শহীদ নাহিদের আত্মদান বৃথা যায়নি-

মাসুদ হোসেন খান।।

“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী মানুষের ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনকে প্রতিহত করতে গিয়ে চারখাইয়ের পল্লী শাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন হুমায়ুন কবীর চৌধুরী নাহিদ। নাহিদ ছিল বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী। ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচীতে তাঁর উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

সহপাঠীদের নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্নকর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করত এবং ক্যাম্পাস রাখত মুখরিত। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই তার সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তার মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী ছিল চোখে পড়ার মতো। তাইতো এস.এস.সি পাশ করার পরই তাকে চারখাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সাথে ছিল আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি তাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম। নাহিদের অমায়িক ব্যবহার আমাকে আকৃষ্ট করত।

চারখাইয়ে যখনই ছাত্রলীগের কোন অনুষ্ঠানে যেতাম সে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতো এবং তার ছোট ভাই লিমন সহ পরিবারের সকলের সাথে আমার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তার পিতা ফখরুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ। নাহিদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সহ আমরা যখন তার বাড়িতে যেতাম তখন তার পিতা প্রায়ই মূর্চা যেতেন এবং বলতেন কি অন্যায় করেছিলো আমার ছেলে? কেন তারা আমার বুক খালি করলো? আমরা তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। তাঁকে বলতাম এক নাহিদ চলে গেলেও হাজারও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আপনাদের পাশে আছে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে তার এই আত্মদান ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে।

“নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”

১৫ই ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ছিল হরতাল। প্রহসনের নির্বাচনকে বাতিল করতে উত্তাল ছিল রাজপথ। গণবিরোধী প্রহসনমূলক নির্বাচনকে প্রতিহত করতে সারাদেশে শাহনেওয়াজ, নাছির উদ্দিন, কামাল, আব্দুর রশীদের মতো বৃহত্তর সিলেটের একমাত্র শহীদ ছিল হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ। তাদের আত্মদানের মধ্যে দিয়ে দেশে একটি পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ১২ই জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দেশের মানুষ বিপুল ভোটে বিজয়ী করে দীর্ঘ ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে এবং গরীব, দু:খী, মেহনতী মানুষের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শই ছিল তার অনুপ্রেরণার উৎস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করাই ছিল তার স্বপ্ন। সুটাম দেহের অধিকারী নাহিদ ছিল এক সম্ভাবনাময়ী, সাহসী যুবক। সময়ের সাহসী সন্তানেরাই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়। নাহিদ তাদেরই একজন। দেশের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায় নাহিদ চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নাহিদ আমাদের মাঝে আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তার এই অল্পদিনের সাহসী জীবন নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা যোগাবে। সে প্রমাণ করে গেছে দেশ ও জাতির কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করলে তা কখনো বৃথা যায় না। অমর হোক শহীদ নাহিদের আত্মদান।

লেখক : বার্ষিকী সম্পাদক, ছাত্র সংসদ ৯৫ সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ শাখা।

Leave a Reply

More News from মতামত

More News

Developed by: TechLoge

x