ক্রিকেট থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইমরান , এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে ধাক্কা !
ইঞ্জিনিয়ার রাজীব হাসান ।। ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইমরান খান ! পাকিস্তানের ২১ কোটি মানুষকে দুর্নীতি থেকে রক্ষা করতে ‘দুর্নীতিবাজ’ শাসকদের পতন ঘটানোর শপথ নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভের প্রত্যাশায় পাকিস্তানের তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খান।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। শুধু তাই নয়, আজীবন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন নওয়াজ। এরপর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। আর আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে পাকিস্তানে। আসলে গণতন্ত্রের আড়ালে সামরিক শক্তির অধীনে একটা শাসন ব্যবস্থার দিকে পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গন বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা ।
এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলেছে দেশটিতে শতভাগ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে । প্রকৃত পক্ষে দক্ষিন এশিয়ায় ভোটারদের মানসিকতা থেকে শতভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন কখনো সম্ভব নয় । তারপরও নির্বাচন কমিশন কিভাবে তা বলতে তা দেখার বিষয় । অন্যথায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এই ধরনে বাক্য ব্যবহার করতে পারে । বিশ্লেষকরা ধারনা করছে সেনা সমর্থিত দলটির দিক বিবেচনার কারনে নির্বাচন কমিশন এই ধরনে কথা বলেছেন ।
ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে পাকিস্তান বিশ্বকাপ জিতেছিল। এরপর ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের মানুষের জন্য পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইসলাম বা পিটিআই রাজনৈতিক দল গড়লেন ইমরান খান । ৬৫ বছরের এই ক্রিকেটার আজ জননেতা হয়ে উঠেছেন। তিনি ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেয়ে যা যা করেছিলেন তাই তো আজ নজরকাড়া ইতিহাস পাকিস্তান জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। মুলত নির্বাচনে লড়ার একটাই ট্যাগলাইন: দুর্নীতি দূর হঠাও। ১৯৯৬ সালে তৈরি হওয়া পিটিআই ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত একটি মাত্র আসন জিতেছিল। কিন্তু এবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বেশ এগিয়ে ।
তবে তরুন ভোটার সহ ২১ কোটি মানুষের মন জয় করতে ইমরান দলও সাজিয়েছেন সব নতুন মুখ দিয়ে। নির্বাচনী স্লোগান: “নয়া পাকিস্তান লাও।” ভালো স্কুল, ভালো হাসপাতাল, দুর্নীতি নিপাত যাক, দেশের সম্পদ বাইরে আর দেওয়া নয়। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করে ইমরান খান জড়িয়ে পরেন ক্রিকেটে । অার এই ক্রিকেট থেকে এখন রাষ্ট্র পরিচালনার পথে ।
তবে ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে দক্ষিন এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনে ধাক্কা লাগতে পারে ।ইমরান খানের সাথে ভারতে মুসলিম নেতাদের সাথে যেমন রয়েছে সুসম্পর্ক, তেমনি ভারতের ক্রীড়া অঙ্গনের সাথেও রয়েছে ভাল সম্পর্ক । তবে ইমরান ক্ষমতায় এলে আরও ভারত-বিরোধী হবেন কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে র’ তার হিসাব নিকাশ করতে বসেছে । কারন চীন-পাকিস্থানের মধ্যে সখ্য ভারতের উদ্বেগের কারণ বরাবরই। পাকিস্তানের সাথে চীনের সুসম্পর্ক আরো বেশি দৃঢ় হলে , ভারতও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে আদা জল খেয়ে নামবে । অন্যথায় চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অর্থনৈতিক ভাবে ভারত কিছুটা কোন ঠাসা হতে পারে । যদিও ভারত তাদের গুড লিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম মুচতে রাজি নয় । কারন বাংলাদেশকে তাদের অঙ্গ রাজ্যের মতই এক চেটিয়া ব্যবসা -বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ।
এদিকে বোমা বিস্ফোরণের শঙ্কায় প্রায় চার লাখ সেনা মোতায়েন হয়েছে পাকিস্তানে । যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইমরানে দলের প্রতি সেনাবাহীনির বড় ধরনের সহযোগীতার হাত রয়েছে । তাই দেশজুড়ে প্রায় চার লাখ সেনা মোতায়েন হয়েছে ।
তবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোনও ভারতীয় সাংবাদিককে নির্বাচন কভার করার জন্য ভিসাও দেওয়া হল না! এর ফলে ভারতীয় মিডিয়ায় একটু হৈচৈ পরে গেছে । সরাসরি ভাবে না বললেও একটু অন্যপথ অবলম্বন করে ভারতীয় মিডিয়া থেকে নিরাপদে রয়েছে পাক নির্বাচন । এদিক সেনাবাহীনির চাপ না থাকলেও একটু সুসম্পর্ক বজায় রেখে পাকিস্তানের মিডিয়া ইমরানে পক্ষে কাজ করছে । মুলত দুনীর্তি কারনে পাকিস্তানের অবকাঠামো যখন রাস্তায় বসতে শুরু করেছে , সেই অবকাঠামো আবারো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে পাক মিডিয়া ইমরানে পক্ষে এক তরফা কাজ শুরু করছে ।
যদি পাকিস্তানে সেনা শাসনে বাহিরে চিন্তা করা বেশ কঠিন । জেহাদি গোষ্ঠীর অত্যাচারে পাকিস্তানের অবস্থা বেশ নাজেহাল । তাই দেশটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সেনা শাসনের পাশাপাশি দুর্নীতি কমানো প্রয়োজন । ৩৪২ আসনের লড়াইয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইমরান পেলে ভালো, অন্যথায় কাছাকাছি পৌঁছালে অন্য কারও সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়বে।
উল্লেখ্য , ১৯৯৯ সালে পাক-হিরো ইমরানকে ভিটেছাড়া করেছিলেন পারভেজ মোশারফ। ২০০২ সালে মোশারফ চাননি ইমরানের সঙ্গে হাত মেলাতে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে।। এই ইমরান যেন নতুন চেহারার নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের নয়া ‘মসিহা’ হয়ে কি উঠতে পারবেন ইমরান? পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট ৩৪২ আসনের মধ্যে ২৭২ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০ টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। কোনো দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ২৭২ আসনের মধ্যে ১৩৭ আসনে জিততে হবে। বুধবার জাতীয় পরিষদের সঙ্গে দেশটির চারটি প্রাদেশিক পরিষদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব )