বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কি বর্তমান সরকারের অধীনে হবে?
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী ।।
আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ আমাকে একটি পত্র পাঠিয়েছেন, পত্রটি হচ্ছে নিম্নরুপপ্রিয়, আমার আর তোমার মধ্যে আমিত্ব এত বেশী, ভালোবাসা তাই মিশে গেছে অতলে, খুব চাইলেও আর ভালোবাসি বলা হয়না। কষ্ট পেলেও বলা হয়না পাশে থাকো। তাই ভাবছি একটি চিঠি লিখবো যে কথাটি ঠোটে আঠকে যায় লিখতে নিশ্চয় বাঁধবেনা, যে স্বপ্নগুলো বলতে অভিমানে চোখ ভেসে যায়, শব্দ খেলাতে তা কি দুর হবেনা? তারপর চিঠিটা নানা চলে বলে কৌশলে তোমার অর্ধসমাপ্ত বইয়ের ভাজে রেখে দিব।
উপরে লিখে দিবো “আমরা” আমিত্ব হারিয়ে যাক আমরাতে। “আমরা” শব্দটা অনেকটা ভারী ঠিক আমার এই চিঠিটার মত।
ইতি———
প্রিয় পাঠক লেখার টেবিলে বসে প্রায়ই ভাবতে হয় কি লিখবো? আমি গতানুগতিক লেখা লিখতে পছন্দ করিনা। আমি লিখবো পাঠক পড়বেনা তা তো হবেনা। আমার লেখা পড়ে পাঠক যদি গালিও দেয় তাতেও আমার বিন্দুমাত্র দুঃখবোধ নেই, আমার কথা হচ্ছে পাঠককে পড়তে হবে, গালি দিলেও পড়তে হয়। আজ লেখার টেবিলে বসে যখন ভাবছি কি লিখবো তখনই এই চিঠিটি আমি রিসিভ করি। যিনি লিখেছেন তিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ যদিও চিঠিটি নিরেট এক প্রেমের চিঠি কিন্তু তার অর্থ ব্যাপক।
প্রিয় পাঠক, আমার এই প্রেমের চিঠির মধ্যেই আমি এবং আমিত্বের মধ্যেই বাংলাদেশ নামক দেশটি আটকে আছে। আঠকে আছে দেশটির ষোল কোটি মানুষ। সোজা বাংলায় অনেকেই বলেন দেশ আটকে আছে দুই পরিবারের কাছে। একটি হচ্ছে মুজিব পরিবার আরেকটি হচ্ছে জিয়া পরিবার। আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি তাদের অনেক সময় গালি শুনতে হয়। কে একজন আমাকে ইনবক্স করেছে। বলেছে কি ভাই সাংবাদিক, দিগন্ত, আমার দেশ, বন্ধ হলে আপনারা কথা বলেননা, কিন্তু আপনাদের উপরে যখন মামলা হামলা হয় তখন আপনারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। আপনাদের তখন চেতনা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। মিডিয়ায় কাজ করলেই গালি, সবারই গালি শুনতে হয়, অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। সহ্য করেই পথ চলা। জীবনের অনেক গুলো বছর পার করার পর যখন মানুষ গালি দেয় তখন কষ্ট লাগে, কষ্ট পাই। আওয়ামীলীগের পক্ষে কোনো লেখা চলে গেলে বিএনপির লোকজন বলে শালা আওয়ামীলীগের দালাল, আর বিএনপির পক্ষে গেলে বলে রাজাকার। এটি নতুন কিছু নয় অনেক পুরোনো কাহিনী। আমার প্রিয় এই মানুষটির চিঠির ভাষা যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন আমি আমিত্ব ও আমরা এ তিনটি কথা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোরপাক খাচ্ছে। দেশটি স্বাধীনের পর থেকেই আমি আমরা আমিত্ব এই অহংকারের মধ্যেই চলে গেছে ৪৬ বছর। এখন পর্যন্ত আমরা জাতীয়ভাবে কোনো সিদ্বান্ত নিতে পারিনি। রাজনীতি টক শোতে এক দল আরেক দলকে গালি দেয়। কিন্তু কেন? গালি ছাড়া কি ভালো কোনো অর্জন নেই বাংলাদেশের? মসজিদের মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পর্যন্ত দলীয় ব্যাক্তি!!! অথচ দেশ স্বাধীনের পরে শুধু বড় ছোট আমলা মন্ত্রী এমপি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি একটি সুন্দর দেশ গড়ারও সকল সুযোগ সুবিধে বিদ্যমান ছিল দেশটিতে, কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনৈতীক সামাজিক অবকাঠামো সেই মান্দাতা আমলের মতই চলছে। অথচ দেশে জননেত্রী দেশনেত্রী পল্লী বন্ধু নেলসেন মেন্ডেলার মত নেতার অভাব নেই। কথায় কথায় দেশকে মালেশিয়া সিঙ্গাপুরের সাথে অনেকেই তুলনা করেন। কেউ কেউ তো ওয়েস্টমিনিষ্টার ষ্টাইলের গনতন্ত্রের কথাও বলেন। অথচ বাংলাদেশী ষ্টাইলের গণতন্ত্রও শেরেবাংলা নগরের গণতন্ত্র অুনপস্থিত।
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের খবর আমার আপনার কাছে যতটুকু না তার চাইতে বেশী জানে বিদেশীরা। গত সপ্তাহে লন্ডনের কুঠনৈতীক পাড়ার এক সাবেক এশিয়ান ডেস্কের কর্মকর্তার সাথে পূর্ব লন্ডনের ক্যানারীওয়ার্ফে হঠাৎ করেই দেখা। দীর্ঘদিন থেকে তার সাথে কোনো দেখা নেই। সর্ব শেষ দেখা হয়েছিল নারায়নগঞ্জের নির্বাচনের সময়, যখন আইভি এবং শামীম ওসমান মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন তিনি বলে দিয়েছিলেন আইভি পাশ করছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও বলেছিলেন কিছু কথা। এবার দেখা হওয়ার পর বললেন তিনি চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন তার কাছে তেমন কোনো খবর নেই। তবে আমি যদি চাই তাহলে তিনি কিছু খবর নিয়ে দিতে পারেন ঢাকার। বললাম আমি ঢাকার কোনো খবর জানিনা। তিনি বললেন মিডিয়া চালানোর পরও যদি ঢাকার রাজনীতির খবর না জানো তাহলে তো সমস্যা, সাধারন মানুষ তো তোমাদের কাছে খবর জানতে চাইবে। অনেকেই জানতে চান ঢাকার রাজনীতির কি হচ্ছে? কি হবে? নির্বাচন কি আদৌ হবে? না আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মত নির্বাচন হবে ইত্যাদি। আমি কিছুই বলতে পারিনা। কারন আমাকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যেন বেশী কথা না বলি। আমারও দোষ আছে, বলতে বলতে বেশী বলে ফেলি। এখন বলছি আর বলবোনা। কথা ও একটু কমিয়ে দিয়েছি। বয়স বেড়েছে। অনেকে বলেন বোবার নাকি কোনো শক্র নেই। কিন্তু সাংবাদিকতা করে বোবা হয়ে বসে থাকবেন কি করে? আমার বন্ধু বান্ধবরা বলেছেন লন্ডনে বসবাস করি পূর্ব লন্ডনের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে, কারন লোক্যল কাউন্সিলের নির্বাচন আগামী মে মাসে, তাই গত সপ্তাহ জুড়ে পূর্ব লন্ডনের রাজনীতি নিয়ে আমার টক শো ষ্ট্রেইট ডায়লগে কথা বলেছিলাম, এখন এটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লন্ডনে উপর থেকে বলা হয়েছে, আপনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। পূর্ব লন্ডনে যেখানে আমাদের চ্যানেল আই ইউরোপের অফিস রয়েছে এই এলাকা ভেঙ্গে ফেলার জন্য একটি ডেভেলোপার কোম্পানীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টাওয়ার হ্যমলেটস কাউন্সিল সেটি এক পাউন্ডে বিক্রি করে দিয়েছে। কাউন্সিল এ পর্যন্ত যা বিক্রি করেছে তা যদি এখানে লিখি তাহলে লেখা শেষ হবে না। সেই বিক্রির ইতিহাস তুলে ধরলে অনেকেই আটকে যাবেন। গত ৩০ বছরে এই পূর্ব লন্ডনের রাজনীতি তো কম দেখিনি।
প্রিয় পাঠক, সেটি অন্য প্রসংঙ্গ, সেটি নিয়ে আরেকদিন লিখবো। এখন কথা হচ্ছে দেশের আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে? বর্তমান সরকারের অধীনে কি হবে? আমি জানিনা, তবে দেশের সর্বশেষ সংবাদ হচ্ছে নির্বাচন হবে, এবং এ্ই সরকারের অধীনেই হবে, এবং আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাবে, আওয়ামীলীগ আরো এক টার্ম নাকি ক্ষমতায় থাকতে চায়। তবে কেউ কেউ এও বলছেন নির্বাচনের পর পরই দেশের রাজনীতির চেহারা পাল্টে যেতে পারে। তবে আমার এই কুঠনৈতিক বন্ধু বলছেন অন্য কথা। তিনি যা বলছেন তা যদি লিখি তাহলে আমার চাকুরী যাবে। আমি আমার চাকুরী হারাতে চাইনা। আমি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যাক এমন কোনো লেখা লিখে সরকারের রক্ত চক্ষু দেখতে চাইনা। অনেকেই বলেন আওয়ামী সরকার নাকি অনেক কিছুই করছে ভয়ে কেউ কথা বলেনা। কিন্তু সরকার সমর্থকদের যুক্তি হচ্ছে ভাই আওয়ামী সরকার তো খালেদা জিয়াকে জেল দিয়েছে। এখনো তো বিএনপির কোনো সমাবেশে, খালেদা জিয়ার কোনো সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেনি!! আহসান উল্লাহ মাষ্টার অথবা এসএম কিবরিয়া সাহেবের মত ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন বিএনপির কোনো রাজনৈতিক নেতদের হত্যা করেনি। তাহলে এত বিরক্ত হচ্ছেন কেন? এখনো সরকার অনেক নমনীয়, এখনো সরকার অনেক সহনশীল। দেখেননা আপনাদের মত সাংবাদিক লেখকরা সরকারে কোনো সমালোচনা করার টপিক খোঁজে পাননা। কারন দেশ উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে হাঁটছে।
লেখক : সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব,সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ।(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)