শহীদ নাহিদের বীরত্বকি একটি বৃত্তে সীমাবদ্ধ

নূর উদ্দিন লোদী ।। বিয়ানী বাজার এই আলোকিত জনপদে যুগে যুগে সূর্য সন্তানদের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এই জনপদের  মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয়। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব গৌরবমন্ডিত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছিল সকল আন্দোলন সংগ্রামে  এই আলোকিত জনপদের সূর্য সন্তানেরা জীবন দিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে করেছিল বেগবান।

১৯৪৯ সালের ১৮ই আগস্ট নানকার আন্দোলনে ছয় বীর সেনা  ১) বজ্রনাত দাস ৫০ ২) কুটুমনি দাস ৪৭ ৩) প্রসন্ন কুমার দাস ৫০ ৪) রজনী দাস ৫০৫) প্রবিত্র কুমার দাস ৫০৬) অমূল্য কুমার দাস ১৭।

১৯৬৬ সালে ৭ ই জুন  স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের প্রথম শহীদ এই জনপদের এক বীর পুরুষ শহীদ মনু মিয়া।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম ড: জি সি দেব এই আলোকিত জনপদের এক সূর্য সন্তান জাতী যাদের প্রতি বছর স্মরণ  করে বিনম্র শ্রদ্ধায় ১৪ ই ডিসেম্বর।

এই সকল সূর্য সন্তানদেরকে ইতিহাস মূল্যায়ন করে ঠিকই কিন্তু নিজের জন্ম স্থানের রাজনীতিবিদরা তাদের আত্মত্যাগের শ্লোগান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের জন্য বলটি গোলপোস্টে প্রেরণ করে ভুলে যান তাদেরকে। কেন অনাগত প্রজন্মের কাছে তাদের বীরত্বকে অমর করে রাখতে  ভয় পান, তাহলে কি এইজন্য  হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়ার জন্য অযোগ্য হয়ে যাবেন?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল বি এন পির প্রহসন মুলক এক দলীয় সাধারণ নির্বাচনকে প্রতিহত করতে চারখাই পল্লীশাসন সরকারী প্রাথমিক  বিদ্যালয়ে প্রশাসনের গুলিতে হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদ সহ সারা দেশে ২৩ টি জীবনের বিনিময়ে  প্রতিষ্ঠা করে গেলেন আজকেরে গণতন্ত্র।

শহীদ হুমায়ূন কবির চৌধুরী  নাহিদের বীরত্বকে আগামী প্রজন্মের কাছে অমর করে রাখার জন্য শত শত মুজিব সৈনিকদের দাবি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২২ টি বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয় আমরা কি এক হতভাগ্য স্বার্থপর এলাকাবাসী এবং রাজনীতিবিদরা স্বাধীনতার পরে আজ দীর্ঘ ৪৭ বছরের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার ২১ বছর পরে প্রথম রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সাল  হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদের মতো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। বর্তমানে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসিন রয়েছে। যাদের আত্মহুতির বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে ক্ষমতার দাপট দেখে চলছি , বিলাস বহুল জীবন যাপন করে আসছি শুধু মনে রাখতে পারিনা তাদের কথা। তাদের কে আমরা শুধু স্মরণ করি যখন এই বিলাস বহুল জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং  ক্ষমতা হারাবার ভয়ের আভাস মিলে, তখন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ু, মজবুত ও শক্তি শালী করে টিকে থাকার জন্য সাধারন মানুষের মন জয় করতে সভা সেমিনারে বলতে থাকি আমাদের এই জনপদে সাহসী ও দেশ প্রেমিক সূর্য সন্তানদের জীবনের বিনিময়ে আজ শোষণমুক্ত বাংলাদেশ,  স্বৈরাচার  মুক্ত প্রগতিশীল একটি বাংলাদেশ পেয়েছি।  যখন বিপদ সীমা পেরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাই তখন কয়েক বছরের জন্য ভুলে যাই তাদেরকে, ভুলে যাই তাদের আত্নহুতিকে । আমরা এই জনপদের রাজনীতিবিদরা তাদেরকে শুধূ স্বার্থ হাসিল করার জন্য ব্যবহার করে আসছি যুগ যুগ ধরে।

নাহিদ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, ছিলাম সহপাঠী হতে পারিনি সহযাত্রী। তোমার রক্তের ঋণ শোধ করতে পারলাম না শুধু  নিজের প্রয়োজনে তোমার বুকের  লাল রক্তের শ্লোগান দিয়ে নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করে আসছি বিরামহীন । আজ দৈর্ঘ ২২ বছর পরেও তোমার স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে পারলাম না আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষমতা  দিয়ে।

রাষ্ট্রের কুটি কুটি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তুমি অকালে শহীদ হয়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে তোমার মায়ের বুক খালি করে।  রাষ্ট্রীয় ভাবে তোমার বীরত্বগাতা আগামী প্রজন্মের কাছে অমর করে রাখতে দীর্ঘ ২২ বছর আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষমতা দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছি বিরামহীন কিন্তু পারিনি আমাদের এই জনপদের ফরমালিন যুক্ত রাজনীতির কারণে ।

আজ দীর্ঘ ২২ বছর পরে তোমার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বিয়ানী বাজার উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব  জনাব আতাউর রহমান খান  সোস্যাল মিডিয়ায় উনার নিজের  ফেইসবুক আই ডি তে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন শহীদ নাহিদের কবর সংস্কারের কাজ আরম্ভ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আতাউর রহমান খান আপনার এই মহৎ উদ্যোগ শত শত শহীদ নাহিদের সতীর্থদের হৃদয়ে যতটুকু  আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি হতাশ করে দিলেন মাত্র ৮ টি পিলারে সাদা চুনে পানি মিশিয়ে মরিচা মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে। কারণ শত শত মুজিব সৈনিকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল দীর্ঘ ২২ বছর পরে হলেও এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত হবে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার হাত দিয়ে, দেশের সূর্য সন্তানেরা দেশের সূর্য সন্তানদেরকে মূল্যায়ন করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তা আর হলো  না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আতাউর রহমান খান উনার ফেইসবুকে  আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শহীদ নাহিদ চত্বরের কাজ আরম্ভ করেছেন। উনার পোষ্ট করা  ছবিতে দেখলাম কি রকম  চত্বর হবে।

ছবিটি দেখে মনে হলো ছোট্ট একটি বৃত্তের মধ্যে  শহীদ নাহিদের বীরত্বকে চির নিদ্রায় শায়িত করে দেওয়া হচ্ছে আগামী প্রজন্মের কাছে।

শত শত শহীদ নাহিদের সতীর্থরা এখনো  নিরাশ হইনি  বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এই জনপদের উপজেলা চেয়ারম্যান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা , আপনার কাছে সেই সুযোগ এখনো  আছে একটি দৃষ্টি নন্দন শহীদ নাহিদ চত্বর অনাগত প্রজন্মের কাছে দৃশ্যমান করে দেওয়ার।

উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আতাউর রহমান খান আপনার সৎ সাহসী উদ্যোগ একটি  দৃষ্টি নন্দন  শহীদ নাহিদ চত্বরের মাধ্যমে এই জনপদের সকল সূর্য সন্তানদের বীরত্বকে আগামী প্রজন্মের কাছে  অমর করে রাখার সূচনা শুরু হবে বলে প্রজন্মদের বিশ্বাস।

এই জনপদের  প্রজন্মেরা জেগে উঠেছে, প্রজন্মেরা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষদেরকে দেখিয়ে দিতে চায় এই জনপদের কোন সূর্য সন্তানেরা আর অবহেলিত নয়।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এই জনপদের শত শত  মুজিব সৈনিকদের কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে  সূর্য সন্তানেরা সূর্য সন্তানদেরকে মূল্যায়ন করবে এটাই স্বাভাবিক।

আগামী প্রজন্মের কাছে তোমাদের  বীরত্বকে অমর করে রাখার শপথ নিলাম।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী, মেম্বার ইউকে সাপোর্ট গ্রূপ

এন,আর,বি রেসিডেন্টস বাংলাদেশীস

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

Leave a Reply

More News from মতামত

More News

Developed by: TechLoge

x