মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি মহোদয় এর কাছে সাদিক রহমানের খোলা চিঠি
আসসালামু আলাইকুম-মাননীয় শিক্ষ্মন্ত্রী মহোদয়,
আমরা বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
আমাদের ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নের আয়তন ৩৫.৭০ বর্গ কিঃ মিঃ। জন্ম নিবন্ধনঅনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩২,৮০৮জন । গ্রামের সংখ্যা ২১টি।মৌজার সংখ্যা ২১টি। হাট/বাজার সংখ্যা -২ টি। উপজেলা সদর থেকে যোগাযোগ মাধ্যম – সিএনজি/রিক্সা। শিক্ষার হার – ৫০%।
২০০১ এর শিক্ষা জরীপ অনুযায়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১টি বে-সরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৩টি, মাদ্রাসা ৮টি।
আর এই মুড়িয়া ইউনিয়নের একটি বৃহত্তর অংশই হল আমাদের এই পূর্ব মুড়িয়া।এই ইউনিয়নের মোট ১০টি ভোট কেন্দ্রে ভোটার ১৮,৬৪৩ জন নারী পুরুষ ভোটার।
মন্ত্রী মহোদয়,
মুড়িয়া হাওরের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালুমিশ্রিত পানি এসে হাওরের ১৯টি বিল অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। হাওরে হিজল-করস, বরুণ, চাইল, নলখাগড়া ও জারুল গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। বিভিন্ন প্রজাতির রুপালি মাছও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত ৪০ বছরে মুড়িয়া হাওরের উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প গৃহীত হলেও বাস্তবায়িত হয়নি একটিও। জরুরি ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না হলে এক দশকের মধ্যে হাওরের ভৌগোলিক অবকাঠামোর পরিবর্তনসহ পরিবেশ ভারসাম্য হবে হুমকির সম্মুখীন। এমন আশংকা পরিবেশ ও হাওর বিশেষজ্ঞদের।
আপনার নির্বাচনের ইস্তেহারে ও ছিল মুড়িয়া হাওয়র উন্নয়ন। আপনার লন্ডনের কোন এক সভায় মুড়িয়া হাওয়ার উন্নায়নের কথা উঠলে আপনি বলেছিলেন- ‘এটা আমার বাড়ীর পাশের,আমি দেখব।‘ জানি না কবে আপনার দৃষ্টি গোচর হবে।
মন্ত্রী মহোদয়,
এক দিকে পূর্ব মুড়িয়া অন্য দিকে শেওলা ও দুবাগ ও পশ্চিম দিকে ঘুঙ্গাদিয়া ছোটদেশ ও দক্ষিণ দিকে কোনাগ্ৰাম কিছু অংশ নিয়ে হাওরের বিস্তৃতি। আয়তন প্রায় আট বর্গমাইল। একসময় এ হাওরে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশাল হাওরজুড়ে কোথাও মাছের অভয়াশ্রম নেই। বিয়ানীবাজার মৎস্যজীবী সমিতির কর্তাব্যক্তিদের মতে, কারেন্ট ও মশারির জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকারের ফলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালুমিশ্রিত পানি ঢুকে বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আগে প্রচুর প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত এ সব প্রজাতির মাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে ।
হাওর এলাকার লোকজন জানান, ১৫-২০ বছর আগে শীতকালে বালিহাঁস, গলগলি হাঁসসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে হাওরাঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠত। এখন মাছরাঙাও চোখে পড়ে না। হিজল-করস, জারুল, বরুণ, নলখাগড়াসহ অনেক গাছ মরে গেছে। ফলে দেশী-বিদেশী পাখির সমাগমও কমে গেছে। হাওরের কোড়া পাখি, কড়িকাইট্রা, শামুকভাঙরি, চিল, পানকৌড়ি, নানা জাতের বক হারিয়ে যেতে বসেছে।
মন্ত্রী মহোদয়,
মুড়িয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের অনেকটা আশংকা নিয়ে জানালেন, মুড়িয়া হাওর ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চল পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে হাওর উন্নয়নের উদ্যোগ না নিলে কয়েক বছরের মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌরসভা, শেওলা ও দুবাগ ইউনিয়নসহ ওই অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হবে এবং বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন অদত অঞ্চলের মানুষ।
হাওরের উদ্ভিদ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে শুধু শন ও কমলি বন ছাড়া কোথাও কোন গাছ চোখে পড়ে না। এখনও সামান্য যে কয়েকটি গাছ আছে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সে সবও মরে যাচ্ছে। বেতবন, পিচাশবন, নলখাগড়া, লুটকিবনও নেই। হাওরে এক-চতুর্থাংশ গাছ ও বন থাকা অত্যাবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থার ওই বিষয়ে উদ্যোগ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে মুড়িয়া হাওরের উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কয়েক বছর আগে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও অর্থের অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশ নামে এই মানচিত্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বপ্নের রূপকার। বঙ্গবন্ধুর সাফল্য গাঁথা লিখে শেষ করবার মতো নয় ।এমন এক অবস্থায় আওয়ামী লীগ, সরকার গঠন করেছিল তখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চরম খাদ্যাভাব চলছে। ২০০১ থেকে ২০০৯ বিএনপি, জামাতের দুঃশাসন , দুর্ণীতি জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং দু’বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমন নীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খলার পূর্ণিমা ছিল। তখন হয়ত বাজেট এর অভাব খুব ই স্বাভাবিক। বর্তমানে বাজেট এর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
মন্ত্রী মহোদয়,
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম শেখ হাসিনা। বিশ্বের মানচিত্রে তার অসাধারণ ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত-স্বীকৃত । বহুকাল আগে রাজনীতির পরীক্ষা পর্ব পেরিয়ে তিনি আজ অনেককেই রাজনীতি শেখাবার ক্ষমতা রাখে । বলছিলাম একজন নেত্রীর নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার কথা ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে, এবং আমরা সকলেই আশা করি আপনি আবার নির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রী হবেন। ক্ষমতায় এলে, সর্বাধিক গুরুত্ব যেন পায় আপনার প্রিয় পাশের ইউনিয়ন, আমাদের মুড়িয়া ইউনিয়ন।
কেননা এই জনপদটির সাথে আপনার সম্পর্ক অনেকটা আত্মার।অসংখ্য মনীষীর জন্ম হয়েছে আমাদের এই জনপদে।দেশের উন্নয়নে , মানব জাতির উন্নয়নে, যাতায়াত ব্যবস্থার বিকল্প নেই। শুধুমাত্র একটি হাওয়রের কারণে ওপারের মানুষগুলো উন্নয়নের চাকা তাই রয়ে গিয়েছিল অধরা ।
আপনার নির্বাচনের ইস্তেহারে যদি আবারও মুড়িয়া হাওয়র উন্নয়ন প্রকল্প থাকে এবং তাহা আপনার মাধ্যমে উন্নায়ন করা হয়, তবে এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে এই জনপদের মানুষের কাছে।
এটি একজন মানুষের চ্যালেঞ্জ ,প্রকৃষ্ট ও জ্বলন্ত উদাহরণ, একজন নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবের দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ববোধ এর জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি সব সময় থাকবে বলে আমার ধারণা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার প্রতি দোয়া রইলো।আপনি আবারও এমপি নির্বাচিত হোন। জননেত্রী শেখ হাসিনার আমানত আপনার কাছে যেন রক্ষিত থাকে। আমরা বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ এর জনগণ আবারও মন্ত্রী হিসাবে যেন আপনাকে পাই,এই প্রত্যাশা রইল।
সাদিক রহমান, ইজলিংটন, লন্ডন । (মতামত লেখকের নিজস্ব )