শুধু মাজার জিয়ারত নয়, চাই শহীদ নাহিদের যথাযথ মূল্যায়ন
ছরওয়ার আহমদ ।। আজ শহীদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদের ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী। আজ থেকে ২২ বছর পূর্বে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের দাবীতে বি এন পি সরকারের একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার, চারখাই পল্লিশাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কালের মেধাবী, দেশপ্রেমের শ্রেষ্টসন্তান বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্র, আমার সহযোদ্ধা ছোটভাই, হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ।
আজ শহীদ নাহিদের মৃত্যুর ২২টি বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশের জন্য তাঁর আত্নাহুতি যথার্থ মূল্যায়ন পায়নি। আজ রাজনীতি ও সমাজ সচেতন সকলের মনে একটই প্রশ্ন : ২২ টি বছর থেকে শহীদ নাহিদ কেন অবহেলিত? কেন বিয়ানীবাজার এর নির্বাচিত জাতীয় জনপ্রতিনিধি শহীদ নাহিদকে কর্মীদের শত অনুরোধ আবেদন এর পরও তাকে অন্ধকারে, অপ্রকাশিত রাখছেন?
দেশের মনুষের ভোটাধিকার আদায় করতে গিয়ে আত্নাহুতি দেয়া কি নাহিদের অপরাধ ছিল?
নাহিদের আত্নাহুতির বিনিময়ে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা সহ বিলাসী জীবন ভোগ করছেন। তাদের কি কোন দ্ধায়িত্ব ছিলনা শহীদ নাহিদকে আগামী প্রজন্মের সামনে সম্মানের সাথে তুলে ধরা । তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে কোন বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার?
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার আদায়ে যে ২৩ টি প্রাণ ঝরেছিল, তার মধ্যে সিলেট বিভাগের একমাত্র শহীদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ। নাহিদের আত্নাহুতির বদৌলতে যে মানুষটি সরাসরি লাভমান হয়েছেন তিনি হলেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম থেকে আদর্শচ্যুত হয়ে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হিসেবে যখন আওয়ামীলীগে যোগদান করেন । তখন তার এই দেউলিয়াত্ব গোছাতে একমাত্র নিয়ামক শক্তি হয়ে দাড়ায়- শহীদ হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদ।
শহীদ নাহিদের মৃত্যুশোক এবং সঠিক সময়ে এর রাজনৈতিক ব্যবহার করেছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তখন আওয়ামী পরিবারকে দ্বীধাবিভক্তি থেকে ঐক্যবদ্ধও করার অন্যতম কারণও ছিল শহীদ নাহিদের আত্নাহুতি‘র হৃদয়বিদারক ঘটনা ।
ভোটারদের কাছে যখন এক বলে এক রান পেয়ে জেতাই তার জন্য কষ্টকর ছিল। সেখানে ‘শহীদ নাহিদ ইমোশনে‘ তিনি আওয়ামীলীগ কর্মী বাহিনী নিয়ে ‘‘এক বলে ছক্কা মারেন’’ নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্পষ্ট ভাগ্য গুণে তিনি নির্বাচিত হন এম,পি। এর পর থেকে এম,পি নাহিদকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি মন্ত্রী।
মন্ত্রী নাহিদ সাহেবর কাছে শহীদের নাহিদের জন্য কিছু করতে বার বার বলা হলেও দীর্ঘ ২২ টি বছর আওয়ামীলীগের সুবিধা ভোগকারী নাহিদ সাহেবের কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
শহীদ নাহিদ বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্র ছিল। মন্ত্রী নাহিদ সাহেব এর আমলে এই কলেজে দুটি বহুতল ভবন নির্মান সহ অসংখ্য স্কুল কলেজে বহু ভবন নির্মিত হয়েছে। তার সদ ইচ্ছা থাকলে যেকোন ভবনের নাম শহীদ নাহিদের নামে নামকরণ করে তাকে মূল্যায়ন করা যেত।
আজ শহীদ নাহিদের মৃত্যুর ২২টি বছর পর আপনার পাষান সহৃদয়ের কাছে একটি বিনয় আবেদন: ‘‘ ভোটের জন্য লোক ‘দেখানো কবর জিয়ারত নয়‘, শহীদ নাহিদের আত্নার অভিশাপ থেকে বাঁচতে নিজের ক্ষমতা থাকতে বাস্তবে তার জন্য সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কিছু একটা করুন।‘‘
তথ্যপ্রযুক্তির যোগে ভোটার,ভুক্তভোগী জনগণ, সৎ বঞ্চিত,অবহেলিত হাজারো বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কর্মীরা ২২ বছরের এইসব অভিজ্ঞতা,বঞ্চনা, অসম্মান ও বাস্তবায়নের সংগ্রাম ইত্যাদি তাদের বুকে দাউ দাউ করে শুধু ঝলছেইনা। নির্বাচন যত সামনে আসছে,ততো তা ভোটারের কাছে যাচ্ছেও। কারণ ভোটার এইসব কর্মীদের দেখেই এক একটি এলাকায় ভোট দেয়। নেতাদের ক্ষমতায় পাঠায় তাদের কাজ করার জন্য।
আমাদের সকলের মনে রাখা প্রয়োজন যে,দীর্ঘ ২২ বছর পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজনে চারখাইতে শহীদ নাহিদের নামে সামান্য একটি গোলচত্তর করে নাহিদের যথার্থ মূল্যায়ন হবেনা ।এবং ভোটও আশানুরূপ পাওয়া যাবেনা।
শহীদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা।
শহীদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ বিয়ানীবাজার তথা গোটা বাংলাদেশের ভোটাধিকার আন্দোলনের একটি আদর্শিক নাম।
বিশেষ করে বিয়ানীবাজার এর আওয়ামীলীগ এর কাছে ভোট বিপ্লবের আদর্শিক নাম। এই নাম নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ হোক- কায়মনে প্রত্যাশা করছি।
লেখকঃ সাবেক ভিপি, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ (১৯৯৫ – ১৯৯৬)
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)