা ছাড়া খুব নামীদামী কোনো আইনজীবী ও খালেদা জিয়ার পক্ষে দাড়ায়নি। আমার এই প্রিয় মানুষ বললেন, আগর তলা ষড়যন্ত্র মামলায় যদি লন্ডন থেকে কিউসি পাঠানো যায়, তাহলে বিএনপি যুক্তরাজ্য কমিটি কি পারেনি ২/১ জন ভালো কিউসি খালেদা জিয়ার পক্ষে পাঠিয়ে দিতে? প্রিয় মানুষের কথা শুনে আমি নিজেও একটু অবাক হলাম। প্রিয় মানুষকে বললাম, শুনেন আগর তলা ষড়যন্ত্র মামলা আর বেগম জিয়ার মামলা কি এক? তিনি বললেন না এক না, তবে তার যুক্তি হচ্ছে দেশে সরকার পুলিশ, এটর্নি জেনারেল, কেউই তো খালেদা জিয়ার আইনজীবিদের গুরুত্ব দিচ্ছেনা, সেখানে সাদা চামড়ার আইনজীবী যেমন ডেভিড, পিটার, মাইকেল, মিশেল রা গেলে তো আর কিছু না হলে অনেক অনিয়ম থেকে মামলা রেহাই পেত, উপরন্ত তারেক রহমানের সাহেবের উচিৎ ছিল তার মায়ের জন্য লন্ডন থেকে ভালো সলিসিটরব্যারিষ্টার,কিউসি পাঠানোআমার বিশ্বাস বিদেশী আইনজীবী গেলে হয়তো মামলা অন্য দিকে মোড় নিত। আমার প্রিয় মানুষটির সাথে আমি একমত হতে না পারলেও তার যুক্তি খুব একটা খারাপ না। কারন খালেদা জিয়ার আইনজীবী যারা ছিলেন তারা তাদের পেশাদারিত্ব কতটুকু দেখাতে পেরেছেন তা যেমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তেমনি তাদের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে!!!

 লেখক : সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব, সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ। (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

Leave a Reply

More News from মতামত

More News

Developed by: TechLoge

x